ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যে নারী পৃথিবীর যাবতীয় দুর্ভোগের জন্য দায়ী

জাহিদ সাদেক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০৮, ১১ ডিসেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৪:১৬, ১১ ডিসেম্বর ২০২০
যে নারী পৃথিবীর যাবতীয় দুর্ভোগের জন্য দায়ী

‘‘প্যানডোরা’স বক্স’’ বা ‘প্যানডোরার বাক্স’ শব্দগুচ্ছের সঙ্গে আমরা সবাই কম-বেশি পরিচিত। অনেকেই বলি, ‘প্যানডোরার বাক্স খুলো না’। খুললেই যেন বেরিয়ে আসবে অভিশপ্ত কিছু! অথবা উৎফুল্ল হয়ে বলি, ‘এই নাও তোমার প্যানডোরার বাক্স’। অর্থাৎ গুপ্তধন বা উপহার।

আমেরিকান কেরিটেজ ডিকশনারিতে প্যানডোরা’স বক্স-এর সরল অর্থ দেওয়া হয়েছে ‘আশার ভাণ্ডার’।  তবে প্যানডোরা হলেন গ্রিক মিথলজির একটি চরিত্র। গ্রিক মিথ অনুসারে মর্তের প্রথম নারী প্যানডোরা। এককভাবে ‘প্যানডোরা’ অর্থ সমস্ত উপহার। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকায় বলা হয়েছে, অগ্নি দেবতা এবং দেবতাদের রাজা জিউসকে ফাঁকি দিয়ে মানুষের কল্যাণের জন্য, মানুষকে ভালোবেসে প্রমিথিউস স্বর্গ থেকে আগুন চুরি করে মর্ত্যকে উপহার দিয়েছিলেন। কেননা সেসময় পৃথিবীতে মানুষ আগুনের ব্যবহার জানতো না। মানুষ তখন কাঁচা খাবার খেত, বৃষ্টি-শীতে অনেক কষ্ট পেত। দেবতাদের ধারণা ছিল মানুষ আগুন দিয়ে খালি ধ্বংসই করবে। কিন্তু মানবপ্রেমী প্রমিথিউস মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য মানুষকে আগুন উপহার দেন। এ কারণে দেবতারা বিশেষ করে জিউস ভীষণ রেগে যান। জিউস প্রমিথিউসকে বন্দি করে রাখেন পাহাড়ের চূড়ায় এবং শকুন পাঠিয়ে দেন। শকুন ঠুকরে ঠুকরে ক্ষত-বিক্ষত করতো প্রমিথিউসকে। আবার পরের দিন সেই ক্ষত পূরণ হয়ে যেত এবং শকুন এসে আবার ঠুকরে খেত। এভাবেই মানব প্রেমের শাস্তি মুখ বুজে সহ্য করতেন প্রমিথিউস। প্রমিথিউসকে শাস্তি দেওয়ার পর এবার জিউস মানব জাতিকে শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকেন। কিন্তু এবার তিনি  মানুষকে শাস্তি দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয় নেন।

জিউস দেবী আফ্রোদিতি ও তার স্বামী হেফুস্থসকে ডেকে পাঠান। হেফুস্থস ছিলেন স্বর্গের মৃৎশিল্পী। জিউস হেফুস্থসকে কাদা ও পানি দিয়ে আফ্রোদিতির ন্যায় একটি মূর্তি বানাতে নির্দেশ দেন। হেফুস্থস সেভাবেই অসম্ভব সুন্দরী এক নারী মূর্তি তৈরি করে দেন। এবার জিউস মূর্তিকে প্রাণ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে জিউসের নির্দেশে দেবতা অ্যাপোলো সেই নারী মূর্তিকে দিলেন সংগীত, দেবী এথেনা দিলেন কাপড়, হারমিস দিলেন প্ররোচনা। সবশেষে দেবরাজ জিউসের স্ত্রী হেরা সেই মূর্তিকে উপহার দিলেন তার অনন্য বৈশিষ্ট্য কৌতূহল। এবার সেই মূর্তির নাম রাখা হলো প্যানডোরা। যার অর্থ সর্ব উপহার। সব মিলিয়ে প্যানডোরা পরিণত হলেন অপরূপ সুন্দরী এক রমণীতে।

