ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বাংলা কবিতার অনুবাদ দরকার’

সাইফ বরকতুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাংলা কবিতার অনুবাদ দরকার’

রাইজিংবিডির স্টলে হাসানআল আব্দুল্লাহ (ছবি : সাইফ রাজু)

হাসানআল আব্দুল্লাহ। কবি, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, সমালোচক, ও অনুবাদক। সনেটের স্বতন্ত্র ধারার উদ্ভাবক এবং ‘নক্ষত্র ও মানুষের প্রচ্ছদ’ নামে মহাকাব্যের রচয়িতা। তার কবিতা অনূদিত হয়েছে ইংরেজি, ফরাসি, স্পেনিশ, কোরিয়ান, পোলিশ ও রোমানিয়ান ভাষায়। পরে রোমানিয়ান ভাষায় অনূদিত কবিতা দিয়ে সে দেশের কবি মারিস স্যালারির সঙ্গে যৌথভাবে প্রকাশিত হয়েছে দ্বিভাষিক (ইংরেজি-রোমানিয়ান) কবিতার বই। ২০১৫ সালে চীন থেকে প্রকাশিত সুইডিশ কবি ব্যারেট বার্গ ও চীনা কবি ডিয়াবলো সম্পাদিত একটি বৃহৎ বিশ্ব কবিতার এন্থালজিতে বাংলাদেশ পর্বে স্থান পেয়েছে তার কবিতা। প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৩০ এর উপরে। আন্তর্জাতিক দ্বিভাষিক কবিতা পত্রিকা ‘শব্দগুচ্ছ’ সম্পাদক তিনি। অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৭-তে আসেন বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রাইজিংবিডি ডটকমের স্টলে। এ সময় কবিতা ও অনুবাদ নিয়ে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সাইফ বরকতুল্লাহ।

সাইফ বরকতুল্লাহ : বইমেলা কেমন দেখছেন?

হাসানআল আব্দুল্লাহ : আজকে দ্বিতীয় দিন আসা। ভালোই লাগছে। কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঢোকার এবং বহির্গমনের আলাদা গেট হয়েছে। সোওরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা নেওয়ার সময় আমরা এটা বলেছিলাম। তার মানে বাংলা একাডেমি আমাদের কথা শুনছে। এটা ভালো দিক। তবে দুইদিনে আমার কাছে একটু যান্ত্রিক মনে হয়েছে। আন্তরিকতার কোথাও একটা ঘাটতি রয়েছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি তো দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে থাকছেন। বিভিন্ন দেশে বইমেলা ঘুরেছেন, বড় বড় লেখকের সঙ্গে মিশেছেন। বাংলাদেশর সাহিত্য এখন কোন পর্যায়ে আছে?

হাসানআল আব্দুল্লাহ : বিশেষত কবিতার কথা আমি বলব বিশ্বমানের। আমাদের কিছু কবি আছেন তারা বিশ্ব কবিদের কাছাকাছি। আমি ত্রিশের দশকের পাঁচজনের কথা আনতে চাই, এরপরে শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, হুমায়ুন আজাদ- বিশ্বমাপের কবি। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম, এদের পরবর্তী প্রজন্ম, ধরুন পঞ্চাশের কবি বা ষাটের কবি, বিশষত নব্বই দশকে এসে বিশ্বমানের কয়েকজন কবি দাঁড়িয়েছেন। এদের কবিতা অনুবাদ দরকার। বিশ্বে পৌঁছানো দরকার। এই জায়গাটিতে বাংলা একাডেমি খুব একটা কাজ করছে না। ফলত আমাদের পৌঁছানোর সুযোগটা সৃষ্টি হচ্ছে না। ‘শব্দগুচ্ছ’ নামে আমি একটি পত্রিকা করি প্রায় বিশ বছর ধরে। এর প্রধান উদ্দেশ্য হলো বাংলা কবিতার বিশ্বায়ন। বিশ বছরে অন্তত ত্রিশটি ভাষার কবিতা ছেপেছি। আমি নিজে অনুবাদ করেছি ৩৫ জন বাঙালির কবিতা। এই শব্দগুচ্ছের পাতা নিয়ে আবার অন্য ভাষায় অনূদিত হচ্ছে। পোলিশ, ইতালিয়ান, চায়নিজ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কবিতার একটা গড্ডলিকাপ্রবাহ কিন্তু চলতে থাকে। অসংখ্য কবিতার বই বের হয়। এর মধ‌্যে যদি প্রতি বছর দুই একটি কবিতার বই পাই, কিংবা দৈনিকের শত শত কবিতা ছাপা হচ্ছে সেখান থেকে দুই একটা ভালো কবিতা পাই সেটা খারাপ নয়। তবে আমাদের বিশ্বমানের কবিতা আছে। আমাদের কবিতা যেকানো অর্থে ইংরেজি, ফরাসি, পোলিশ, জার্মান, বা রাশিয়ান কবিতার সঙ্গে তুলনা করেন তবে বলব আমাদের কবিতায় সেই উজ্জ্বল দিকগুলি আছে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : সেই সময়ের কবিতা, আর বর্তমান সময়ের কবিতা পড়লে দেখা যায়, এখনকার প্রজন্মের কবিতায় ছন্দ খুব একটা দেখা যায় না। গদ‌্যের দিকে ঝোঁকটা বেশি। আপনার ভাবনা?

