ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শারলা’য় মুক্তির স্বাদ গ্রহণ উদ্যোক্তা রিথিনের

উদ্যোক্তা/ই-কমার্স ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৯, ২৬ জুন ২০২১  
শারলা’য় মুক্তির স্বাদ গ্রহণ উদ্যোক্তা রিথিনের

রাফিয়া ইসলাম রিথিন, জন্ম ও বেড়ে উঠা শরীয়তপুর জেলায়। পরিবারের তিন ভাই-বোনের মধ্যে বড় সন্তান তিনি।  ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি থেকে ফার্মেসী বিভাগে স্নাতকের পর বর্তমানে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক হেলথে স্নাতকোত্তর করছেন। পড়াশোনা,চাকরি এবং উদ্যোগের প্রয়োজনে রিথিনের বর্তমান বসবাস ঢাকার মহাখালীতে।

অনলাইনে ফেসবুক পেজ শারলার মাধ্যমে রিথিন হয়ে উঠেছেন একজন সফল উদ্যোক্তা। পড়াশোনার পাশাপাশি চার মাসের উদ্যোক্তা জীবনে আয় করেছেন প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা। সম্প্রতি রাফিয়া ইসলাম রিথিন তার উদ্যোক্তা জীবনের গল্প বলেছেন রাইজিংবিডিতে-   

রাইজিংবিডিঃ ব্যবসা শুরুর গল্পটা জানতে চাই।

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  উদ্যোগের শুরুটা একদমই সহজ ছিলোনা। ব্যবসা শুরু করেছিলাম ২০১৭ সালে। তখন ব্যবসায়ীক  কোন জ্ঞানও ছিলো না। তবে ক্রাফটিংয়ের কাজ দিয়ে নিজে কিছু করার উদ্যোমেই শুরু করি। কিন্তু পড়াশোনার পাশাপাশি একা ক্রাফটিং কাজটা আমার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছিলো। তাই ক্রাফটস থেকে যা ইনকাম আসে সেখান থেকেই শুরু করি অর্নামেন্টস বা গহনার উদ্যোগ।

কিন্তু ওই যে প্রপার নলেজ ছিলনা,তাই বিক্রি কম ছিল। অপরদিকে আমিও বুঝতে পারছিলাম না যে, এটাই আমি চাই কিনা। এরপরেই নিলাম বড় এক সিদ্ধান্ত। ২০২০ সালের শুরুর দিকে,একদম ব্যবসা  বন্ধ করে দিলাম এক বছরের জন্য। চিন্তা ছিলো এই এক বছর আমি নিজেকে জানবো,ব্যবসায়িক জ্ঞান বৃদ্ধি করবো,পার্সোনাল ব্র্যান্ডিং  স্ট্রং করবো।

এই ভাবনা থেকেই ২০২০ সালের মে-জুন মাসে ফেসবুক গ্রুপ ডিএসবিতে (ডিজিটাল স্কিল ফর বাংলাদেশ) যুক্ত হই। এরপরেই ভাবনা শুরু করি আমি কি নিয়ে কাজ করবো। পাশাপাশি নিজের পার্সোনাল ব্র্যান্ডিংয়ের দিকে মনযোগি হই। যখন বুঝতে পারি আমি নিজে কুর্তিতে কমফোর্টেবল। একই সঙ্গে ছোটবেলায় নিজের পছন্দ মতো একটা জামা না বানাতে পারার আক্ষেপ। সেই থেকেই ভাবতে থাকি যে নিজে নিজের মতো ডিজাইন দিয়ে কুর্তি বানাবো। এরপরে, ভাবলাম ম্যাটেরিয়াল কি হবে? অনেক ভেবে দেখলাম, আমার যত টান সব ওই খেশ আর জামদানী কাপড়ে। ছয় মাস পড়াশোনা করলাম। জানলাম ও পণ্যের সোর্সিং করলাম। এরপরে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ এ শুরু করি আমার উদ্যোগ। ফেসবুক পেজের নাম রাখি শারলা। এরপরে হঠাৎ করেই কারিগর অসুস্থ হওয়াতে থেমে যেতে হয়েছিলো প্রায় এক মাসের জন্য। এটাই শারলাতে হওয়া সবচেয়ে বড় বাঁধা ছিলো।

শারলা নাম করণের পেছনের গল্প হলো, শারলার অর্থ আর আমার মনের ভাবনা। আমি বরাবর ই চেয়েছি নিজেকে আর্থিকভাবে সাবলম্বি করে কিছুটা মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করা। শারলা নামের অর্থও কিন্তু মুক্ত। আর শারলার লোগোর S অক্ষর টাও এক নারীর মুখের আদলে করা।

