ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

স্বাগত: হিজরি নববর্ষ ১৪৪১

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
স্বাগত: হিজরি নববর্ষ ১৪৪১

শাহ মতিন টিপু: বাংলাদেশের আকাশে শনিবার ১৪৪১ হিজরি সনের মহররম মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ রোববার থেকে মহররম মাসের গণনা শুরু হয়েছে। আজ পয়লা মহররম।

মহররম শব্দের অর্থ সম্মানিত। ইসলামের ইতিহাসে এই মাসটি এমন কতগুলো উল্লেখযোগ্য স্মৃতিবিজড়িত, যে স্মৃতিসমূহের সম্মানার্থেই এই মাসকে মহররম বা সম্মানিত বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

১৪৪০ হিজরি সনকে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো ১৪৪১ হিজরি বর্ষের পথচলা। স্বাগত, হিজরি নববর্ষ ১৪৪১।

বাংলা ও ইংরেজি নববর্ষে আমাদের দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকলেও আরবি নববর্ষে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। যদিও মুসলিম জীবনে হিজরি সনের গুরুত্ব অনেক।

ইসলামের বিধিবিধান হিজরি সন ও চান্দ্র তারিখের সঙ্গে সম্পর্কিত। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসবসহ সব ক্ষেত্রেই মুসলিম উম্মাহ হিজরি সনের ওপর নির্ভরশীল।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে হিজরি বছরের শেষ মাস এবং শুরুর মাস অনেক মর্যাদা ও ফজিলতের মাস। শুরুর মাস মহররমের ১০ তারিখেই পালিত হয় পবিত্র আশুরা। এবারের পবিত্র আশুরা পালিত হবে ১০ সেপ্টেম্বর।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর হিজরতের বছরকে ইসলামি সন গণনার প্রথম বছর ধরা হয়েছে বলে এটি হিজরি সন নামে পরিচিত।

দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.)-এর খেলাফতের সময় ভূখণ্ড ইসলামি খেলাফতের অন্তর্ভুক্ত হয়। ঐতিহাসিক আলবিরুনির বর্ণনায়, হজরত আবু মুসা আশআরী (রা.) একটি পত্রে উমর (রা.)–কে জানান, আপনি আমাদের কাছে যেসব চিঠি পাঠাচ্ছেন, সেগুলোতে সন–তারিখের উল্লেখ নেই, এতে আমাদের অসুবিধা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা উমর (রা.) একটি সন চালুর ব্যাপারে সচেষ্ট হন।

আল্লামা শিবলি নোমানি (র.) সুপ্রসিদ্ধ আল ফারুক গ্রন্থে উল্লেখ করেন: হজরত উমর (রা.)-এর শাসনামলে ১৬ হিজরি সনের শাবান মাসে খলিফার কাছে একটি দাপ্তরিক পত্রের খসড়া পেশ করা হয়, পত্রটিতে মাসের উল্লেখ ছিল; সনের উল্লেখ ছিল না। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন খলিফা বললেন, পরবর্তী কোনো সময়ে তা কীভাবে বোঝা যাবে যে এটি কোন সনে পেশ করা হয়েছিল? অতঃপর তিনি সাহাবায়ে কেরাম ও অন্যান্য শীর্ষ পর্যায়ের জ্ঞানী-গুণীদের পরামর্শে হিজরতের ১৬ বছর পর ১০ জুমাদাল উলা মুতাবিক ৬৩৮ খ্রিষ্টাব্দে হিজরি সন প্রবর্তনের এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হিজরতের বছর থেকে সন গণনার পরামর্শ দেন হজরত আলী (রা.)। পবিত্র মহররম মাস থেকে ইসলামি বর্ষ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন হজরত উসমান (রা.)। (বুখারি ও আবু দাউদ) ।

হিজরি সন এমন একটি সন, যার সাথে সম্পৃক্ত মুসলিম উম্মাহর জীবনাচরণ। এছাড়াও রাসূল (সাঃ)-এর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ঘটনাবলী যেমন- বদর, খন্দক, তাবুক, প্রভৃতি যুদ্ধ, রাজ্যজয় এবং অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলি হিজরি সনের সাথে সম্পৃক্ত। সম্পৃক্ত ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধানও। যেমন- রোজা, হজ্ব, ঈদ, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মিরাজসহ ধর্মীয় নানান আচার-অনুষ্ঠান। হাদীসে এসেছে, তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ এবং চাঁদ দেখে রোজা ভাঙ্গা। (মুসলিম, ১/৩৪৭)

তাই একজন মুসলমানের জন্য অপরিহার্য হলো তার সকল কাজ কর্ম হিজরি সনের তারিখ অনুযায়ী সম্পন্ন করা।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, "লোকেরা আপনাকে নব চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, আপনি বলুন, তা হলো মানুষের এবং হজ্বের জন্যে সময় নির্ধারণকারী। (সূরা: বাকারা, ১৮৯)। এ আয়াত দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের হিসাব নিকাশের সুবিধার্থে চাঁদকে পঞ্জিকাস্বরূপ সৃষ্টি করেছেন।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়