হাসানআল আব্দুল্লাহ : আমি ছন্দের বই লিখেছি। বাংলা একাডেমি ১৯৯৭ সালে আমার ছন্দের বই বের করে কবিতার ছন্দ। আমি কিন্তু নব্বইয়ের দশকের কবি। সেই বইয়ের দ্বিতীয় সংস্করণ মাওলা ব্রাদার্স করেছে, এটি বিশ্ববিদ্যালেয় পাঠ্য। আমি যেসব বড় কবিদের জানি, বাংলা কবিতায় যারা বড় কবি তারা ছন্দ না জেনে কবিতা লেখেন না। ছন্দ জানতেই হবে। আপনি জানেন বিশ শতকের বাংলা কবিতা আমি সম্পাদনা করেছি। সেখানে আপনি লক্ষ্য করবেন- যার কবিতায় ছন্দ নেই, ছন্দের বোধ নেই তার কবিতা ওখানে নেই। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত একশজন কবিকে বাছাই করতে হাজার হাজার কবিতা পড়েছি। কাজটি করতে একুশ বছর সময় লেগেছে আমার। যারা কবি হিসেবে দাঁড়াতে চান তাদের কয়েকটি কাজ করতে হবে। এক. নতুন কিছু লিখতে হবে। দুই. বাংলা কবিতার ঐতিহ্যকে জানতে হবে। তিন. ছন্দ জানতে হবে। চার. বিশ্ব কবিতাকে জানতে হবে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনি বললেন যে নতুন কিছু লিখতে হবে। কিন্তু এখন সময়কাল নিয়ে লেখা তেমন পাচ্ছি না?

হাসানআল আব্দুল্লাহ : ভালো লেখা খুব কম হয়। আমি একটা সার্ভে করেছি। ২০১৬ সালে আমি আমেরিকা থেকে আট দিনের জন্য এসেছিলাম। আমার বন্ধু বায়তুল্লাহ কাদেরীকে নিয়ে বইমেলায় স্টলের প্রতিটি বই দেখব, যে বইয়ের প্রথম পাতায় ভুল নাই সে বই কিনব। আপনি অবাক হবেন অন্তত ২৫টা স্টলে ঘুরেছি, নতুন বইয়ের প্রথম বা দ্বিতীয় বাক্যেই ভুল। সে সময় বইমেলায় আটদিন নামে একটি বই লিখেছিলাম।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনার বিভিন্ন লেখায় পড়েছি আপনি অনেকের কবিতার বই সম্পাদনা করেছেন। তো এখন যারা লিখছেন অভিযোগ আছে সম্পাদনা ছাড়াই বেশিরভাগ বই বের হচ্ছে- আপনার মূল্যায়ন..

হাসানআল আব্দুল্লাহ : এ ব্যাপারে আমি সবসময় বলি কাউকে উপদেশ দিয়ে কিছু হয় না। শহীদ কাদরীকে কেউ কোনদিন উপদেশ দেয়নি। শহীদ কাদরী আলাদা কবিতা লিখেছেন বলেই আজকে আমরা তাকে নিয়ে কথা বলি। জীবনানন্দ দাশ, কাজী নজরুল ইসলাম আলাদা কবিতা লিখেছেন বলেই কথা বলি। ফলত একজন কবিকে নির্ধারণ করতে হয় সে কীভাবে লিখবে, কী করবে। হ্যাঁ, সম্পাদনার একটা বিশাল ক্ষেত্র রয়েছে। আপনি এই ইতিহাসও জানেনে, টি এস এলিয়টের ‘দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড’ (১৯২২) এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছিল যে পাণ্ডুলিপির অর্ধেকটাই বাদ দিয়ে দিয়েছেন। কবিকে সেই শক্তি নিয়ে আরেকজন কবির কাছে বসতে হবে। শামসুর রাহমানের ১৪ বছরের ছোট শহীদ কাদরী। শামসুর রাহমানের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম বই নিয়ে শহীদ কাদরী সঙ্গে বসেছেন, আলাপ করেছেন, কোনভাবে সম্পাদনা করা যায়, কী কী কবিতা রাখা যায়। শহীদ কাদরীর তিনটি বই বেরিয়েছে, তিনিও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কবির সঙ্গে বসেছেন। সবশেষ বইটি নিয়ে আমার সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন। সেটা হয়ে উঠেনি। সেটা তিনি করেছেন অসুস্থ অবস্থায়। সম্পাদনার ব্যাপারটা সব সময় থাকে। সম্পাদনার বিকল্প নেই।

সাইফ বরকতুল্লাহ : বইমেলা নিয়ে আপনার প্রত্যাশা?

হাসানআল আব্দুল্লাহ : মানসম্পন্ন বই বের হবে। সুপাঠ্য বইয়ের বেশি প্রচার দরকার। এটা করতে হবে।

সাইফ বরকতুল্লাহ : আপনাকে ধন্যবাদ

হাসানআল আব্দুল্লাহ : আপনাকেও ধন্যবাদ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সাইফ/ইভা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়