ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সুন্দরবনে বানরের ইভ টিজিং

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৮, ২৯ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দরবনে বানরের ইভ টিজিং

সুন্দরবন গিয়েছেন কিন্তু বানরের বাঁদরামি দেখেননি তাই হয়? কিন্তু বনের সব জায়গাতেই কি দেখা যাবে? না, এজন্য অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে করমজল অথবা হাড়বাড়িয়া। সেখানে আপনি দেখতে পাবেন অসংখ্য বানর, সঙ্গে বাঁদরামি ফ্রি!

হাড়বাড়িয়া ইকো পার্কে দেখা গেল কয়েকটি বানরের দল বসে আছে। প্রতিটি দলে ১৫ থেকে ২০টি বানর। কী পরিকল্পনা করছে তারাই জানে! গাইড জানাল ওদের দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে আসুন। কারণ দুষ্টুমি করলে ওরাও পেয়ে বসবে। যদিও অনেককে দেখছি হাত ছোঁয়া দূরত্বে চলে গেছেন। এটা-ওটা দিয়ে বানরগুলোকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করছেন। তারাও পাল্টা ভেংচি কাটছে। তবে ভয়-ডর নেই। উল্টো মানুষ দেখলে এগিয়ে আসছে। অনেক সময় শরীরের ওপরও নাকি চড়ে বসে। সে অবশ্য রতনে যখন রতন চিনে তখন এ দৃশ্য দেখা যায়। বানরগুলোর চাঞ্চল্য, ক্ষিপ্রতা, দুষ্টুমি, নাচসহ সব ধরনের আচরণ ভ্রমণপিপাসুদের খুব সহজেই মুগ্ধ করে।

সুন্দরবন ভ্রমণের কথা উঠলেই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের কথা সবার আগে মনে পড়ে। অথচ সবাই বাঘের দেখা পান না। যে দুটি প্রাণির দেখা পান, তাদের একটি হরিণ, আরেকটি বানর। যেখানে হরিণের সংখ্যা বেশি সেখানে বানরের সংখ্যাও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় ৫০ হাজার বানর সুন্দরবনে আছে। এরা সুন্দরবনে ভুষি জঙ্গলে থাকতে বেশি পছন্দ করে। ১০ থেকে ৩০টি বানর একসঙ্গে দল গঠন করে। তারপর তারা দাপিয়ে বেড়ায় বনজুড়ে। এদের প্রধান খাদ্য হলো কেওড়া, কচি গোলপাতা, ঘাস, কাকড়া, ফল প্রভৃতি। নদীর ধারে কাদাযুক্ত বন এলাকা এবং কেওড়া বৃক্ষ বানরের গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য এলাকা।

 

 

করমজলেও বানরের সংখ্যা কম নয়। অসংখ্য বানরের দাপিয়ে বেড়ানোর শব্দ বনভূমিকে নিমিষেই চঞ্চল করে তুলতে পারে। বনের অন্যান্য প্রাণিদের মধ্যে হরিণের সঙ্গে এদের সখ্য খুব বেশি। হরিণের পিঠে চড়ে বানর ঘুরছে এমন দৃশ্যও দেখা যায়। তবে এই বনের বানর খুব সাধারণ গোত্রের। শরীর প্রায় দুই ফুট। লেজ তদাপেক্ষা ছোট। এরা খুব সচেতন। মানুষের মতো অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, বর্তমানে পৃথিবীতে দুই দলের বানর রয়েছে। একটি নব বিশ্বের বানর, অন্যটি পুরাতন বিশ্বের। প্রথমটির বাস দক্ষিণ আমেরিকা। পুরাতন বিশ্বের বানরেরা আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বাস করে। নব বিশ্বের বানরেরা আকৃতিতে ছোট। বানরদের প্রজাতির মধ্যে সবচেয়ে ছোট হলো পাইগিমিই মারমোসেট। লেজ বাদে এরা প্রায় ১৪ সেন্টিমিটার। এই বানর ব্রাজিল, কলাম্বিয়া ও ইকুয়েডরে বাস করে। বাংলাদেশে ১০ প্রজাতির প্রাইমেটের মধ্যে রয়েছে ৫ প্রজাতির বানর।

সুন্দরবনে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গাইড হিসেবে কাজ করেন মোক্তার আলী। তিনি জানালেন, কিছু এলাকায় বানর দ্বারা আপনি টিজিং-এর শিকার হতে পারেন। বিশেষ করে মেয়েদের তারা নানাভাবে ভেংচি কাটে, পথ আটকে দাঁড়ায়। এজন্য সাবধান থাকা ভালো। যদি কেউ বানরকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করে তবে বিপদে পড়তে হবে। মুহূর্তেই কয়েকশ বানর এসে হামলা করতে পারে। সুতরাং সাবধান!

মেয়েদের টিজ করে কেন? জানতে চাইলে মোক্তার আলী বলেন, উজ্জ্বল রঙের কাপড় একটা কারণ হতে পারে। তাছাড়া খাবারের কারণেও হতে পারে। তবে বানর দ্বারা বিনা কারণে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নেই। এখানে বানর হলো বন্ধুর মতো।

তাই নাকি! বিস্ময় প্রকাশ করতেই মোক্তার আলী জানালেন, এরা অত্যন্ত সুকৌশলে হরিণকে বাঘের আগমন বার্তা জানিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বাওয়ালরাও তখন সাবধান হতে পারে। বাঘের সঙ্গেও তাদের বাঁদরামির শেষ নেই। বাঘ দেখলেই এরা ধপাস করে গাছ থেকে মাটিতে পড়ে নানারকম অঙ্গভঙ্গী করে আবার গাছে উঠে যায়। মূলত সুন্দরবনে বাঘের সংসারে এদের বাস হলেও বুদ্ধিতে বানরই শ্রেষ্ঠ।



ঢাকা/তারা

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়