ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

ডিজিটাল কমার্সে প্রবৃদ্ধি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: ইক্যাব

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৫, ৮ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:১৬, ৮ নভেম্বর ২০২১
ডিজিটাল কমার্সে প্রবৃদ্ধি প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: ইক্যাব

দেশের ই-কমার্স সেক্টরের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা প্রবাহের আলোকে সৃষ্ট সমস্যা ও তার সমাধানের মাধ্যমে ক্রেতার আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের নিয়ে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স অ‌্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

সোমবার (৮ নভেম্বর) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে ই-ক্যাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০১৪ সাল থেকে ই-কমার্সখাতের উন্নয়নে সংগঠনটি অনবরত যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সরকারের সঙ্গে যেসব নীতিগত সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে এবং এই খাতের যেসব সমস্যার সমাধান করেছে তা তুলে ধরা হয় অনুষ্ঠানে।

স্বাগত বক্তব্যে ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, ‘সূচনালগ্ন থেকে এই খাতের নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে উদ্যোক্তারা কাজ করে আসছে। যোগাযোগ ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে আমাদের যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তারচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ই-কমার্স খাতে। এর কারণ মূলত সঠিক সেবা দেওয়া। করোনাকালীন সেবার মাধ্যমে যে আস্থা ও বিশ্বাস এ খাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা তৈরি করেছে সেটা কোনোভাবে নষ্ট হতে দিতে চায় না ই-ক্যাব। তবে এই মুহূর্তে নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং ক্রেতাদের সঠিক ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধিতে আমরা ফিরে আসতে পারব।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসা পদ্ধতির কারণে শুধু যে ক্রেতা এবং মার্চেন্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা নয়। বরং নেতিবাচক বার্তাও ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে এই খাতে যে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে তা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে ব্যবসা করছে যাদের সফলতার গল্প আছে সেগুলোও তুলে আনা প্রয়োজন।’ 

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, ‘এখনো এই খাত লাভের মুখ দেখেনি। তারপরও একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত দেড় বছর কর্মীরা সেবা দিয়ে গেছে। ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে ই-কমার্স খাত তা অনস্বীকার্য।’

তিনি বলেন, ‘এই খাতের প্রতি ক্রেতার আস্থা ও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আমরা সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই। সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আমরা সরকারের সাথে কাজ করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ই-কমার্স আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।’

ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মেহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেন, ‘এখনো নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এ খাতের উদ্যোক্তারা কাজ করছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে বিনিয়োগে অনীহা দেখায়। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা দেওয়া এখনো সহজ হয়ে উঠেনি। এ সময় এ ধরনের ধাক্কা এ খাতের গতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে ক্রেতাদের সেবা দিতে চায় তারা কিন্তু পিছু হটেনি। আর ক্রেতারাও সেবা গ্রহণ করছে। সঠিক সেবার মাধ্যমে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আনতে আমরা কাজ করে যাব।’ 

ই-ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ‘ই-কমার্সে বেশিরভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যাদের একটা বড় অংশ নারী। এই খাতের প্রসারে সরকারের নীতিগত সহযোগিতা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এখনো বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর কাজ করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সেবার মাধ্যমে জনগণের যে আস্থা তৈরি করেছে তা ধরে রাখতেও তারা কাজ করবে। প্রকৃত ই-কমার্স থেকে সঠিক নিয়মে কেনাকাটা করার মাধ্যমে ক্রেতারাও এই খাতের পাশে থাকতে পারেন।’

ই-ক্যাবের পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী বলেন, ‘এই সময় ক্রেতা এবং উদ্যোক্তা সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা জানি ট্রেড অ‌্যাসোসিয়েশন কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব দেখতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে। ই-ক্যাব থেকেও অনবরত দাবি ও চিঠি দেওয়ার মাধ্যমে বিষয়গুলো কর্পতৃক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই সবার উচিৎ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা।’

ই-ক্যাবের পরিচালক জিয়া আশরাফ বলেন, ‘ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনে সেবা নেওয়ার জন্যই ই-কমার্সের ওপর ভরসা করেছেন। সঠিক সেবা দেওয়ার মাধ্যমে সে ভরসা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা সেবা দানে যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনি সংকট উত্তরণে সবাই একতাবদ্ধ। তাই সঠিক সেবার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এছাড়া ক্রেতাদের উচিৎ যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিক সেবা দেয় তাদের কাছ থেকে সেবা গ্রহণের মাধ্যমে পাশে থাকা। তাহলে আমরা সকলে মিলে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবো। বিক্রেতারা যেমন নিজেদের স্বার্থে সঠিক সেবা দিবে তেমনি ক্রেতারাও নিজেদের প্রয়োজনে ই-কমার্সের সেবা গ্রহণ করবে।’ 

ই-ক্যাবের পরিচালক সাঈদ রহমান বলেন, ‘২/১ জনের জন্য পুরো ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের শত শত কোটি টাকা আটকে আছে আইনি প্রক্রিয়ার কারণে। এই অবস্থা হয়তো বেশিদিন থাকবে না। কিন্তু এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু নীতি পলিসি নয় আর্থিক বিনিয়োগ ও ঋণ সুবিধার মাধ্যমে তাদের পাশে থাকা উচিৎ সরকারের। আটকে থাকা অর্থ দ্রুত ছাড় করার আবেদন জানাচ্ছি।’

ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রণকারী কতৃপক্ষ সৃষ্টি না করে প্রচলিত আইন সংশোধন ও মনিটরিং-এর কথা বলা হয়। এছাড়া ডিজিটাল কমার্স সেলের সক্ষমতা বাড়িয়ে, ইউবিআইডি, সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম তৈরি করার মাধ্যমে এই খাতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয় তুলে ধরা হয়। বর্তমানে গেটওয়ে আটকে থাকা অর্থ ছাড়, ডিজিটাল মার্কেটিং ৩০% ভ্যাট রহিতকরণ অন্যান্য দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে অনুরোধ ও সহযোগিতার কথা জানানো হয়। 

ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভনের সঞ্ছালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল। আজ সন্ধ্যায় ৬টায় ই-ক্যাব সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ৭বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সঠিক সেবার মাধ্যমে ক্রেতাদের পাশে থাকা এবং আস্থা ফেরাতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে ৬শ সদস্য জড়ো হচ্ছেন হোটেল সোনারগাঁ-এ। আগামী দিনগুলোতে একজোট হয়ে কাজ করার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাতে আলোচনা করা হবে।

ঢাকা/সিনথিয়া

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়