ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

১০ ডিসেম্বর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরো ভয়াবহ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
১০ ডিসেম্বর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরো ভয়াবহ

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের শুরু থেকেই পতন ঘটতে থাকে পাকসেনাদের একেকটি ক্যাম্পের। ১০ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর জন্য পরিস্থিতি হয়ে ওঠে আরো ভয়াবহ।

এইদিনের যুদ্ধ পরিস্থিতি ছিল এ রকম যে, রাজধানী ঢাকা ছাড়া অধিকাংশ জেলা শত্রুমুক্ত। ঢাকায় পরিকল্পিত চূড়ান্ত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে আসছে মিত্রবাহিনী। সদর্পে চারদিক ঘেরাও করে মিত্রবাহিনী ঢাকার সন্নিকটে চলে আসে। মনে হচ্ছিল, চূড়ান্ত বিজয় তখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এইদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গী বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্র স্তব্ধ করে দেয়, বোমা-রকেট ছুড়ে বিধ্বস্ত করে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দর। পরাজয় অনেকটাই নিশ্চিত, তবুও আত্মসমর্পণের আগে শেষ চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠে পাকিস্তানিরা।

মিত্রবাহিনীর সামনে বাধা কেবল ঢাকার নদী। ভোর থেকে ভৈরববাজারের ৩/৪ মাইল দক্ষিণে হেলিকপ্টার করে নামানো হলো ৫৭ নং ডিভিশনের সৈন্য। সারাদিন ধরে মেঘনা অতিক্রমের সেই অভিযান চলে। প্রথম বাহিনীটা ওপারে নেমেই ঘাঁটি গেড়ে বসল। কিছুটা উত্তরে ভৈরববাজারের কাছেই তখন পাকিস্তানি সেনাদের বড় একটা মজুদ। ব্রিজটার একটা অংশ ভেঙ্গে দিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে ওঁৎ পেতে বসে থাকে হানাদাররা।

আকাশে সূর্য উঠতেই তারা দেখতে পেল হেলিকপ্টার। মিত্রবাহিনীকে নদী পার হতে দেখেও হানাদাররা ঘাঁটি ছাড়তে সাহস পেল না। হেলিকপ্টারে পার হলো কিছু সৈন্য। অনেকে আবার পার হলো স্টিমার ও লঞ্চে করে। কিছু পার হলো দেশি নৌকা করে। ট্যাংকগুলো নিয়ে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রথমে। কিন্তু সেই সমস্যাও দূর হলো এক অভাবনীয় উপায়ে। এতে স্থানীয় মানুষের সাহায্যের দরকার হল।

মিত্রবাহিনী সাহায্য চাওয়া মাত্রই ছুটে আসল হাজারো সাধারণ মানুষ। শত শত নৌকা নিয়ে এলো তারা। সে সব নৌকা বার বার মেঘনা পারাপার করল। কয়েক মাইল হেঁটে তারপর তারা পৌঁছেছিল ভৈরববাজার-ঢাকার মূল সড়কে এবং পরদিনই তারা রায়পুরা দখল করে নিল। ওদিকে তখন উত্তরের বাহিনীটাও দ্রুত এগিয়ে আসছে। ময়মনসিংহের কাছে তারা দাঁড়াল।

খবর ছিল যে, ময়মনসিংহে পাকিস্তানী বাহিনীর একটা ব্রিগেড রয়েছে, কিন্তু সে ব্রিগেডকে অনেক আগেই যে ভৈরববাজারের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে তা মিত্রবাহিনী জানত না। তাই মিত্রবাহিনী ময়মনসিংহে বড় লড়াই করার জন্য সেদিনটা ব্রহ্মপুত্র নদের ওপারে শম্ভুগঞ্জে অপেক্ষা করল।

অন্যদিকে নৌবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনার অবস্থাও ভাল নেই। কয়েকটি স্টিমার ভর্তি হয়ে পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালাতে গিয়েছিল। একটা জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়েও কিছু পাকিস্তানি সেনা সিঙ্গাপুরের দিকে যাচ্ছিল। তারা ধরা পড়ল মুক্তিপাগল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অনিবার্য। এটা বুঝতে পেরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য বাঙালীকে নেতৃত্বশূন্য করতে গোপন ষড়যন্ত্র আঁটতে শুরু করে তারা। আর একাত্তরের এইদিনে এ পরিকল্পনার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের কার্যনির্বাহী সম্পাদক সিরাজুদ্দীন হোসেন। এদিন রাত প্রায় তিনটার দিকে  শান্তিনগরের বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।  সেই যে গেলেন আর ফিরে আসেননি। লাশও পাওয়া যায়নি এই শহীদ সাংবাদিকের। পাকবাহিনীর দোসর আল বদর বাহিনী সিরাজুদ্দীন হোসেনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই শুরু করে পরিকল্পিত বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড।

 

ঢাকা/ টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়