ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

বিশ্বের রহস্যময় ৮ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

সাতসতেরো ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৪৩, ৪ আগস্ট ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বিশ্বের রহস্যময় ৮ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

মানুষের মন মাত্রই কৌতূহলী। এই কৌতূহল মেটাতে গিয়েই অতীতের বিভিন্ন নিদর্শন নিয়ে চলছে গবেষণা। কারণ প্রাচীনকালের ইতিহাস, বিভিন্ন গোষ্ঠীর রীতিনীতি এবং মানুষ সম্পর্কে জানার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। 

কিন্তু কিছু কিছু বিষয়ের রহস্যভেদ করা গেলেও এখনো কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন মানুষের কাছে রহস্যঘেরা। যুগ যুগ ধরে এগুলো মানুষকে বিমোহিত করে আসছে। এরকম রহস্যঘেরা ৮টি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে আমাদের আজকের প্রতিবেদন।

ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জ: ইংল্যান্ডের স্যালিসব্যারি রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত সমভূমি অঞ্চল। এই অঞ্চল জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল পাথরের চক্রাকার সমাহার, যা স্টোনহেঞ্জ নামে পরিচিত। এখানকার সবচেয়ে উঁচু পাথরগুলো প্রায় ৩০ ফুট লম্বা এবং একেকটির ওজন প্রায় ২৫ টন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৪-৫ হাজার বছর আগে বিস্তীর্ণ এই সমভূমিটি বিশাল এক কবরস্থান ছিল এবং সেই কবরস্থানের স্মৃতিসৌধস্বরূপ পাথরগুলো তখন থেকে এখানেই আছে। তবে বিশালাকৃতির সব পাথরের সমাহারে নির্মিত এই স্মৃতিসৌধগুলো কেন এবং কীভাবে তৈরি করা হয়েছিল তা জানা যায়নি। ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর একদল প্রত্নতাত্ত্বিক এখানকার দুইটি পাথর সম্পর্কে বিস্ময়কর এক তথ্য উদঘাটন করেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য তারা দাবি করেছেন, পাথর দুইটি পৃথিবীতে মানুষ বসবাসেরও আগে থেকে সেখানে রয়েছে। স্টোনহেঞ্জ বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর একটি। 

সুপারহেঞ্জ: ২০১৬ সালে স্টোনহেঞ্জের ঠিক দুই মাইল দূরে বিজ্ঞানীরা আরো একটি রহস্যময় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন খুঁজে পান। প্রথমে ধারণা করা হয়, এটিও পাথরে নির্মিত। তারা এই স্মৃতিসৌধের নাম দেন ‘সুপারহেঞ্জ’। কারণ এর বিস্তৃতি স্টোনহেঞ্জের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। কিন্তু পরের বছর প্রত্নতাত্ত্বিকগণ আবিষ্কার করেন, সুপারহেঞ্জ আসলে পাথর নয় বরং বৃত্তাকারে সাজানো বিশালাকৃতির গাছের গুঁড়ি। এগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ২৪৫০ অব্দে এখানে বসানো হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, এই স্তম্ভগুলো বসানোর অল্প কিছুদিন পর তুলে ফেলা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর পুনরায় আবার বসিয়ে দেওয়া হয়। স্টোনহেঞ্জের তুলনায় সুপারহেঞ্জ আরো বেশি রহস্যে ঘেরা এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

আমেরিকান স্টোনহেঞ্জ: আমেরিকার নিউ হ্যাম্পশায়ার রাজ্যের সালেমে অবস্থিত রহস্যময় এক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এটি। শিলা এবং পাথরে নির্মিত হওয়ার কারণে নিদর্শনটিকে ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের সঙ্গে তুলনা করে ‘আমেরিকান স্টোনহেঞ্জ’ও বলা হয়। স্থানীয়দের কাছে এটি ‘মিস্ট্রি হিল’ বা ‘রহস্য পাহাড়’ নামে পরিচিত। ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের তুলনায় এটি আকারে অনেক ছোট। বয়সের দিক থেকেও খুব বেশি প্রাচীন নয়। ছোটবড় বিভিন্ন পাথরে নির্মিত অনেকটা গুহার মতো দেখতে জায়গাটি ১৯৩৭ সালে উইলিয়াম গুডউইন নামে এক ব্যক্তি আবিষ্কার করেন। গুডউইন যে জমিটি কিনেছিলেন সেখানে আগে থেকেই এটি ছিল। যদিও অনেকেই মনে করেন, গুডউইন নিজেই এই পাথুরে গুহা নির্মাণ করেছিলেন। তবে প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে রহস্যময় এই স্থানটির কিছু অংশ নির্মাণ করা হয়। জায়গাটি সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু জানা যায়নি। 

