ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বলছি...

ড. মো. ফরজ আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২০  
একাত্তরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা বলছি...

২৬ মার্চ, ১৯৭১। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছেন। শহর, বন্দর, গ্রামে একই ধ্বনি ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ স্বাধীনতা সংগ্রামে দেশ উত্তাল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিরীহ বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাদের আক্রমণ থেকে কেউ রেহাই পাচ্ছে না। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ, জ্বালাও পোড়াও, নারী নির্যাতন ও লুটতরাজের খবর প্রচার হচ্ছে। এই আক্রমণের জবাব দিতে এবং দেশ স্বাধীন করতে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।

৮ম শ্রেণীর ছাত্র। বয়স ১৩-১৪। হালকা পাতলা গড়ন। বয়স এবং শারীরিক গঠনের কারণে কেউই আমাকে যুদ্ধে যাওয়ার উৎসাহ দিলেন না। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। যুদ্ধের প্রাক-প্রস্তুতি হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া অপরিহার্য। তত দিনে পার্শ্ববর্তী বন্ধুরাষ্ট্র ভারত সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। নৌকা ভাড়া করে দলে দলে তরুণ দামাল ছেলেরা প্রশিক্ষণের জন্য ভারত যাচ্ছে। আমি কোনোভাবেই তালিকাভূক্ত হতে পারছি না। যেখানেই যাচ্ছি একই কথা- এখনও যুদ্ধে যাওয়ার বয়স হয়নি। মামা ও গ্রামের কয়েকজন কলেজছাত্র মিলে ভারতে যাওয়ার জন্য একটি দল গঠন করলো। লুকিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকলাম। তারা কখন, কোন নৌকায় রওনা হয়। সময়টা ছিল জুলাই-আগস্ট মাস। দলটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌকা পথে মানকিয়ার চর বর্ডার হয়ে ভারতে প্রবেশ করবে। ইতোমধ্যে বড় একটা নৌকাও ভাড়া হয়ে গেছে। নৌকার পেছনের অংশে পাটাতনের নিচে খালি জায়গা। আমার মত ছোট আকারের দেহ সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়। দুপুর ১২টার দিকে নৌকা পাল তুললো। সকলের চোখে ধুলা দিয়ে পাটতানের নিচে ঢুকে পড়লাম। রওনা হলাম মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে, ভারতের উদ্দেশ্যে।

তখন নদী পথে ভারত যাওয়া অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। পাকবাহিনী বুঝতে পারলে নিশ্চিত মৃত্যু। বাহাদুরাবাদ ঘাট ছিল মরণ ফাঁদ। এই স্থান অতিক্রম করতে গিয়ে অনেকেরই সলিল সমাধি হয়েছে। পাকিস্তানি আর্মিরা এখান থেকে সার্চ লাইটের মাধ্যমে নৌকার গতিপথ পর্যবেক্ষণ করতো। সন্দেহ হলে গুলি করে নৌকা ডুবিয়ে দিত। সুতরাং এ অংশটি অতিক্রম করতে পারলে ধরে নেওয়া হতো জীবন বাঁচলো এবং ভারতে প্রবেশ করা নিশ্চিত হলো।

রাত প্রায় তিনটা। হঠাৎ আল্লাহু আকবর ধ্বনি। বুঝতে পারলাম, আমাদের নৌকা বাহাদুরাবাদ ঘাট অতিক্রম করেছে। দীর্ঘ সময় পাটাতনের নিচে নিজেকে লুকিয়ে রাখার বেদনার অবসান ঘটিয়ে বীরদর্পে আমিও পাটাতনের উপরে উঠে আল্লাহ আকবর ধ্বনি দিলাম। আমাকে দেখে সবাই অবাক! জানতে চাইলো আমি কীভাবে তাদের সাথী হলাম? অনেকেই আমার মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার ইচ্ছার প্রশংসা করলেও মামা খুব মন খারাপ করলেন। কারণ যুদ্ধ করার জন্য আমার শারীরিক যোগ্যতা সম্পর্কে মামা খুবই সন্ধিহান ছিলেন। কিন্তু পিছু হটার আর সুযোগ নেই। অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম মানকিয়ার চর বর্ডারে। বর্ডারজুড়ে মানুষ আর মানুষ। বাংলাদেশ থেকে দলে দলে হিন্দু শরণার্থী এসে জনসংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। রাস্তার দুই পাশে তাবুর মধ্যে তাদের বসবাস। বৃষ্টিতে তাবুর ভিতর কাঁদা পানি, বসবাসের একেবারেই অযোগ্য। তার মধ্যে গাদাগাদি হয়ে শরণার্থীদের থাকতে হচ্ছে। অন্য কোনো উপায় নেই। সে যে কি করুণ দৃশ্য ভাষায় প্রকাশ করা যায় না!

আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো ময়নটিলা ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ গ্রহণের যোগ্যতা নির্ধারণের জন্য এটি প্রাথমিক বাচাইয়ের স্থান। টিলার উচ্চত এতো বেশি যে, একবার সমতলে নামলে উপরে ওঠার সাহস হারিয়ে যায়। যাচাই বাছাইয়ের সময় আবার একই বিপত্তি। আমাকে নিয়ে টানাটানি। এতো অল্প বয়স এবং হালকা, পাতলা শরীর নিয়ে যুদ্ধ করার সক্ষমতা নেই মর্মে বিচারকদের ধারণা। বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো অসম্ভব বিবেচনায় দলের সবার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলো। হুকুম হলো, ভারতের দার্জিলিং জেলার শিলিগুড়িস্থ পানিঘাটা ট্রেনিং ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ে যাওয়ার জন্য। কখনও স্থলপথে বাস, ট্রাক আবার কখনও জলপথে লঞ্চ, স্টিমারে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে উপস্থিত হলাম পানি ঘাটা ট্রেনিং ক্যাম্পে। প্রশিক্ষণের ক্যাম্পটি ছিল ৭নং সেক্টরের আওয়াতাধীন। ক্যাম্পে তাবু নির্মাণ করা হয়েছে। এক তাবুতে ৫-৭ জনের থাকার ব্যবস্থা। তাবুর মধ্যে মাটিতে খেজুরের পাটি, তার উপর কম্বলের বিছানা। কয়েকটি কোম্পানিতে বিভক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

কোম্পানির বরাদ্দ পেয়ে লাইনে দাঁড়ালাম। প্রত্যেককে দেওয়া হলো দুটি গেঞ্জি, দুটি হাফপ্যান্ট, দুটি গামছাসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। জিনিসগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে পাঠানো অসম আকৃতির। ক্যাম্পটি কাটাতারের মজবুত বেড়া দ্বারা ঘেরা। জনবসতিহীন পাহাড়ি এলাকা। হিংস্র বন্য প্রাণী এবং দু্ষ্কৃতিকারীদের যৌথ আক্রমণে এলাকাটিতে বসবাস ছিল অত্যন্ত ঝুকিঁপূর্ণ। দল ছাড়া একা চলাফেরা নিরাপদ নয় বিধায় ক্যাম্পের বাইরে একা যাওয়া নিষেধ ছিল। ক্যাম্পে খাওয়া দাওয়ার আইটেম ছিল অদ্ভুত! কিসের মাংস বুঝতাম না। অন্যদেশের সাহায্য যা আসতো সেটাই খেতে দিতো। সেটা হালাল না হারাম জিজ্ঞাসা করার সুযোগ ছিল না। তবে নির্ভেজাল এবং তাজা চা পাতার ঘ্রাণ এখনও ভোলা যায় না। সুস্বাদু চা-ই মূলত ক্ষুধা নিবারণ করতো। পেছনে হাফ লিটারের একটি মগ সব সময় বাঁধা থাকতো। ৩-৪ ঘণ্টা পরপর চা পান করতাম। খুব স্বল্প সময় নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকতো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে খাবার শেষ করতে না পারলে না খেয়েই ট্রেনিং- উপস্থিত হতে হতো। সকাল ৭টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত ট্রেনিং চলতো

