ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

মেয়েকে লেখা মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের চিঠি

জোহরা তাজউদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১০ মে ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মেয়েকে লেখা মা সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনের চিঠি

জোহরা তাজউদ্দীন ও মি‌মি

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সুযোগ্যা সহধর্মিণী। তিনি ১৯৭৭ সালে; জাতির জনকের হত্যা, জেলহত্যার মতো মর্মন্তুদ ঘটনার পর জাতির সেই ক্রান্তিকালে, যখন স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উচ্চরণ নিষিদ্ধপ্রায়, তখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের আহ্বায়িকার গুরুদায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর সততা, প্রজ্ঞা, নির্লোভ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, নিরহঙ্কার জীবনযাপন এ দেশের রাজনীতিতে বিরল। শুধু তাই নয়, দেশ স্বাধীনের শপথ নিয়ে তাজউদ্দীন আহমদের ঘর ছাড়ার পর শত ঘাত-প্রতিঘাত, সংকট, বিচ্ছেদ-বেদনাকে নীরবে সামলে পুরো পরিবারকে মমতার চাদরে ঢেকে তিনি যেভাবে এগিয়ে গেছেন তা কিংবদন্তিসম।

সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন তাঁর কনিষ্ঠা কন্যা মাহজাবিন আহমেদ মিমিকে অনেক চিঠি লিখেছিলেন। তারই একটি চিঠি আমাদের হস্তগত হয়েছে মিমির মাধ্যমে। এজন্য তাঁর প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। চিঠিতে এক মায়ের কন্যার প্রতি আপত্য স্নেহ ফুটে উঠেছে। যেখানে জোহরা তাজউদ্দীন কখনও মেয়ের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হচ্ছেন, পরামর্শ দিচ্ছেন বাংলার শাশ্বত মায়েদের মতো। আবার স্মৃতিকাতর হচ্ছেন অতীত সময়ের কথা ভেবে। চিঠিটি প্রাসঙ্গিক বিবেচনায় বিশ্ব মা দিবসে রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য প্রকাশ করা হলো।

১০/০৮/৯২

প্রিয় মিমি,

আশাকরি ভালো আছো। অনেকদিন হয়ে গেল তোমার কোনো চিঠি, খবর পেলাম না, বলে এসেছিলাম মাসে ২টা করে চিঠি লিখবে। দেশের বাহিরে অনেক দিনের জন্য অবস্থান করলে, চিঠিপত্র তোমাদের না পেলে বুঝতেই পারো মন কত বেশী খারাপ লাগে। কেইভানের কথা সবসময় মনে পড়ে, ইদানিং আমার কাছাকাছি খুব থাকত। অজিত, অমৃতা সারাক্ষণ কেইভানের রাজিবের কথা বলে। তোমাদের ব্যবসা কেমন চলছে সব লিখিও। ফারদিনের শরীর কেমন আছে, কাজের চাপে ফারদিন খাওয়ার খেয়ালই করে না।

মিমি তুমি কিন্তু মোটা হবে না, বা ওজন বাড়াবে না, খুব সাবধানে খাবে নিউট্রেসাস ফুড খাবে- কখনও শুঁটকি চেপা, ডিম ভাজা এসব খাবে না, (দেড় মাস ১দিন) তাও সামান্য পরিমাণ। জীবনটা নিয়মের মধ্যে বাঁধা। সে জীবনকে নিয়মের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত যে রাখতে পারে ভারসাম্য বজায় রেখে, সে সুখীও হতে পারে ও নিজেকে কব্জায় রাখতে পারে। তার কাছে দুঃখ বেদনা চ্যলেঞ্জ স্বরূপ। তোমাকে জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হবে। কেইভানের দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রেখ। বেশি বকাবকি কখনও করবে না, জীবনেও না। ওর মধ্যে সুপ্ত অনন্য গুণাবলীর স্তরকে ধাপে ধাপে জাগিয়ে তোলা তোমাদের এক বিরাট দায়িত্ব। কখনও যেন নষ্ট না হয়ে যায়।

মিমি তুমি অবশ্যই চিঠি লিখবে। অফিস কেমন চলছে, মাঝে মাঝে বাসায় আসবে। সুমি রুমি উর্মি আনার সাঈদ ওরা কেমন আছে, চিঠি লিখতে বলবে। আমি সুমিকে ও আনারকে লিখলাম। তোমার ও সুমির কথা বারবার মনে পড়ে। রিপি আর আমি যখন ওর বাসা থেকে আসা-যাওয়া করি, সেই পথ উঁচু-নিচু সেই রাস্তা ঢালু বাসস্ট্যান্ড, হেঁটে হেঁটে আমরা আমি সুমি হেলেদুলে হাঁটছি। মনে হয় জীবন্ত চোখের সামনে দেখছি, তোমার কাঁধে হাত ব্যগ, অন্য হাতে জিনিসপত্রের বোঝা, কত হাসাহাসি কত গল্প! কেমন করে পলকে অতীত হয়ে যায়। এখন আমি একা হাঁটি। আর সেই দিন নেই, স্মৃতির পর্দায় দৃশ্যগুলো একের পর এক ভেসে বেড়ায়, মিলিয়ে যায়; মন কেমন উদাস  হয়ে যায়!

তোমরা ভালো থেক। মাঝে মাঝে ফোন করতে পারোম আমি ভালো আছি। অজিত অমৃতা দারুণ জমিয়ে রাখে। অমৃতার কথা শুনলে তুমি হাসতে হাসতে মজে যাবে। অমৃতা রাত হলেই আমার কাছে চলে আসে, গল্প শুনে আমার কাছে ঘুমায়, ওর মা নিতে আসলে বলে ‘আমি এখন গল্প শুনে নানুর কাছে ঘুমাচ্ছি তুমি আমাকে Pik up করে নিও পরে।’ বেশি সুগার খাওয়া দেখলে বলে এটা তো হাইপার খাব না, আবার কেনডির জন্য পাগল। তখন আমি বলি অমৃতা এটা তো বেশি মিষ্টি। অমৃতা বলে এটা বেসি হাইপার না, অল্প good foof.  আমাকে দাও, সূক্ষ্ম বুদ্ধি দারুণ গজিয়েছে। মাঝে মাঝে কাঁদতে কাঁদতে বা জিদে পেসাব করে দিলে, অজিত হাসে হো হো শব্দে। শোনামাত্র অমৃতা বলবে, ‘এই অজিত কেন ফানি কোরছ আমি তো একটা বেবি না, অল্প ডাইপারে সিসি করেছি।’

এই সব মিলিয়ে দিন রাত্রি কেটে যাচ্ছে। চিঠি বিস্তারিত লিখিও। বেইজমেন্টের নিরব জায়গায় আবার লিখতে আরম্ভ করেছি। শুধু ভুতুড়ে ঘুটঘাট শব্দ কানে আসে। তোমার ভয় পাওয়ার কথা মনে পড়ে। রিপি মাঝে কাপড় ড্রায়ারে, ওয়াসারে দেয় সেই শব্দ বেশ লাগে।

আম্মা

ভূমিকা ও সংগ্রহ: স্বরলিপি

 

ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়