ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

আসাদুল্লাহ, আনোয়ারের জীবনের খাতায় শূন্য পাতা  

রফিকুল ইসলাম মন্টু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৩৩, ২২ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসাদুল্লাহ, আনোয়ারের জীবনের খাতায় শূন্য পাতা  

রফিকুল ইসলাম মন্টু : সূর্যের তেজটা আজ বেশ চড়া। গুমোট হাওয়া। খোলা মাঠেও তাই তাঁতানো ভ্যাপসা গরম। সকালে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে যাওয়ায় মাঠের নিচু জায়গাগুলোতে জমে আছে পানি। দুপুরের মদনপুরে কর্মব্যস্ত মানুষদের দেখা মিলে। দ্বীপের মানুষের দিন অনেক বড়। দিন শুরু হয় খুব ভোরে। শেষ হয় সন্ধ্যার পর। কাজ আর কাজ। নারী-পুরুষ এবং শিশু, সকলের হাতেই কাজ। কেউ কাউকে কাজের কথা বলে দেয় না; কাজই সামনে এসে হাজির হয়। ঘরের কিশোরী জানে, তাকে কলপাড় থেকে কয়েক কলসি পানি আনতে হবে। কিশোর জানে গোয়ালের গরু বাইরে নেয়া এবং সন্ধ্যার আগেই গোয়াল ঘরে ফিরিয়ে আনতে হবে।  

হাঁটি আর দেখি। দূরে মহিষের পালের পেছনে বাথান। মহিষের পিঠে লাঠির আঘাতের শব্দ যেন অনেক দূর থেকেই ভেসে আসে। এই যে মদনপুরের পথে হাঁটছি- এর পাশেই কাছিয়া দ্বীপ। মাঝখানে তেমন কোনো সীমানা নেই। তবুও ওটা আলাদা। ভৌগোলিকভাবে ওর পরিচয় ভোলা সদরের সঙ্গে। সদরে কাছিয়া নামে একটি ইউনিয়ন রয়েছে; সেটি ভেঙে ওই দ্বীপ গড়েছে বলে ওটির নাম হয়েছে কাছিয়া দ্বীপ। কেউ কেউ আবার মাঝের চর বলেও চিনেন। কাছিয়া দ্বীপে কয়েকবার গিয়ে দেখেছি সেখানকার ক্যাপসিকাম চাষের চিত্র। শয়তানের টেক নামক স্থানে বিপুল স্থানজুড়ে ক্যাপসিকাম, মরিচ, তরমুজসহ বিভিন্ন রবি ফসলের চাষ দেখেছি। আসলে দ্বীপের মাটি বেশ ঊর্বর। যে কোনো ফসলই এখানে ভালো হয়। কিন্তু ওই যে, সমস্যা তো একটাই- প্রান্তিকের চাষির কাছে ন্যায্য মূল্য পৌঁছায় না। লাভবান হয় মধ্যস্বত্বভোগীরা।

চরাঞ্চলে কৃষির ন্যায্যমূল্যের কথা মনে হতেই মনে পড়ে সরকারের আওয়াজ। সরকারি ঘোষণায় কৃষকদের ন্যায্যমূল্য দেয়ার সবকিছু যেন লিপিবদ্ধ আছে। কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পায় সেজন্য সব ব্যবস্থাই যেন করা আছে। ধানের ন্যায্যমূল্য, মাছের ন্যায্যমূল্য, আখের ন্যায্যমূল্য, লবণের ন্যায্যমূল্যের দাবি বিভিন্ন সময় ওঠে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, সংবাদ মাধ্যমে তোলপাড় হয়- সরকারের কর্তাব্যক্তিরা আবার আওয়াজ তোলেন। সকল সমস্যাই করে দেন তারা। কিন্তু সেসবে মদনপুরের কৃষক আন্দোলিত হয় না। তাদের ভেতরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় না। কারণ, এখানকার কৃষকের কাছে সেসব বার্তা খুব একটা আসে না। কৃষক আর বাজারের মাঝে অবস্থানকারীরা বেশি লাভবান হবে- এটাই নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে ঢাকা শহর থেকে বহুদূরের মদনপুরের কৃষক। এখানকার কৃষক জানে সে ঠকছে, জেলে জানে সে ঠকছে- তবুও কিছুই করার নেই তাদের।

