ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাঁকা ঠোঁটের রঙ্গিলা বক

শামীম আলী চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাঁকা ঠোঁটের রঙ্গিলা বক

শীতের সকাল। চারদিকে ঘন কুয়াশা। রাজশাহীর পদ্মায় নৌকায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। এসময় পদ্মার চরে হরেক প্রজাতির পাখির দেখা মিলে। পাখির কলতান ও ওড়াউড়ির দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করে! সব প্রজাতির পাখি খাদ্য খুঁজতে ব্যস্ত। বেশির ভাগই পরিযায়ী। এরা আমাদের দেশে খাবারের জন্য আসে । ২-৩ মাস অবস্থানের পর ফিরে যায় নিজ দেশে।

এই সময় সৌখিন ফটোগ্রাফাররা ব্যস্ত থাকেন পাখির ছবি তোলার জন্য। আমরাও পাখির ছবি তুলছি। বেশ কয়েক প্রজাতি হাঁস পাখির ছবি তোলার পর একটা চরের সামনে নৌকা ভিড়াই। হালকা খাবার ও বিশ্রাম সেরে আবারো নৌকায় উঠি। কিছু দূর যাওয়ার পর লক্ষ্য করি শামুকখোল পাখি খাবার খাচ্ছে। সঙ্গে আরো কিছু বক জাতীয় পাখি। সামনে যাওয়ার পর দেখলাম সোনাজঙ্গা বা রঙ্গিলা বক ওদের সঙ্গে মিলেমিশে খাবার খাচ্ছে। উত্তেজনা বেড়ে গেল। কারণ এর আগে এই বক জাতীয় পাখিটির দেখা মেলেনি, ছবিও তোলা হয়নি। নৌকায় আমারা সবাই চুপ। কারো সঙ্গে কথা নেই। আস্তে আস্তে নৌকা সামনের দিকে এগুচ্ছে। আমরাও ছবি তুলছি। বেশ কাছে যাওয়ার পর রঙ্গিলা বক পাখিটি উড়ে যায়। এরই মাঝে ভালো কিছু ছবি পাওয়ায় আনন্দে মনটা ভরে গেল।

রঙ্গিলা বক cteria গোত্রের ৯৩ সে.মি. দৈর্ঘ্যের বড় আকারের জলচর পাখি। ওজন প্রায় ৩ হাজার গ্রাম বা ৩ কেজি। দেহ সাদা ও ঠোঁট কমলা-হলুদ বর্ণের। প্রাপ্তবয়স্ক পাখির মুখ কমলা-হলুদ ও দেহের চামড়া প্রজননকালে লাল হয়। ঘাড় ও দেহের পিছনের অংশ সাদা। বুকে আড়াআড়ি কালো ডোরা থাকে। ডানার কালো পালকে সাদা ডোরা দেখা যায়। ঠোঁট নিচের দিকে একটু বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা বাদামী থেকে প্রায় লাল। পুরুষ ও মেয়ে পাখির চেহারা অভিন্ন।

রঙ্গিলা বক নদীর পাড়, জলমগ্ন মাঠ, জোয়ার-ভাটার কাদাচর ও লবণাক্ত জমিতে বিচরণ করে। সচরাচর জোড়ায় বা ছোট ছোট দলে থাকতে দেখা যায়। অগভীর পানিতে হেঁটে হেঁটে বাঁকানো ঠোঁট কাদায় ঢুকিয়ে এরা খাবার খায়। এদের খাদ্যতালিকায় রয়েছে মাছ, ব্যাঙ, চিংড়ী জাতীয় অমেরুদণ্ডী প্রাণী ও জলজ পোকা। নদীর ধারে প্রায়ই এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রজননকাল ছাড়া এরা নীরব থাকে। কিন্তু প্রজননের সময়ে নিচু স্বরে গোঙানোর মত শব্দ করে। জুলাই থেকে অক্টোবর মাস এদের প্রজননকাল। এসময় এরা নিজ দেশে পানিতে দাঁড়ানো গাছে ডালপালা, পাতা ও খড় দিয়ে মাচার মত বাসা বানায়। নিজেদের বানানো বাসায় ২-৪টি ডিম পাড়ে। নিজেরাই ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। প্রায় ২৬-২৮ দিনে বাচ্চারা বাসা ছাড়ে।

রঙ্গিলা বক বাংলাদেশের অনিয়মিত পরিযায়ী পাখি। চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগের বড় বড় নদী, জলাশয় ও উপকূলে এদের দেখা যায়। এ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, থাইল্যান্ডসহ  দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এদের বিচরণ রয়েছে।

বাংলা নাম: সোনাজঙ্গা বা রঙ্গিলা বক

ইংরেজি নাম: Painted stork

বৈজ্ঞানিক নাম:  cteria leucocephala

লেখক ছবিগুলো রাজশাহীর পদ্মার চর থেকে তুলেছেন।


ঢাকা/হাসনাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়