ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

যে মমির সন্ধান আজও মেলেনি

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে মমির সন্ধান আজও মেলেনি

জার্মান চিকিৎসক অগাস্ট গটফ্রিড নোচ ১৮১৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ইতিহাসে তিনি মমিফাইং ফ্লুইড আবিষ্কার করে বিখ্যাত হয়ে আছেন। মমিফাইং ফ্লুইড বিশেষ এক ধরনের তরল, যার সাহায্যে কোনো প্রাণীর মমি সহজে তৈরি করা যায়। অবাক করা ব্যাপার হলো, তার আবিষ্কৃত এই ফ্লুইডের ফর্মুলা এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।

সাধারণত কোনো প্রাণীর দেহ মমি করতে হলে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, নাড়িভুঁড়িসহ দেহের পঁচনশীল অঙ্গগুলো কেটে ফেলে দিতে হয়। তবে ফ্রিডনোচ আবিষ্কৃত ফ্লুইড ব্যবহার করলে কোনো অঙ্গ অপসারণ করার প্রয়োজন হতো না। ফলে মৃত্যুর পর সেই ফ্লুইড দিয়েই ফ্রিডনোচের দেহ মমি করা হয়েছিল।

১৮৪০ সাল পর্যন্ত ফ্রিডনোচ জার্মানির ফ্রেইবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সায়েন্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাসপাতালে কাজ করতেন। এরপর তিনি অজানা কারণে জার্মানি ছেড়ে ভেনিজুয়েলা চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সে সময় অনেক জার্মান অভিবাসীদের একজন হয়ে লা গুয়াইরায় স্থায়ীভাবে বাস করতে শুরু করেন। সেখানে তিনি আবারও ডাক্তারি পেশায় মনোনিবেশ করেন। কিছুদিন পর নার্স ও সহকারী হিসেবে কাজ করার জন্য স্ত্রী ও মেয়েকে ভেনিজুয়েলায় নিয়ে আসেন।

লা গুয়াইরার মানুষ সাহসিকতা এবং উদারতার জন্য তাকে পছন্দ করতো। ভেনিজুয়েলায় কলেরা যখন মহামারি আকার ধারণ করে তখন অনেক ডাক্তার মৃত্যুভয়ে পেশা পরিবর্তন করলেও তিনি নির্ভয়ে চিকিৎসা চালিয়ে যান। দরিদ্র রোগীদের কাছ থেকে তিনি ফি নিতেন না। বরং পকেটের টাকা খরচ করে ওষুধ কিনে দিতেন। এ কারণে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশোনা সম্পূর্ণ শেষ না করা সত্ত্বেও ১৮৪৫ সালে ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল ডি ভেনিজুয়েলা তাকে ডাক্তারি সনদ প্রদান করে।

ঘোড়ার প্রতি ফ্রিডনোচের দুর্বলতা ছিল। তিনি ঘোড়ায় চড়তে পছন্দ করতেন। পরিশ্রমী হিসেবেও তার সুনাম ছিল। ডাক্তারি করার পাশাপাশি কৃষিকাজ করার জন্য তিনি জমিও কিনেছিলেন। ফেডারেল যুদ্ধ চলাকালীন তিনি লা গুয়াইরার ‘সান জুয়ান ডি ডায়োস’ নামে একটি পুরাতন হাসপাতাল পুননির্মাণে সহায়তা করেন। সেখানে তিনি আহত সৈনিকদের চিকিৎসা করতেন এবং মৃত সৈনিকদের সৎকারের কাজে সাহায্য করতেন। এই সময় মমিফিকেশনের জন্য বিশেষ তরল তৈরির ব্যাপারটি প্রথম তার মাথায় আসে। তারপর যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেওয়ারিশ লাশগুলো তিনি পরীক্ষাগারে নিয়ে এসে গবেষণা করতে থাকেন। দীর্ঘদিন গবেষণার পর তিনি মমিফিকেশন ফ্লুইড আবিষ্কার করতে সমর্থ হন। এই বিশেষ তরল পদার্থটি তিনি লাশের শিরার ভেতর পুশ করতেন। আশ্চর্যজনকভাবে, তিনি এই প্রক্রিয়ায় মৃতদেহের কোনো অঙ্গ অপসারণ না করেই সফলভাবে মমি তৈরিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ফ্রিডনোচ কুকুর ও বিড়ালের অসংখ্য মমি তৈরি করেছিলেন। মমি করার সময় তিনি মজার একটি কাজ করতেন। তিনি কুকুর ও বিড়ালের রাগান্বিত বা ভিতু চেহারা বানিয়ে তারপর মমি বানাতেন।

ফ্রিডনোচ মৃত্যুর পূর্বে সহকারী এমিলিকে নিজের দেহ মমি করার দায়িত্ব দিয়ে যান। সে অনুযায়ী ১৯০১ সালে তার দেহ মমি করা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর মমিটি চুরি হয়ে যায়। আজ পর্যন্ত এর সন্ধান মেলেনি। জীবদ্দশায় ফ্রিডনোচ কখনোই তার মমিফিকেশন ফর্মুলা প্রকাশ করেননি। ধারণা করা হয় যে, অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ব্যবহার করেই তিনি এই বিশেষ তরল পদার্থটি তৈরি করেছিলেন। তবে এখন পর্যন্ত অনেক গবেষণা করেও কেউ এই ফর্মুলা উদ্ধার করতে পারেনি।



ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়