কৃষক আসাদুল্লাহর বাড়ির সামনের খোলা জায়গাটুকুর বন পরিষ্কার করে উঠোন বানানো হয়েছে। ফসলের মৌসুমে এই উঠোনে সব ফসলের সমাবেশ ঘটে। সরেজমিন এই দ্বীপে যখন যাই তখন ছিল সয়াবিনের মৌসুম। আসাদুল্লাহর বড় মেয়ে আমেনা বেগম উঠোনে সয়াবিন মাড়াইয়ে ব্যস্ত। ধানের মতই সয়াবিনের খড়গুলো উড়িয়ে সয়াবিন আলাদা করে নিতে হয়। আশপাশের প্রায় সকল বাড়ির উঠোনের একই চিত্র। যতটুকু সয়াবিন হয়, নিজেরাই মাড়াই করতে পারেন। এতে বাইরের লোকের প্রয়োজন হয় না। আর যারা একটু বেশি জমিতে আবাদ করে, তাদের লোক নিতে হয়। গত কয়েক বছর উপকূলীয় দ্বীপগুলোতে সয়াবিন চাষের প্রসার লক্ষ্য করেছি। উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর সয়াবিন চাষের পথ দেখিয়েছে। এক সময় দেশে উৎপাদিত মোট সয়াবিনের ৮০ শতাংশ উৎপাদিত হতো কমলনগরে। জেলা ব্র্যান্ডিংয়ে এই সয়াবিনকে গুরুত্ব দিয়ে লক্ষ্মীপুর জেলাকে সয়াল্যান্ড আখ্যা দেয়া হয়েছে। শুধু লক্ষ্মীপুর ও কমলনগর নয়, সয়াবিনকে ঘিরে বহু এলাকার কৃষক স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু ন্যায্যমূল্য না পাওয়াটাই সবচেয়ে বড় কষ্টের। দেশের অন্য পাঁচটি প্রান্তিক এলাকার মত ভোলার দৌলতখানের দ্বীপ মদনপুরের কৃষকেরাও ফড়িয়াদের কবজায় বন্দি। সবজির মৌসুম হোক, ধানের মৌসুম হোক বা সয়াবিনের মৌসুমই হোক না কেন- সব সময় মদনপুরের পাটোয়ারি বাজারে ফড়িয়াদের ফসল সংগ্রহের আড়ৎ বসে। কৃষকেরা সেখানেই ফসল নিতে বাধ্য হন। ফড়িয়ারা যে দাম দেন সেটাই নিতে বাধ্য কৃষক।

উঠোন থেকে অন্যবাড়ির দিকে হাঁটছিলাম। এর মধ্যে আসাদুল্লাহর ডাক- বসে যান। ঘরের দাওয়ায় উদোম শরীরে বসেছিলেন তিনি। পরনের লুঙ্গিটা হাঁটু পর্যন্ত উঠানো। হাতে পাখা। বাইরে একদম বাতাস নেই। তাই প্রচণ্ড গরমে সব যেন সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। আসাদুল্লাহও কাজেই ছিলেন। কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিচ্ছিলেন। এগোই তার ঘরের দিকে। ইটের দেয়ালের গাঁথুনির ছবি আঁকা প্লাস্টিক শীট লাগিয়েছেন ঘরের সামনের কাঠের ওপরে। ফলে ঘরখানা মনে হয় ইট দিয়ে গেঁথে রেখেছেন। সামনের বারান্দায় ঢুকতেই চালার সঙ্গে ঝুলতে দেখি ফেলনা প্লাস্টিক দিয়ে বানানো ফুলের ঝাড়। টিনের সঙ্গে ঝুলছে অনেকগুলো। ছোটখাটো সাজানো গোছানো ঘর। বারান্দায় উঠতেই হাস্যোজ্জল মুখে ঘর থেকে বের হলেন আসাদুল্লাহর স্ত্রী পারভীন আকতার। তিনি আসাদুল্লাহর দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী হাসনা বানু সন্তান জন্মদানকালে মারা যান। এ দ্বীপে এটা অহরহ। সরকারের এত কর্মসূচির পরেও মাতৃমৃত্যু রোধ করা সম্ভব হয়নি। আমরা হাসনা বানুকে আর ফিরে পাবো না। তবে পারভীন আক্তারদের বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আসাদুল্লাহর কাছে জানতে চাই, কেমন আছেন?

