ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার টেকসই উন্নয়ন 

সালাউদ্দীন আহমেদ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ৪ নভেম্বর ২০২১  
ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে দরকার টেকসই উন্নয়ন 

আনিস সাহেব একটি কোম্পানিতে চাকরি করেন। আনিস সাহেবের মিসেস একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষিকা। এক ছেলে এক মেয়ে আর মিসেসকে নিয়ে আনিস সাহেবের সুখের সংসার। দু'জনের উপার্জনে মধ্যবিত্ত পরিবারটি ভালোই চলছে। 

মিরপুরের একটি ভাড়া বাসায় আনিস সাহেব মিসেস ও ছেলে-মেয়েকে নিয়ে থাকেন। মাস শেষে একটা মোটা অংকের টাকা ব্যয় হয় পুরো সংসার সামলাতে। তবে দুজনের উপার্জন থাকায় তাদের সমস্যা হয় না, বেশ ভালোই চলে যায়। 

হঠাৎ ২০২০ সালে পুরো বিশ্বে দেখা দিলো মহামারি করোনা। করোনার এই ছোবল থেকে বাংলাদেশও রেহাই পেলো না। ২০২০ সালের মার্চ মাসে এলো লকডাউনের ঘোষণা। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত বন্ধের ঘোষণা এলো। আনিস সাহেব ও তার মিসেস উভয়েই চাকরিচ্যুত হয়ে গেলেন। তাদের সংসারে দেখা দিলো অভাব। দু'জনেরই চিন্তা, এই অবসর সময়টাতে কি করা যায়। 

অবশেষে তারা দু'জনে সিদ্ধান্ত নিলেন অনলাইনে কাপড় বিক্রি শুরু করবেন। তারা সোর্সিং হিসেবে বঙ্গবাজার-ইসলামপুর বেছে নিলেন। সরাসরি ভিজিট করলেন। বিভিন্ন মানুষের থেকে তথ্য সংগ্রহ করলেন। ইন্টারনেটে জেনেশুনে বিজনেস শুরু করলেন। ফেসবুকে একটা পেজ খুললেন। কিছু টাকা খরচ করে ফেসবুক পেজ পোস্ট বুস্ট করলেন। আনিস সাহেবের মিসেস তাদের পেজ থেকে লাইভ করতে শুরু করলেন। আনিস সাহেবদের ভালোই সেল আসা শুরু করলো। 

মাশাল্লাহ তাদের প্রতিদিন ভালোই সেল হওয়া শুরু করলো। কারণ তারা প্রতিদিন পেজ বুস্ট করতেন, পোস্ট বুস্ট করতেন এবং লাইভও করতেন। অথচ আনিস সাহেবের বিজনেস রিলেটেড বা ই-কমার্স রিলেটেড কোন জ্ঞান ছিলো না। এমনও লাখো আনিস সাহেব বাংলাদেশে ২০২০ সালে উদোক্তা হয়ে গেলো। তারা প্রোডাক্ট এনে বুস্ট করে পেজ প্রমোট করে আর লাইভ করো সেল করে। 

সবকিছু যখন স্বাভাবিক হলো তারা পুনরায় নতুন চাকরিতে ঢুকলেন। এদিকে বিজনেসে আর সেভাবে সময় দিতে পারছিলেন না। আর লাইভেও আসতে পারেন না আনিস সাহেবের স্ত্রী। সারাদিন অফিস করে এসে দুজনেই ক্লান্ত থাকেন। তাদের নতুন করে বিজনেস নিয়ে ভাবতে আর ইচ্ছে হয় না। যে কারণে বুস্ট করলেও সেল তেমন আসে না৷ একটা সময় আনিস সাহেবের এ ব্যবসা থেকে মন উঠে গেলো, স্ত্রীকে বলে ব্যবসাটা বন্ধ করে দিলেন।

এমন হাজার হাজার মানুষ কোভিডের কারণে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে এসেছে৷ অনলাইনে একটা পেজ খুলে লাইভ করে সাময়িক সময় সেল পেলেও নেই তাদের কোন দক্ষতা, নেই কোন এ সম্পর্কিত জ্ঞানের পরিধি। আর যে কারণে একটা সময়ে এসে সেল না হওয়ার কারণে তাদের মনে অনিহা তৈরি হচ্ছে। আর বন্ধ করে দিচ্ছেন তাদের ওয়ান টাইমের ব্যবসাটি। 

অথচ ২০২০ সালে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রির প্রচার ও প্রসার সবথেকে বেশি হয়েছে৷ এ বছর ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে সবথেকে বেশি বেচাকেনা হয়েছে৷ সব থেকে বেশি মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পেরেছে এবং এ লাইনে এসেছে। শহরের মানুষ তো বটেই গ্রামের মানুষের কাছেও এখন ই-কমার্সের ছোঁয়া যেতে শুরু করেছে৷ অনলাইনেও কেনাকাটা যে করা যায় সেই বিশ্বস্ততা মাত্র আসা শুরু হয়েছে। যে কারণে দেশের অর্থনীতিতে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি বেশ ভালো অবদান রাখছে।

এখন কথা হলো হুজুগে- না জেনে না বুঝে না শিখে অনেকেই ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিত আসছে। এতে করে তাৎক্ষণিক লাভ হয়তো হচ্ছে কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী লাভ কি হচ্ছে? এই প্রশ্ন থেকেই যায়?

হুট করে এসে কিছুদিন ব্যবসা করে ওয়ান টাইম ইউজ ডাস্টবিনের মতো কাজ করলে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি কতটা এগিয়ে যাবে এই প্রশ্ন রয়েই যায়। 

আমাদের দেশের বাজারে এ বছর ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রি ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে চলে আসবে আশা করা যায়৷ কিন্তু এমনভাবে যারা হুজুগে ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে উদ্যোক্তা হয়েছে তারা এই ইন্ডাস্ট্রিতে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ- আমার মনে সে প্রশ্নেরই উদয় হচ্ছে। ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে এগিয়ে নিতে প্রয়োজন পরিকল্পনা মাফিক টেকসই উন্নয়ন যেটার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী ও সাসটেইনেবল। 

ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিকে সমৃদ্ধ করতে সবথেকে বড় প্রয়োজন হলো এ ইন্ডাস্ট্রি তে আসতে বেশি পুঁজি না লাগলেও লাগে বেশি জ্ঞান ও মেধা। কারণ এটা টেকনোলজি বেজড ই-বানিজ্য। কাজেই এখানে নিজের দক্ষতা না থাকলে কোন কাজ ভালোভাবে করা সম্ভব নয়৷ জেনে বুঝে পড়ে যদি এ লাইনে আসা যায় তবে এ সেক্টরে ভালো কিছু সম্ভব। তাছাড়া হুজুগে এ সেক্টরে আসলে সাময়িক লাভ ই-কমার্স ইন্ডাস্ট্রিতে হলেও টেকসই উন্নয়ন হবে না। যেটা এই ইন্ডাস্ট্রির জন্য হুমকি স্বরুপ হয়ে উঠবে। কাজেই আসুন সকলে জেনে বুঝে শিখে মাঠে নামি তবে খেলে মজা হবে।

ঢাকা/সিনথিয়া/টিপু 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়