ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সৈকতে অন্য স্বাদ

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৈকতে অন্য স্বাদ

বিক্রেতা গ্রাহকের সঙ্গে দাম নিয়ে কথা বলছেন, কেউ আবার ব্যস্ত মাছের আঁশ পরিষ্কারের কাজে; একইসঙ্গে চলছে কাটা-ধোয়ার কাজ। কাঁকড়া বা মাছ ফ্রাই কিংবা ফিস বারবিকিউ গ্রাহকের মনের মতো করে পরিবেশনের দায়িত্ব নিয়েছেন একজন। রান্নাও চলছে সমানতালে। চুলা থেকে নামিয়েই গরম গরম গ্রাহকের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন কেউ। কেউ সস-ড্রিঙ্কস-প্লেট এগিয়ে দেবার পাশাপাশি বসার জায়গা পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। বলছিলাম সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকতে মাছ ও কাঁকড়া দোকানিদের কথা।

একদম সৈকতেই তাজা সামুদ্রিক মাছের পসরা সাজিয়ে বসেন তারা। গ্রাহকের মনের মতো করে মাছ-কাঁকড়া ভেজে বিক্রি করেন। এর মাধ্যমেই চলে জীবন-জীবিকা। সম্ভাবনাময় কুয়াকাটা ভ্রমণপিপাসুদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে এই মাছ ফ্রাইয়ের দোকানগুলো।

এখানে ফিস বারবিকিউ এর মধ্যে জনপ্রিয় টুনা, কোরাল, ইলিশ, চিংড়ি, ছুরি, লইট্টা, চ্যাপা ইত্যাদি। পাশাপাশি জনপ্রিয় কাঁকড়া ফ্রাই। বড় থেকে ছোট অকৃতিক হরেক কাঁকড়া রাখা হয়েছে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী। আকার অনুযায়ী কাঁকড়ার দামের ভিন্নতা রয়েছে প্রতিটি দোকানে। মাছ এর দাম রাখা হয় ওজনের উপর ভিত্তি করে। এরপর গ্রাহকের সামনেই পছন্দ করা মাছ বা কাঁকড়া ফ্রাই বা বাড়বিকিউ করে দেয়া হয়। 

সন্ধ্যার পর দোকানগুলোতে ভিড় জমতে শুরু করে। উপচেপড়া ভিড়ে দোকানিদের মনের অনন্দ বৃদ্ধি পায়। ক্রেতারা খুশি হয় ভালো মাছ খেয়ে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের মিলনে এই দোকানগুলোর সামনে যেন এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমন করে চলে প্রায় রাত ২টা পর্যন্ত। আস্তে আস্তে শেষ হয়ে আসে মাছ। পর্যটক কমতে থাকে, দোকানিরা দোকান গুটিয়ে রওনা হন বাড়ির পথে। সকাল থেকে সন্ধ্যার আগ অবধি এসব দোকানের ক্রেতা থাকেন না বলেই এ পেশায় যারা জড়িত তারা অন্য সব কাজ করে উপার্জন করতে পারেন দিনের প্রথম ভাগে।

সামুদ্রিক মাছ বা কাঁকড়া ভেজে বিক্রি করে এমন ২৫টি দোকান রয়েছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। কম করে হলেও প্রতিটি দোকানে চারজন কাজ করে। সেই হিসেবে ১০০ পরিবারের প্রত্যক্ষ জীবিকা চলে এই ছোট্ট বাজার থেকে। এছাড়া এসব দোকানে কাঁকড়া ও মাছ সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আরো ২০-২৫টি পরিবার।

দোকান মালিক কাইয়ুম মিয়া জানালেন, ফিশ ফ্রাই বা কাঁকড়া ফ্রাই করে অনেকেই এখন সাবলম্বী হয়েছেন। গত এক দশক আগেও যারা কুয়াকাটায় বেড়াতে আসতো তাদের মধ্যে এসব খাবারের চাহিদা ছিল না। এখন পর্যটকদের মাঝে এ ধরনের খাবারের চাহিদা বেড়েছে। ফলে ব্যবসাও বেড়েছে তাদের। স্থানীয় অনেক বেকার এভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন।

পর্যটক সাখাওয়াত হোসেন সৌখিন জানান, সমুদ্রের পাশে বসে কাঁকড়া ফ্রাই, কিংবা মাছের বারবিকিউ খাওয়া দারুণ উপভোগ্য! খেতে যেমন স্বাদ, তেমনি পরিবেশের কারণে এই মজা দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

কুয়াকাটা তরুণ ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম রাসেল জানান, এ পেশায় জড়িয়ে অনেকেই মাদক ছেড়ে ভালো পথে জীবন পরিচালনা করছেন। তবে সমুদ্রকেন্দ্রিক আত্মকর্মসংস্থান খুঁজে নেয়া এসব মানুষের প্রতি স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সরকারের সদয় হতে হবে। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের দিনগুলোতে এদের কি অবস্থা হবে, কিভাবে তাদের ব্যবসা রক্ষা করা যাবে, কিভাবে ঝুকি কমিয়ে অর্থসংস্থান করা যায় সেই ব্যাপারে আগে থেকেই চিন্তা ও পরিকল্পনা করা এখন সময়ের দাবি।

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়