এবার জিউস প্যানডোরাকে পৃথিবীর এক জঙ্গলে পাঠিয়ে দিলেন। জায়গাটি বর্তমানে ‘গ্রিস’ নামে পরিচিত। পৃথিবীতে পা রাখলেন প্রথম নারী। প্যানডোরা সুন্দরভাবে সেজে জঙ্গলে একা বসে ছিলেন। সে সময় জঙ্গলের পথ ধরে যাচ্ছিলেন এপিমেথিউস। প্যানডোরার অতিমানবীয় রূপ বিমোহিত করলো তাকে। এপিমেথিউস ছিলেন মানবপ্রেমী প্রমিথিউসের ভাই। তিনি ছিলেন অত্যন্ত শান্ত স্বভাবের। যদিও প্রমিথিউস তাকে নিষেধ করেছিল দেবতাদের কোনো উপহার গ্রহণ করতে। কিন্তু প্যানডোরাকে দেখামাত্র তার প্রেমে পড়ে যান এপিমেথিউস।

পরে এদের দু’জনের বিয়ে হয়। বিয়েতে প্যান্ডোরাকে দেবরাজ জিউস উপহার দেন এক অপূর্ব বাক্স। কিন্তু নিষেধ করে দেন এটি খুলতে। বলে দেন যত দিন এটি বন্ধ থাকবে তত দিন সুখে-শান্তিতে এপিমেথিউসের সঙ্গে প্যানডোরা ঘর করতে পারবে। দেবরাজ জিউসের নিষেধাজ্ঞা পরাস্ত হয় দেবরাণী হেরার দেওয়া উপহার কৌতূহলের কাছে। একদিন এপিমেথিউস যখন বাড়ির বাইরে ছিলেন তখন প্যানডোরা খুলে ফেলেন বাক্সটি। সঙ্গে সঙ্গে বাক্স থেকে বেরিয়ে আসে দুঃখ-কষ্ট, রোগ- শোক, লোভ, ঘৃণা এবং ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীতে। তবে ঢাকনা খুলবার পর এই দুরবস্থা দেখে দ্রুত সেটি পুনরায় লাগিয়ে রাখে প্যানডোরা। তখন বাক্সে ‘আশা’ বন্দি হয়ে পড়ে। এভাবেই পৃথিবীর প্রথম ও একমাত্র সর্বগুণে গুণান্বিত স্বর্গীয় মানবী পৃথিবীর জন্য নিয়ে আসে নারকীয় দুর্ভোগ।

আজকের পৃথিবীতে যে রোগব্যাধি, ঘৃণা, ক্রোধ, লোভ-লালসা মানব সমাজে রয়েছে গ্রিক মিথ অনুসারে এ সবই মর্তে্যর প্রথম নারী প্যানডোরার নারীসুলভ কৌতূহলের ফসল। এজন্য প্যানডোরাকে বলা হয় জাগতিক অনিষ্টের জন্মদাত্রী। ‘যদিও বাস্তবতায় প্যানডোরার বাক্সকে মিথ মনে হয়। তবে এর কিছু বিষয় আমরা বাস্তব জীবনে দেখতে পাই’- মন্তব্য করেছেন গ্রিক মিথলজিস্ট হ্যারিসন। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা আমাদের ক্রিয়াগুলো অপরিবর্তনীয় এবং দুঃখজনক পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারি তখন আমরা প্রায়শই প্যান্ডোরার বাক্সটি খুলি। তবে আমার মনে হয় না, কারও প্যান্ডোরার বাক্সটি খোলা উচিত। তবে গল্পে প্যানডোরার বাক্স বহুল পরিচিত হলেও মূল কাহিনীতে আসলে বাক্স ছিল না। ছিল একটা জার। বাক্স বা জার যা-ই হোক না কেন এর অন্তর্নিহিত ভাবনা আমাদের শিক্ষা দেয়।

সূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা ও উইকিপিডিয়া

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়