: ভালো নেই।

: কেন?

: বারবার ফসল মার খায়, মূল্য পাই না। ভালো থাকি কেমনে?

: কত বছর ধরে আবাদ করেন?

: ২০ বছর ধরে বিভিন্ন ফসল ফলাই।

: ফলন কেমন?

: প্রায়ই তো মার যায়। গত দু’বছর কোনো ফলন পাইনি। চালান ওঠেনি।

: কী কী ফসল ছিল?

: সয়াবিন ও ধান দুটোই মার খেয়েছে। 

: কীভাবে চলে?

: ধারদেনা করে।             

: ঋণ আছেন?

: আছি।

: কত টাকা?

: এক লাখের ওপরে।

: কার কাছে?

: এনজিওতে, মহাজনের কাছে।

ধারদেনা প্রসঙ্গ উঠতেই আসাদুল্লাহ একটু ভেঙে বলার চেষ্টা করেন। ধারদেনা আসলে তাদের কখনোই শোধ হয় না। ফসল মার খেলে দেনার পরিমাণ বাড়ে। আর ফসল পাওয়া গেলে ধারদেনা হয়তো কিছুটা শোধ হয়। কিন্তু নতুন ফসল আবাদের জন্য আবার ঋণ করতে হয়। গেল সয়াবিন মৌসুমের হিসেব দেখালেন আসাদুল্লাহ। সয়াবিন করেছিলেন পাঁচ একর জমিতে। ফসল পেয়েছেন ১০০ মণ। দাম পেয়েছেন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কিন্তু খরচও চলে গেছে এর কাছাকাছি। সয়াবিন ছাড়াও আসাদুল্লাহ জমি বর্গা নিয়ে আবাদ করেন ধান, মরিচ, মুগডাল, ফেলন ডাল, ধনচে ইত্যাদি। লোণা পানি, জোয়ারের পানি, ঝড়বৃষ্টি, পোকামাকড় এখানকার ফসলের শত্রু বলে জানালেন আসাদুল্লাহ।

কথা বলতে বলতে আসাদুল্লাহর দীর্ঘশ্বাস পড়ে- চার বছর আগের ১৯টি মহিষের মধ্যে ১৬টিই মারা গেছে অজ্ঞাত রোগে। চরাঞ্চলে কৃষকেরা অধিকাংশই অন্যের মহিষ লালন পালন করে। বর্ষায় জোয়ারের সময় পানি উঠলে সমস্যার শেষ থাকে না। আর ঝড়ঝাপটা হলে তো আরও সমস্যা। এখানকার কোনো কৃষকই ভালো নেই। নিজে যে বাড়িতে থাকি, এই জমিটা ভাড়া নিয়েছি। বাড়ি ও ফসলি কিছু জমি মিলিয়ে ৪৮ শতাংশ জমির জন্য ভাড়া দিতে হয় বছরে ১২ হাজার টাকা। বলতে থাকেন আসাদুল্লাহ। বয়স তো ৭৫ ছুঁয়েছে- আর কবে শূন্য খাতায় জমা হবে কিছুটা? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করি। 

