ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

একাত্তরে যেভাবে পালিত হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০০:২২, ১৭ মার্চ ২০২১  
একাত্তরে যেভাবে পালিত হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন

একাত্তরের ১৭ মার্চ দিনটি ছিল বুধবার। সেদিন ছিল বঙ্গবন্ধুর ৫২তম জন্মদিন। অন্যদিকে লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ষষ্ঠদশ দিবস। সমগ্র জাতি এইদিনে কৃতজ্ঞচিত্তে বঙ্গবন্ধুর শুভ জন্মদিনে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।

সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং দেশি-বিদেশি সাংবাদিকগণ জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে জমায়েত হন।

এইদিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে আলোচনা শেষে দুপুরে ধানমণ্ডির বাসভবনে ফেরেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনাকালে এক সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনার ৫২তম জন্মদিনে আপনার সবচেয়ে বড় ও পবিত্র কামনা কী?’ উত্তরে বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা স্বভাবসিদ্ধ কণ্ঠে বললেন, ‘জনগণের সার্বিক মুক্তি।’

এরপর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপনকালে তিনি ব্যথায় ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না- আমার জন্মদিনে মোমের বাতি জ্বালি না, কেকও কাটি না। এ দেশে মানুষের নিরাপত্তা নাই। আপনারা আমাদের জনগণের অবস্থা জানেন। অন্যের খেয়ালে যে কোন মুহূর্তে তাদের মৃত্যু হতে পারে। আমি জনগণেরই একজন, আমার জন্মদিনই কি, আর মৃত্যুদিনই কি? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু।’

এ দিকে আজ ছিল প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় দিনের বৈঠক। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া এক ঘণ্টার এ বৈঠকেও তৃতীয় কোন ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না। স্বল্প স্থায়ী বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বের হয়ে আসলে সাংবাদিক ও আলোকচিত্রীরা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরেন এবং একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন।  জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলার নাই। আরও আলোচনা হতে পারে, তবে বৈঠকের সময় এখনও ঠিক হয় নাই। আজও হতে পারে, আগামীকালও হতে পারে।’

আজকের আলোচনা-বৈঠক এত সংক্ষিপ্ত হলো কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নিরুত্তর থেকে বঙ্গবন্ধু মৃদু হেসে নীরব থাকেন। তখন এক বিদেশি সাংবাদিক তাকে প্রশ্ন করেন, আমরা কী এই হাসি থেকে কিছু অনুমান করে নিতে পারি। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আপনার মুখেও তো মৃদু হাসির রেখা। আমি জাহান্নামে বসেও হাসতে পারি।’

অপর এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, আপনি কি সুখী না অসুখী? বঙ্গবন্ধু জবাবে বলেন, ‘আমি তো বলেছি নরকে বসেও আমার চিত্তে সুখের অভাব ঘটবে না। আমার চেয়ে বেশি সুখে আর কে আছে ? সাত কোটি মানুষ আজ আমার পেছনে পাহাড়ের মতো অটল। আমার জনগণ আমাকে যা দিয়েছে তার তুলনা নাই।’

এক বিদেশি সাংবাদিক বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করেন, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া আপনার বাসভবনে আসার পরিবর্তে আপনি প্রেসিডেন্ট ভবনে গেলেন কেন? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভবনটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতেই অবস্থিত। আর বাংলাদেশের সব ঘরই আমার ঘর।’

অপর এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমাদের সব কিছু আছে। বাংলার অবারিত মাঠ, উদার আকাশ, উর্বর পলির নদী, সোনালি ফসল পাট, ইক্ষু, তামাক, চা, মিঠাপানির মাছ, সুপেয় জলাধার, বিরাট কর্মক্ষম জনশক্তি- সব আছে আমাদের। আমরা চাই শুধু ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের অবসান। আমরা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বেঁচে থাকতে চাই।’

এদিকে অন্যান্য দিনের মতো আজো বিক্ষুব্ধ ঢাকা নগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সভা এবং শোভাযাত্রার মাধ্যমে তাদের প্রতিবাদ বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। সভা-শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী মানুষের স্রোত এসে মিলিত হতে থাকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। শহীদ মিনারে উপস্থিত জনতার মিছিল আজো জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শপথ গ্রহণ করে।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আওয়ামী লীগ অফিসে এক দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘায়ু কামনা করা হয়। এছাড়া বায়তুল মোকাররমে আসরের নামাজের পর বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশেষ মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়। পূর্ববাংলা বিড়ি শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ হতে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সুদীর্ঘ সংগ্রামী জীবনের ওপর এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢাকা/টিপু

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়