ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আবর্জনা থেকে বই কুড়িয়ে ময়লাকর্মীর গ্রন্থাগার

নিয়ন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৩, ৩ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আবর্জনা থেকে বই কুড়িয়ে ময়লাকর্মীর গ্রন্থাগার

ডাস্টবিন থেকে আবর্জনা সংগ্রহকারী হিসেবে কাজ করার সময় ১৯৯৭ সালে হোসে আলবার্তো গুতেরেসের মাথায় আসে অভিনব একটি পরিকল্পনা। ময়লাকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় তিনি লক্ষ্য করেন, আবর্জনার মধ্যে পুরনো বইও পড়ে থাকে। মানুষ বইগুলো পড়ে ঘরে রাখার জায়গা না-পেয়ে ময়লার সঙ্গে ফেলে দেয়। অথবা তারা হয়তো বইগুলোর মর্যাদাই বোঝেনি!

গুতেরেস ফেলে দেয়া বইগুলো সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত নেন। এবং সেগুলো দিয়ে বিশাল লাইব্রেরি গড়ে তোলেন। কাজটি করতে অনেক সময় লাগলেও একসময় গুতেরেসের এই উদ্যোগ ব্যাপক প্রশংসিত হয়। বর্তমানে তিনি বিশ্বজুড়ে ‘লর্ড অব দ্য বুকস’ বা ‘বইয়ের প্রভু’ নামে পরিচিত।

গুতেরেস নিজের দেশ কলম্বিয়ায় পরিচিত মুখ। লাইব্রেরি করেই তিনি থেমে থাকেননি। যারা লাইব্রেরি করতে চান অথবা বইপ্রেমী তাদের তিনি বই অনুদান দেন। গুতেরেস বলেন, ‘যেদিন আমি সমগ্র দেশ বই দিয়ে পূর্ণ করে ফেলব, সেদিন মনে হবে আমি যেন ওডিসিয়াসের মতো পেনেলোপকে উদ্ধার করে ইথাকাকে যুদ্ধ থেকে বাঁচিয়ে ফেলেছি।’

৫৫ বছর বয়স্ক এই ভদ্রলোক গত দুই দশক ধরে দেশটির  ৪৫০টিরও বেশি লাইব্রেরি, স্কুল এবং রিডিং সেন্টারের ময়লা আবর্জনা থেকে বই সংগ্রহ করেছেন এবং সেগুলো অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি মূলত কলম্বিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো অর্থাৎ যেসব এলাকায় বইয়ের অপ্রতুলতা রয়েছে সেসব অঞ্চলে বইগুলো পৌঁছে দিতে আগ্রহী।

গুতেরেসের ঘরে প্রবেশ করে আপনি বইয়ের রাজ্যের এক গোলকধাঁধায় হারিয়ে যাবেন। বিখ্যাত অনেক বই তিনি ময়লা আবর্জনার মধ্য থেকেই সংগ্রহ করেছেন। ১৯৯৭ সালে বগোতা শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ট্রাক ড্রাইভার হিসেবে কাজ শুরু করার পর থেকেই বই সংগ্রহ করা শুরু করেন তিনি। কাজে যোগ দেয়ার কিছুদিন পর রাতের শিফটে শহরের পশ্চিম দিকের এক এলাকায় কাজ করার সময় বইয়ের বিশাল স্তূপ দেখে চমকে ওঠেন! এত বই এভাবে নষ্ট হতে দেখে তিনি কষ্ট পান। একইসঙ্গে বইগুলো ফেলে দেয়ার পরিবর্তে তার মাথায় দারুণ এক পরিকল্পনা আসে।

এরপর গুতেরেস এবং তার স্ত্রী দুজন মিলে নিজেদের বাড়িতেই একটি কমিউনিটি লাইব্রেরি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। তাদের ছোট্ট লাইব্রেরিটিই ‘ফান্ডাসিয়ন লা ফুয়েরজা দে লাস পালাব্রাস’ এ রূপান্তরিত হয়। কলম্বিয়াজুড়ে বই অনুদান দেয়ার জন্য এই ফাউন্ডেশন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এবং এর প্রতিষ্ঠাতা গুতেরেস পেয়ে যান ‘বইয়ের প্রভু’র খেতাব।


ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়