মাঠ পেরিয়ে বিল পেরিয়ে আরও কয়েকটি বাড়িঘরের ওপর দিয়ে হাজির হই আরেক কৃষক আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে। ঘরের সামনে দিয়ে বয়ে গেছে ছোট সরু খাল। পশ্চিম দিক থেকে এসে খালটা চলে গেছে পূর্বে, দ্বীপের শেষ সীমানার দিকে। আনোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনের খালটি পার হয়ে ওপারে উঠলেই সাইক্লোন শেলটার এবং পাটোয়ারি বাজারে যাওয়ার ইট বিছানো রাস্তা। আনোয়ার হোসেনসহ আরও কয়েকটি বাড়ি আছে খালের এপারে। ঘাটে বাধা আছে ২-৩টি ছোট নৌকা। এইসব অঞ্চলের পরিবারগুলোর প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই নৌকা থাকে। খালের এপার-ওপার যাওয়া ছাড়াও বর্ষায় বা জোয়ারের পানিতে খালবিল ডুবে গেলে এই নৌকাগুলোই যাতায়াতের ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। এই খালের পার ধরেই আমরা চলি আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে। ঘরের সামনের বারান্দায় বসি। বয়স আন্দাজ ষাটের ওপরে। তবে তিনি জানালেন বয়স তিপ্পান্ন বছর।

ঘরে ঢুকতেই চেয়ার এগিয়ে দিলেন আনোয়ার হোসেন। পাশের চৌকিতে পাতা বিছানা। না, চৌকিতেই বসি। আপনি চেয়ারে বসুন- বলি আনোয়ার হোসেনকে। আলাপ জুড়ি। দ্বীপের অন্য দশজনের মত আনোয়ার হোসেনও অস্থানীয়। আবার স্থানীয়। আসলে এ দ্বীপে যারা বসতি গড়েছে তাদের অনেকেই বাইরে থেকে নিঃস্ব হয়ে এখানে এসেছে। নদীতে সব হারানোর পর এখানে এসে ঠাঁই নিয়েছে। নদী ভাঙার পর কোথাও কোন চর জেগে উঠলে তা প্রথমে সরকারের খাস খতিয়াভূক্ত হয়। মানে জমিগুলো খাসজমি হিসাবে সরকারের খাতায় ওঠে। এরপর এই জমি প্রকৃত ভূমিহীন বা ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বন্টন করা হয়। চরের এই খাসজমি বন্দোবস্ত নিয়ে রয়েছে হাজার রকমের সমস্যা। প্রভাব, গায়ের জোর জমি পাওয়ার প্রধান উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। মদনপুরের খাসজমিতে আনোয়ারের মত অধিকাংশ ভূমিহীন আছেন অন্যের জমিতে লগ্নি। মানে ভাড়া দিতে হয় বছর ভিত্তিতে। ভূমিহীনদের জন্য এই জমির মালিক তাহলে কোন ভূমিহীনরা- প্রশ্ন থেকেই যায়।

মদনপুরের ভূমিহীন মানুষদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে মনে পড়ে সমগ্র উপকূলের ভূমিহীনদের কথা। প্রতিবছর উপকূলের অসংখ্য মানুষ নদীভাঙনে নিঃস্ব হয়। ভাঙনের তীরেই তারা অপেক্ষা করেন- চেয়ে থাকেন নদীর মাঝখানে- কখন জাগবে নতুন চর। ভাঙনে নিঃস্ব মানুষেরই পাওয়ার কথা চরের নতুন ভূমি। কিন্তু পায় কী? এ নিয়ে সরকারের দপ্তর আছে, আইন আছে, তার প্রয়োগ নেই মদনপুরের মত দ্বীপের মানুষের ক্ষেত্রে। বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগেই স্বাধীনতার প্রথম ভূমিবন্দোবস্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা আর নেই। চরের ভূমিহীনদের জমি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আনোয়ার হোসেনের চোখে ভিজে ওঠে কথা বলতে বলতে। একটা জীবন কতভাবে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে পারে- তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত এই ভূমিহীন কৃষক। জানতে চাই আনোয়ার হোসেনের কাছে, মূল বাড়ি কোথায় ছিল?