রাইজিংবিডিঃ কি কি পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন ?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  বর্তমানে খেশ,  জামদানী কুর্তি, পাঞ্জাবির  সঙ্গে খেশ ও জামদানীর  ফিউশান কুর্তি নিয়ে কাজ করছি। ইচ্ছা আছে নতুন সংযোজন হিসেবে খেশ এবং জামদানী শাড়ি পেজে সংযুক্ত করার।

রাইজিংবিডিঃ এমন পণ্য নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা কেন ছিল?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  আমার কাছে বরারবরই জামদানীকে আভিজাত্য এবং সুন্দরের প্রতিক মনে হয়, একইভাবে খেশকেও মনে হয় স্নিগ্ধ সুন্দর। আমি যতবারই কল্পনায় কুর্তির কাপড় নিয়ে ভেবেছি, খেশ এবং জামদানীর বাইরে আমি ভাবতে পারিনি। তাই সব ভাবনার অবশান ঘটিয়ে খেশ আর জামদানী নিয়েই আমার পথচলা শুরু।

রাইজিংবিডিঃ উদ্যোক্তা জিবনে সফল হতে কাদের ভূমিকা বেশি ছিল?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  সফলতা এখনো তেমন ভাবে ধরা দেয়নি। তবে আলহামদুলিল্লাহ খুব বেশি নিরাশ হইনি। সফলতার সিড়িটা ধরতে পেরেছি। এই সফলতার পেছনের মূল কারিগর ছিলো আমার পাশে থাকা আমার সবচেয়ে বড় সাপোর্ট করার মানুষটি। এর পাশাপাশি পার্সোনাল ব্রান্ডিংয়ের জন্য ডিএসবি এবং রাজিব আহমেদ স্যারের পরামর্শ খুব বেশি সহায়তা করেছে। এছাড়াও আমার ক্রেতারা, যারা না থাকলে আমি সফল হতে পারতাম না।

রাইজিংবিডিঃ কাজ করতে গিয়ে কখনো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  এখন পর্যন্ত তেমন ভাবে হইনি। তবে মাঝে মাঝে, দাম নিয়ে কথা শুনি। তখন তাদের সুন্দর ভাবে দামের কারণ টা বুঝিয়ে বলি।

রাইজিংবিডিঃ নতুন উদ্যোক্তারা এই পেশায় আসতে চাইলে, তাদের জন্য আপনার পরামর্শ কি ?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  নতুনদের জন্য বলবো, চোখের ভালো লাগা আর মনের ভালো লাগায় অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই আপনি কি নিয়ে কাজ করবেন তা নিয়ে অন্তত এক মাস ভাবুন। এরপরে, যা নিয়ে কাজ করতে চান তা নিয়ে অন্তত ছয়মাস পড়াশোনা করুন, পণ্য উৎপাদনের খবর নিন, কাপড়ের রসায়নটা বুঝুন। এরপরে কাজে নামুন।

রাইজিংবিডিঃ ব্যবসা নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  শারলা আমার সন্তান সমতুল্য। একে নিয়ে আমার চিন্তা ভাবনা অনেক বিশাল। দেশ এবং দেশের বাইরে বহুদূর  দেশী পণ্যের এই আলাদা ফিউশন বিস্তৃতি আলাদা ভাবে ছড়িয়ে পরুক আমি এটাই চাই। শারলার নামটা পজিটিভ ভাবে সবার মুখে মুখে ছড়াক এইটুকুই আমার স্বপ্ন। 

রাইজিংবিডিঃ আপনার উদ্যোগের সফলতার কথা জানতে চাই?

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  আমার উদ্যোগের সবচেয়ে বড় সফলতা হয়তো মানুষের ভালোবাসা। প্রতিটি কাছের মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা এবং সাপোর্ট পেয়েছি। প্রথম দুইদিনে আমার অর্ডারের পরিমান ছিলো ২০০০০/- টাকা। এরপরে টুকটুক করে এগিয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ চলছে ভালোই।

রাইজিংবিডি:  ধন্যবাদ আপনাকে ।

রাফিয়া ইসলাম রিথিনঃ  আপনাদেরও অনেক ধন্যবাদ, আমার উদ্যোগের পাশে আমি সবাইকে চাই। শুধু কেনাকাটাইয় মূখ্য বিষয় নয় আপনাদের সাপোর্ট এবং শুভকামনায় আমার কাম্য।

ঢাকা/সিনথিয়া

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়