ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মেলাকেন্দ্রিক বই সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে: মোজাফফর হোসেন

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৫, ৫ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ২০:৩৫, ২ মে ২০২১

চলছে ‘অমর একুশে বই মেলা’। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হলেও বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এবার মার্চে শুরু হয়েছে এই মেলা।

বই মেলায় এসেছিলেন কথাসাহিত্যিক মোজাফফর হোসেন। করোনাকালীন বইমেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা জানি যে অমর একুশে বইমেলা ২০২১ বড় রকমের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মধ্যে শুরু হয়েছে। এখনো শেষ হয়েছে বলতে পারছি না। কারণ আজ পর্যন্ত মেলাটি চলমান এবং আমরা জানি এই মেলাটির শুরুটাও হয়েছে একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে। প্রতিদিনই আমরা শুনতাম মেলা বোধহয় বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু অবশেষে মেলার প্রায় অর্ধেকটা পার করে এসেছি। আমরা বলব, এটা আমাদের জন্য অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। সবার জন্যই, লেখক বা পাঠক বলব না পুরো দেশেই জন্যই। মেলাটা আমরা কতটা নিয়মনীতি মেনে অভ্যস্ত হতে পারি, আমাদের এই সামাজিক আচারের ক্ষেত্রে। আমরা যে সম্পূর্ণ সফল হয়েছি তা বলব না। কিন্তু অনেকাংশেই হয়েছি। কারণ আমরা মেলাতে সেই পরিবেশটা দেখেছি। কিন্তু আফসোসের কথা যে, করোনা এমনভাবে বাড়ছে, বলা যায় না মেলাটা আমাদের জন্য নিরাপদ হবে। এটা বলা মুশকিল। তাই যে সিদ্ধান্তই আসুক, আমারা সেটাকে স্বাগত জানাই।’

মেলাকেন্দ্রিক বই কেনার প্রবণতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বইমেলা আমি সবসময় পাঠককে বলি, মেলা কেন্দ্রীক যে বই উৎসব সেটি সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এক অর্থে। কারণ আমরা অভ্যস্ত হয়ে যায় বছরে একটা সময়েই বই কিনব। আমরা লক্ষ্য করব, অন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিন্তু সারা বছর কিনি, প্রতিদিন কিনি। বই কিন্তু প্রতিদিনের বিষয়। করোনা না থাকলেও আমি বলি, এখন নতুন যুগ, আমাদের নতুন সময়, অনলাইন মার্কেটগুলো তৈরি হচ্ছে বইয়ের ক্ষেত্রে। আমরা এখন অনলাইন ফুডে অভ্যস্ত, রেস্টুরেন্টে গিয়েও খাচ্ছি না। বইয়ের ক্ষেত্রে পাঠকের উচিত হবে বাসা থেকে অর্ডার করা। আমি মনে করি করোনা আমাদের অভ্যাসের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন এনেছে। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মেলায় আসি। আমাদের দায়িত্ব থাকে পালন করি। কিন্তু বইয়ের ক্ষেত্রে আমি কিন্তু অনলাইনে কিনি। আমাদের যে বুক স্টোরগুলো আছে তারা বই বাসাতে পৌঁছে দেয়। ঢাকাতে যতগুলো বুকশপ আছে ফোন দিলেই কিন্তু বাসায় বই পৌঁছে দেয়। ফলে আমার মনে হয়, একটি নতুন মাধ্যমে খুলে যাবে।’

অমর একুশে বই মেলায় মোজাফফর হোসেনের লেখা ‘মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ’ পাওয়া যাচ্ছে। এটি একটি গল্পের বই। গত ফেব্রুয়ারিতে বইটি প্রকাশিত হয়েছে। মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘বই মেলা ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না এটি জানতাম। তখন আমার নিজের মনে হয়েছে, আমি কি প্রতি বছর মেলার দিকে তাকিয়ে থাকব? মেলাটা যদি না হয়! তাহলে আমরা যারা পেশাদার লেখক, লেখাটাকে আমার কাজের অংশ মনে করি, তাহলে আমরা কীভাবে টিকে থাকব? তখন আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনলাইনে একটি পদক্ষেপ নিই। একটি প্রচারের উদ্যোগের কথা বলছি। এর মধ্যে লক্ষ্য করি, আমার ‘মানুষের মাংসের রেস্তোরাঁ’ বইয়ের প্রথম সংস্করণটিই বিক্রি হয়ে গেছে। এই পুরো সেলটাই অনলাইনে। এটি আমার কাছে অভাবণীয়। কারণ বইমেলা হলেও যে আমার প্রথম সংস্করণ শেষ হতো এটা আমি বলতে পারছি না। পাঠককে বলব—  নিজের নিরাপত্তা আগে, পরিবারের নিরাপত্তা আগে, তারপর আমাদের জীবন-জীবীকা এই ব্যাপারটি নিশ্চিত হলে বিনোদনের এই জায়গা, পঠন-পাঠনের জায়গা তৈরি হয়। আপনারা বাসায় থাকুন বেশি বেশি করে বই পড়ুন এবং এই সময়টা যদি কেউ বই পড়েন এক ধরনের সাইকোলজিক্যাল হিলিং হবে’।

ঢাকা/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়