সার্পেন্ট মাউন্ড: আমেরিকার ওহাইয়ো রাজ্যের এক মালভূমিতে অবস্থিত এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি বিশ্বের বৃহত্তম সাপের এক প্রতিমূর্তি। এর উচ্চতা ৩ ফুট এবং এটি ১৩০০ ফুট লম্বা। গবেষকদের ধারণা, খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০ অব্দে স্থানীয় আদিবাসীরা এটি নির্মাণ করে। তবে কোন সভ্যতার লোকজন এটি তৈরি করেছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। প্রত্নতাত্ত্বিক ব্র্যাড লিপারের মতে, প্রায় ১০০০ বছর পূর্বের খাস আমেরিকান আদিবাসীদের নির্মিত কিছু প্রতিমূর্তির সঙ্গে সার্পেন্ট মাউন্ডের বেশ মিল রয়েছে। 

কোস্টা রিকার পাথুরে গোলক: উনিশ শতকের শেষের দিকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা কোস্টা রিকার ডিকুইস ডেল্টা অঞ্চলে ৩০০টি পাথুরে গোলক আবিষ্কার করেন। এখানকার সবচেয়ে বড় গোলকটির পরিধি ৮ ফুট এবং ওজন প্রায় ১৬ টন। যদিও বিশাল বিশাল পাথর কেটে এই গোলকগুলো তৈরি করা হয়েছিল কিন্তু কারা এবং কেন এই রহস্যময় গোলক নির্মাণ করেছিলেন তা জানা যায়নি। অনেকে মনে করেন, ভীনগ্রহী প্রাণীদের মাধ্যমে এসব গোলক পৃথিবীতে এসেছে। আবার কেউ কেউ ধারণা করেন, বিশাল এই গোলকগুলো আটলান্টিসের হারিয়ে যাওয়া নগরীর ধ্বংসাবশেষ।  

আটলান্টিসের হারানো নগরী: গ্রিক ঐতিহাসিক প্লেটো খ্রিষ্টপূর্ব ৩৬০ অব্দে তার এক লেখায় আটলান্টিস নামে একটি দ্বীপ নগরীর উল্লেখ করেন। যদিও এই নগরীরর হদীস এখনো অজানা। ধারণা করা হয়, ১০ হাজার বছর আগে দ্বীপ নগরীটি সাগরের নিচে তলিয়ে যায়। যুগে যুগে অনেকেই নগরীটি আবিষ্কার করার দাবি করেছেন। অনেকের মতে, বাহামা অথবা কিউবার আশেপাশে সাগরের নিচে নগরীটি এখনো আছে। সাম্প্রতিককালে অনেকে দাবি করছেন, মাইক্রোনেশিয়ার আশেপাশে পানির নিচে লুকিয়ে আছে হারিয়ে যাওয়া আটলান্টিস নগরী। যদিও নগরীটির কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়নি এবং এটির অস্তিত্ব কেবল প্রাচীন ইতিহাসেই রয়েছে। তাই অন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের চেয়ে এটি নিয়ে রহস্য আরো বেশি। 

তুতেন খামেনের মমি রহস্য: খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০০ অব্দে নয় বছর বয়সি তুতেন খামেন মিশরের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। কিন্তু মাত্র ১৭ বছর বয়সে এই কিশোর রাজার মৃত্যু হয়। খুব স্বল্প সময়ের জন্য রাজত্ব করলেও তুতেন খামেন প্রত্নতাত্ত্বিক রহস্যেগুলোর মধ্যমণি হয়ে রয়েছেন। তার মৃত্যু নিয়েও রহস্যের শেষ নেই। তার মমিকৃত শরীর সমাধিস্থ করার পর রহস্যজনকভাবে সেখানে আগুন লেগে যায়। প্রত্নতাত্ত্বিকদের ধারণা, তার মৃতদেহ খুব তাড়াতাড়ি এবং বিশৃঙ্খলভাবে কবর দেওয়া হয়েছিল। মমিকার্যে ব্যবহৃত সুগন্ধি তেল এবং অক্সিজেনের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে সেখানে আগুন লাগে।

মিশরের পিরামিড: প্রত্নতাত্ত্বিক রহস্য নিয়ে আলোচনা হবে আর মিশরের পিরামিড সেখানে থাকবে না তা কি হয়? মিশরের অসংখ্য পিরামিডের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন এবং বৃহত্তম পিরামিডটি গিজায় অবস্থিত। এটি ফারাও খুফুর সমাধিস্থল হিসেবে নির্মিত হয়েছিল। ফারাও খুফু খ্রিষ্টপূর্ব ২৫৮৯-২৫৬৬ অব্দ পর্যন্ত মিশরের অধিপতি ছিলেন। মিশরের পিরামিডগুলোর সবচেয়ে বড় রহস্য হচ্ছে এগুলোর বিশাল আকৃতি। তবে সাম্প্রতিককালে গিজার বিখ্যাত পিরামিডের মধ্যে রহস্যজনক এক কুঠুরির সন্ধান পাওয়ার পর পিরামিড সম্পর্কিত রহস্য যেন আরো ঘনীভূত হয়ে উঠেছে।

ঢাকা/ফিরোজ/মারুফ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়