ট্রেনিং শুরু হতো পিটি দিয়ে। একেক দিন একেক রকম পিটি হতো। এর মধ্য বল খেলা ছিল অন্যতম। ক্যাম্প থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে বিরাট মাঠ। প্রতি পক্ষে ১০০ জন করে খেলোয়াড়। হাত দিয়ে হোক বা পা দিয়ে, গোল দেওয়া চাই। যে দল হারবে তাদের প্রত্যেককে শাস্তিস্বরূপ বিজয়ী দলের একজনকে কাঁধে করে ক্যাম্পে নিয়ে যেতে হতো। মজার বিষয় ছিল, শারীরিক গঠন পাতলা এবং ছোট হওয়ার কারণে জিতি বা হারি প্রতিবারই অন্যের কাঁধে উঠে ক্যাম্পে যেতাম। পর্যবেক্ষকরা লক্ষ্য করতেন একজনের কাঁধে অন্য আরেকজন আছে কিনা। তারপর নাস্তা খেয়ে দৌড় দিতাম প্রাকটিক্যাল ট্রেনিং এর জন্য। ভারতের অভিজ্ঞ ও হিংস্র প্রকৃতির শিখ ও গারো সৈনিকেরা ট্রেনিং প্রশিক্ষক ছিলেন। তাদেরকে আমরা ওস্তাদ বলে সম্বোধন করতাম। রাইফেল, এসএমজি (স্টেনগান) এলএমজি এবং অন্যন্য সমমানের অস্ত্র সম্পর্কে বাস্তব এবং তাত্ত্বিক ট্রেনিং হতো। রাত্রের অন্ধকারে অস্ত্রের যন্ত্রাংশ খুলে আবার অস্ত্র সারাই করার ট্রেনিং সত্যি অনেক জটিল ছিল। মাইন, গ্রেনেড, এক্সপ্লোসিভ ইত্যাদি ব্যবহারের যথাযথ জ্ঞান অর্জনে রীতিমত ক্লাস করতে হতো। উল্লেখ করা যায়, সে সময়ে পাকিস্তানি আর্মি বিশ্বের মধ্যে একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী বলে সুপরিচিত ছিল। স্বল্প সময় ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ পাকিস্তানি আর্মিদের চ্যালেঞ্জ দেওয়া এবং যুদ্ধের ভয়াবহতা মোকাবিলা করা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অবশ্যই হিম্মতের বিষয় ছিল। প্রশিক্ষকরা বেশীরভাগ হিন্দি ভাষায় কথা বলতো। স্বল্প পরিমাণ ইংরেজির ব্যবহার ছিল। প্রথম দিকে হিন্দি ভাষা বুঝতে না পারার কারণে উল্টাপাল্টা কাজ করতাম। এ জন্য মাশুলও কম দিতে হয়নি। ওস্তাদদের চড়-থাপ্পর লাথি লেগেই থাকতো। পরে অবশ্য হিন্দি ভাষা বুঝতে পারা এবং বলা দুটোতেই পারদর্শী হয়েছিলাম। ভাষা বুঝতে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রতি কোম্পানিতেই পূর্ব অভিজ্ঞ একজন ট্রেইন্ড বাঙালি ওস্তাদ থাকতো।

সপ্তাহের একদিন ছুটি থাকলেও ঐ দিন ব্যস্ত রাখতো লেক থেকে বালির বস্তা ওপরে টানাটানির মাধ্যমে। অবশেষে ট্রেনিং সমাপ্ত। প্রত্যেকের জন্য বরাদ্দ হলো ফ্রিডম ফাইটার নাম্বার (এফ এফ নং)। রওনা হলাম তরঙ্গপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশ্যে যেখান থেকে আমাদের প্রত্যেকের নামে অস্ত্রের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। তরঙ্গপুর ক্যান্টনমেন্টে অবস্থানকালে কিছু অভিজ্ঞতা এবং ঘটনার উল্লেখ না করলেই নয়। এখানে অনেক মুক্তিযোদ্ধার উপস্থিতির কারণে প্রয়োজনীয় খাবার, বাসন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ অপ্রতুল ছিল। খাওয়ার বাসন হিসেবে ব্যবহৃত হতো কলাপাতা। তার স্বল্পতায় ব্যবহৃত হতো কলাগাছের ডোঙ্গা (কলাপাতা নয়)। কিছু দিনের অবস্থানে আশেপাশের কলাগাছের অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। বাসন হিসেবে আনা হলো আখের রস জ্বাল করার কড়াই। কড়াইয়ের মধ্যে ২০/২৫ জনের ভাত ও তরকারি মিশিয়ে রাখা হতো। কড়াইয়ের চারপাশে পা রাখার জায়গা খালি থাকতো। আমরা কড়াইয়ের মধ্যে উঠে খাওয়া শুরু করতাম। খাওয়া শেষ হলে নেমে আসতাম এবং একইভাবে বাকিরা অবশিষ্ট খাবার খেতো। কয়েকদিনের মধ্যে তরঙ্গপুরে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের আহাজারি উপলব্ধি করলাম। বর্ডারে যুদ্ধ চলছে। ভারতীয় বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে রেখে যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। আর পাকিস্তানি বাহিনীর এম্বুশের আওতায় কত মুক্তিযোদ্ধা যে প্রাণ হারিয়েছে তা মনে হলে এখনও গা শিউরে উঠে। আমাদের অবশ্য বর্ডারে যুদ্ধ করতে যেতে হয়নি। পাকিস্তানি বাহিনীকে মোকাবিলা করার প্রয়োজনে দ্রুত দেশের অভ্যন্তরে আসতে হয়েছে। মানকিয়ার চর হয়ে নদীপথে আবার নিজ জেলা সিরাজগঞ্জে। থাকার জন্য প্রথম আস্তানা হলো যোগাযোগবিহীন একটি চর এলাকায়। রাত্রি যাপন করতাম কখনও গোয়ালঘরে খড় বিছিয়ে কখনও খোদ গৃহস্থের  শোয়ার ঘরে। দ্রুত স্থান বদল করতাম যাতে শত্রু বাহিনী আমাদের অবস্থান জানতে না পারে। এতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করার পরও রাজাকার আল বদরের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বিমানবাহিনী আমাদের নৌকা লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। লক্ষ্য ভ্রষ্টের কারণে সে যাত্রা আমরা বেঁচে যাই।