: ভোলা সদরের ধনিয়া।

: কত বছর আগে নিঃস্ব হয়েছেন?

: ২৫ বছর আগে।

: এরপর কোথায় গেলেন?

: প্রথমে ঢাকার ঝিগাতলা, তারপর কল্যাণপুর বস্তি।

: সেখানে কত বছর ছিলেন?

: ১৫ বছর।

: ঢাকায় কী করেছেন?

: রিকশা চালিয়েছি।

: আগে কী করতেন?

: নিজের যখন জমি ছিল তখন কৃষিকাজ করেছি।

: এখন কী করেন?

: জমি লগ্নি নিয়ে কৃষিকাজ করি।

পঁচিশ আর পনেরো বছরে ওলটপালট হয়ে যায় আনোয়ার হোসেনের জীবন। মদনপুর দ্বীপের পাশে কাছিয়া দ্বীপে কলোনী হচ্ছিল। সেখানে আনোয়ার হোসেনের বোনের একটি স্থান হয়। সেই সুবাদে ঢাকা থেকে এই দ্বীপে আসার সুযোগ পান আনোয়ার। পরিজনসহ চলে আসেন মদনপুরে। প্রথমে ৮০ শতাংশ জমি নিয়ে লগ্নি আবাদ শুরু করেন। এই জমির সঙ্গে যোগ হয় বাড়ির ৪০ শতাংশ জমি। বাড়ির জমির জন্য ৬ হাজার টাকা আর চাষের ৮০ শতাংশ জমির জন্য ১৩ হাজার টাকা বছরে গুনতে হয়। জমির মালিক পাই পাই করে বুঝে নেন। ফলন ভালো হোক বা না হোক, লগ্নি টাকাটা চাই মালিকের- কোনো ছাড় নেই। বর্ষায় আমন আর শুকনোয় সয়াবিন আবাদ করেন জমিতে। গত মৌসুমে ৩০ মণ সয়াবিন পেয়েছিলেন। বেচে পেয়েছেন ৩৯ হাজার টাকা। আর তার খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। ধান পেয়েছিলেন ২০ মণ। বেচেছেন ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। আর খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। লোকসান ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। ঊর্বর জমি। কিন্তু ফলনে ভাটা। বছরে বছরে নানামূখী দুর্যোগ। চরের কৃষি নির্ভর পরিবারগুলোর জীবনে নেমে আসে বিপর্যয়। তাদেরই একজন কৃষক আনোয়ার। খাতা শূন্যই থেকে যায়।

কথা বলতে বলতে সাত বছরের ছোট মেয়েটা আনোয়ার হোসেনের কোলে ওঠে। বারণ শুনছে না। না, তাকে কোলে উঠতেই হবে। ওকে কোলে নিয়েই কথা বলতে থাকেন। প্রসঙ্গ ওঠে ছেলেমেয়েদের। রুমা সবার ছোট, স্কুলে যায়। ছোট ছেলে সাদ্দাম পড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীতে। মেয়ে সুরমাকে বিয়ে দিয়েছে। আর বড় দুই ছেলে সবুজ আর রহমানও বিয়ে করেছে। আলাদা থাকে। মেয়ের বিয়েতে ২০ হাজার টাকা দেনা হয়েছেন আনোয়ার। বিয়ের ঠিক আগেই ঘরে খড় বদল করে লাগিয়েছেন টিন। তাতেও বেশ দেনা হয়ে পড়েছেন। দোকানে, মানুষের কাছে দেনা আছেন প্রায় লাখ দেড়েক টাকা। 

বেলা গড়ায়। জোয়ারের পানিতে আনোয়ার হোসেনের ঘরের সামনের ছোট্ট খালটা টইটুম্বুর। ওপারে যাবো। কিন্তু কীভাবে? আনোয়ার এগিয়ে আসেন। বৈঠা হাতে। আমরা উঠি নৌকায়। বৈঠার এক খোঁচায় ওপারের মাটিতে গলুইয়ের ধাক্কা লাগে।      

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ আগস্ট ২০১৯/তারা 

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়