ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গ্রেটা থানবার্গ যেভাবে আলোচনার জন্ম দিলেন

মনিরুল হক ফিরোজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গ্রেটা থানবার্গ যেভাবে আলোচনার জন্ম দিলেন

সংবাদমাধ্যম কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া- সবখানেই আলোচিত হচ্ছেন সুইডেনের ষোড়শীকন্যা গ্রেটা থানবার্গ। পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে বিশ্বের নজর কেড়েছেন তিনি। অনেকেই ভ্রু কুঁচকে জানতে চাইছেন- কে এই গ্রেটা? অনেকে করছেন তার অতীত সুলুকসন্ধান।

২০০৩ সালের ৩ জানুয়ারি সুইডেনের স্টকহোমে জন্ম গ্রেটার। মা-বাবা দুজনেই পেশাদার অভিনয়শিল্পী। ছোটবেলা থেকেই অ্যাসপার্গারস নামক এক ধরনের অটিজম আক্রান্ত গ্রেটা। যদিও এ নিয়ে তার দুঃখ নেই। বরং বয়স আট না পেরুতেই তিনি আগ্রহী হয়ে ওঠেন জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে।  বিশ্বের জন্য গুরুতর এই বিষয়টি নিয়ে তখন থেকেই তিনি চিন্তিত। অথচ বঙ্গের কিশোরীরা বেনী দুলিয়ে এই বয়সে পুতুল খেলে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। গ্রেটাও সমবয়সীদের সঙ্গে খেলতেন। তবে তার ভাবনা অন্য দশজনের মতো ছিল না। তিনি একটু একটু করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কারণ এবং প্রতিকার সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন। তিনি বুঝতে পারেন, প্রতিদিনের কর্মকাণ্ডে কার্বন বর্জ্য ও কার্বন নিঃসরণই এর অন্যতম কারণ। এটি কমাতে প্রথমে তিনি পরিবারকে চাপ দেন। তারপর পরিচিতদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে নেমে পড়েন।

গত বছর থেকে গ্রেটা জাতীয় পর্যায়ে কঠোর কর্মসূচি শুরু করেন। এই পর্যায়ে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পেতে শুরু করেন। ২০১৮ সালে তীব্র তাপপ্রবাহ ও দাবানলে সুইডেনের অবস্থা তখন ভয়াবহ। জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে কেন যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না- এর প্রতিবাদে তিনি স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এবং টানা তিন সপ্তাহ সুইডিশ পার্লামেন্টের সামনে বসে থাকেন। এসময় তার হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: ‘জলবায়ুর জন্য স্কুল ধর্মঘট’। এ সময় তিনি যে চুপটি করে বসে ছিলেন তা নয়। আশপাশ দিয়ে যাওয়া মানুষের মাঝে লিফলেটও বিতরণ করেছেন, যেখানে লেখা ছিল: ‘আমি এটা করছি কারণ তোমরা বড়রা আমার ভবিষ্যত ধূলিস্যাৎ করে দিচ্ছো।’ তিনি তার এই প্রতিবাদের কথা ইনস্টাগ্রাম ও টুইটারে পোস্ট করে ক্রমান্বয়ে জনমত তৈরি করতে থাকেন।

পরিবেশের জন্য স্কুল স্ট্রাইকের তার এই আন্দোলনের তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীজুড়ে। বিশ্বের কয়েকশ’শহরের হাজার হাজার স্কুল ছাত্রছাত্রী শামিল হয় এই আন্দোলনে। গত বছরের অক্টোবরে লন্ডনে, নভেম্বরে স্টকহোমে টেড এক্স কনফারেন্সে, ডিসেম্বরে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষক বৈঠক ও প্লেনারি এ্যাসেম্বলিতে উষ্ণায়নের ওপর বক্তৃতা দেন গ্রেটা। এ বছরের জানুয়ারিতে দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের মিটিংয়ে, ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপিয়ান ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কমিটির কনফারেন্সেও গ্রেটা বক্তব্য রাখেন। তবে গ্রেটার জনপ্রিয়তার সর্বোচ্চসূচক স্পর্শ পায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে তার বক্তব্যের একটি ভিডিওর মাধ্যমে।  বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে উপস্থিত শীর্ষনেতাদের সামনে দাঁড়িয়ে গ্রেটা সেদিন বলেছেন: ‘‘কিছু মানুষ বলে থাকেন আমরা সবাই মিলেই নাকি জলবায়ু সঙ্কট তৈরি করেছি। আদতে তা সত্যি নয়। যদি কোন একজন মানুষ একটি নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য দায়ী হয়, তার জন্য কোনভাবেই সবাইকে দায়ী করা উচিত নয়। শুধুমাত্র যারা অপরাধী, তাদেরই দায়ী করতে হবে। আমরা প্রত্যেকেই জানি এই জলবায়ু সঙ্কটের পেছনে দায়ী হলো কিছু মানুষ, কিছু প্রতিষ্ঠান এবং কিছু নীতি নির্ধারক, যারা কিনা নিজেরাও খুব ভালো করেই জানেন অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যে তারা পৃথিবীর কী ভীষণ ক্ষতি করে চলেছেন এবং আমার বিশ্বাস সেই মানুষদের মধ্যে অনেকেই আজ এখানে উপস্থিত আছেন। বিশ্ব নেতাদের কাছে তার আবেদন ছিল- আমাদের ঘরে আগুন লেগেছে। আপনারাও এটা নিয়ে ভাবুন, ভয় পান, যে ভয়টা আমি পেয়ে চলেছি প্রতিনিয়ত।’’

এ বছরের ১৫ মার্চ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে #FridaysForFuture ট্রেন্ডের মাধ্যমে স্কুলগুলোতে বিক্ষোভের আয়োজন করেন গ্রেটা। এদিন তার ডাকে সাড়া দিয়ে জার্মানি, বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ১০৫টি দেশের ১,৬৫৯টি স্থানে শিক্ষার্থীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে। বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলা এই কিশোরী পরিবেশবাদীর ডাকে বিভিন্ন দেশের নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার প্রায় অর্ধকোটি মানুষ পরিবেশ রক্ষার আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। পরিবেশবাদীদের মতে, বিশ্বকে অনাগত বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষায় গ্রেটার মতো কিশোর-কিশোরীর এখন খুব বেশি প্রয়োজন!

 

ঢাকা/ফিরোজ/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়