নভেম্বর মাস, পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে তিনদিক থেকে সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুর থানা সদরে অবস্থানরত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করি। আমরা থানার পশ্চিম দিক থেকে গ্রুপ কমান্ডার মো. আব্দুস সাত্তারের নেতৃতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। সকল গ্রুপের সমন্বয়ের দায়িত্বে ছিলেন মো. লুৎফর রহমান (মৃত)। জনাব সাত্তার অত্যন্ত সাহসী বটে, তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ অতি সাহসিকতার পরিচয় বহন করতো। আমরা খোলা মাঠে অবস্থান নিয়ে ক্রলিং করে গুলি ছুড়তে ছুড়তে সামনে অগ্রসর হতে থাকি। সংরক্ষিত বাঙ্কার থেকে পাক বাহিনী আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। এতে সহযোদ্ধা চাঁন মিয়া এবং মো. আমজাদ হোসেন ও আবুল কাসেম গুলিবিদ্ধ হয় এবং মারা যায়।সারাদিনব্যাপী যুদ্ধ চলমান থাকায় প্রয়োজনীয় গোলাবারুদের স্বল্পতা দেখা যায়। ফলে শেষ চেষ্টা করেও থানা দখল মুক্ত করা সম্ভব হয়নি। সুরক্ষিত বাঙ্কারে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অবস্থানের কারণে যুদ্ধে ততটা সফলতা না আসলেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বুঝতে পারে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের ঘিরে ফেলেছে। তারা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং পরবর্তী সময়ে বিশেষ পাহাড়ায় পর্যায়ক্রমে জেলা সদরে পালিয়ে যায়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সিরাজগঞ্জ শহরের অদূরে শৈলমারী-ভাটপিয়ার নামক স্থানে আরও একটি ভয়াবহ যুদ্ধে অবতীর্ন হই। এখানেও সকাল থেকে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে প্রাণ যায় সোহরাবসহ কয়েকজন সহযোদ্ধার। উল্লেখ্য জনাব আমির হোসেন ভুলু (মৃত) সে সময় সিরাজগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের অধিনায়ক ছিলেন।

১৪ ডিসেম্বর সংঘাত ছাড়াই সিরাজগঞ্জ শহর শত্রু মুক্ত হয়। দীর্ঘ সংগ্রাম ও নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর আসে ১৬ ডিসেম্বর। সকলের বাধ ভাঙ্গা আনন্দ। তবে এ আনন্দ অর্জিত হয় লাখ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আর এর সাথেই সমাপ্ত ঘটে মহান মুক্তিযুদ্ধের। বিজয় পরবর্তী কিছুদিন কাটলো জেলা সদরের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে সহযোদ্ধাদের সাথে। অতঃপর বাংলাদেশ ও ভারতের তত্বাবধানে পরিচালিত যৌথ বাহিনীর নিকট সিরাজগঞ্জ ম্যালেশিয়া ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দিয়ে রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। গ্রামের অনেক লোক আমাকে দেখতে এলো। আদর করল আর প্রশংসা করলো আমার কিশোর বয়সের সাহসিকতা ও বীরত্বের।  জীবনের শেষ লগ্নে উপনীত হয়ে স্মরণ করছি সহযোদ্ধাদের। তাদের মধ্যে জানা অজানা অনেকই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। স্বাধীনতা এসেছে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে। এদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস বাঙালির গৌরব ও বিরত্বের ইতিহাস।

লেখক: পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়