ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

বইমেলায় সায়েন্স ফিকশন ‘সিয়ান অথবা নাবিল’

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বইমেলায় সায়েন্স ফিকশন ‘সিয়ান অথবা নাবিল’

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০২০) প্রকাশিত হয়েছে কথাসাহিত‌্যিক আফসানা বেগমের লেখা সায়েন্স ফিকশন ‘সিয়ান অথবা নাবিল’।

কাহিনির অংশবিশেষ:

‘এবারে বলো দেখি তুমি কে?’

‘আমি নাবিল।’

‘মানে?’

‘আমি নাবিল। আমার বাড়ি বাংলাদেশে।’

‘আচ্ছা! ওই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ তো পানির নীচে তলিয়ে গেছে। আর এক তৃতীয়াংশকে পানি পাম্প করে স্থল করে রাখা হয়েছে। ওখানে গেলেও ওরা তোমাকে থাকতে দেবে না। কারণ তুমি আসলে ওখানকার নও। তোমার জন্ম হয়েছিল উত্তর মেরুর একটা ল্যাবে, যার নাম, অ‌্যান্ড অফ দ্য ওয়ার্ল্ড।’

‘আবোলতাবোল কী বলছ এসব!’

‘ঠিকই বলছি। তোমার জন্মের বহু আগে থেকেই মানুষ কেবলমাত্র টেস্টটিউবে জন্মায়। তাই উত্তর মেরুর একটা ল্যাব, অ‌্যান্ড অফ দ্য...’

‘চুপ করো!’

নিকি নিজের সংবেদনশীলতার ডিগ্রি বাড়িয়ে নেয়। তারপর সামান্য হেসে সিয়ানের কপালে হাত রাখে। পাতলা স্কচ টেপের মতো ব্যান্ডেজ থাকার পরেও সিয়ান মানুষের হাতের মতো স্পর্শ পায়।

‘দেখ, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আমাদের কিন্তু রোগীকে ছোঁয়ার অনুমতি নেই। কিন্তু আমি জানি মানুষ স্পর্শ পছন্দ করে। এটা তাদের জন্য একরকম সান্ত্বনা। অদ্ভুত বটে, জীবাণুর সংক্রমণ থেকে বাঁচার চেয়েও তাদের কাছে সান্ত্বনা জরুরি! যা হোক, তোমাকে যা বলেছিলাম, দুর্ঘটনার পরে তোমার ব্রেইনের প্রিফন্টাল কর্টেক্স আর নিও কর্টেক্স প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। কাজটা এত দ্রুত করতে হয়েছে, তাও আবার চলন্ত অ্যাম্বুলেন্সের ভিতরে। তাই ল্যাবে সংরক্ষিত ব্রেইনের সঙ্গে ম্যাচিং পেয়ে সেটাকে ভালোমতো পরীক্ষা না করেই...’

‘কোনো সমস্যা?’ ব্যান্ডেজের নীচে সিয়ানের কপালে ভাঁজ পড়ে।

‘মানে, হয়েছে কী, ব্রেইনটাতে কীভাবে যেন দীর্ঘকালীন স্মৃতিগুলো অক্ষুণ্ণ ছিল। বিশ্বাস করো, এটা কেবলই একটা ভুল। শত শত বছর আগে যে বা যারা এটা সংরক্ষণ করেছিল, এটা তাদের ভুল। স্মৃতিগুলো তারা মোটেও মুছে দেয়নি। আর আমরাও তাড়াহুড়োয় পরীক্ষা না করেই...’

‘তা এখন মুছে দাও না কেন?’

‘সেটাই তো আমরা টানা তেরো ঘণ্টা তেত্রিশ মিনিট ধরে চেষ্টা করলাম। কিন্তু তোমার নিউরনগুলো এতটাই ড্যামেজ হয়েছিল যে তখন সফল একটা অপারেশন ছিল অনিশ্চিত ব্যাপার। এখন জোড়া লাগানো নিউরন যদি আবারো খুলে ফেলা হয়, তবে অপারেশন তেমন সফল না-ও হতে পারে। তোমার ব্রেইন মরে যেতে পারে, সঙ্গে তুমিও। আবার এরই মধ্যে যেহেতু সেখানে নতুন অভিজ্ঞতা জমতে শুরু করেছে, সেসবসহ সমস্তকিছুই মুছে যাবে হয়ত। তুমি বুঝতে পারছ? ধরো, তাহলে আর কোনো অভিজ্ঞতাই জমল না স্মৃতি হয়ে। ধরো, তারপর থেকে তুমি একটা আসবাবের মতো হয়ে গেলে, যার কোনো স্মৃতি নেই,’ কথাটা শেষ করে নিকি পাশের একটা টেবিলের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তাকিয়ে থাকে।

‘তাহলে আমি এখন কী করব? আমাকে বলো আমি কে।’

‘শোনো, তোমার পুরো ফাইল হাতে চামড়ার নীচের আলট্রা ডিভাইসে লোড করা আছে। সারা জীবন তুমি কোথায় কতক্ষণ ছিলে, কার সঙ্গে কথা বলেছ, কার কার সঙ্গে দেখা করেছ, সব তথ্য তুমি সেখানে চাইলেই পাবে। ওগুলো দেখতে থাক, সেখান থেকে ক্রমশ আবারো তোমার স্মৃতি তৈরি হবে। সবকিছু চিনতে পারবে।’

‘সে তো হবে জোর করে নিজেকে একজন নির্দিষ্ট মানুষ করে তোলা,’ সিয়ান হতাশ হয়ে পড়ে।

‘দুঃখিত। ব্যাপার হলো, ব্রেইন বদলালে সেটা তোমাকে করতেই হতো, মানে, ভুল করে স্মৃতিসহ ব্রেইন না-লাগালেও তুমি পেতে নতুন জন্মানো শিশুর মতো একটা ব্রেইন যার কোনো স্মৃতি নেই। তারপর তুমি দিনের পর দিন সেখানে অভিজ্ঞতা জমা করতে। একসময় অভিজ্ঞতা জমতে জমতে ব্রেইনটা তোমার নিজের স্মৃতিতে ভরপুর হয়ে উঠত, তুমি বুঝতে যে তোমার নাম, সিয়ান।তুমি একজন ইঞ্জিনিয়র, আর মঙ্গলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগের জন্য যে টিউব রেললাইনটা বানানো হচ্ছে, তুমি তার...’

‘চুপ করো!’

সায়েন্স ফিকশন ‘সিয়ান অথবা নাবিল’ বইটি পাওয়া যাচ্ছে বইমেলায় অবসর প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে।


ঢাকা/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়