ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘৩৩ বছরের জীবন’ থেকে মুক্তি চান রফিকুল

সুজন মোহন্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০৫, ১৫ এপ্রিল ২০২১   আপডেট: ১৬:২৫, ১৫ এপ্রিল ২০২১
‘৩৩ বছরের জীবন’ থেকে মুক্তি চান রফিকুল

তেপ্পান্ন বছর ছুঁই ছুঁই, বসে থাকেন সকাল থেকে বিকাল। কখন মানুষ আসবে দু’এক টাকা দেবে, সেই অপেক্ষায় থাকেন। কী রোদ কী বৃষ্টি সব কিছুকে উপেক্ষা করে বসে থাকেন তিনি। বলছিলাম কুড়িগ্রামের প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলামের কথা। 

তিনি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের ফারাজি পাড়া গ্রামের মৃত কাশেম আলীর ছেলে। তিনি কৃষক পরিবারের সন্তান।

সরেজমিনে রফিকুল ইসলামের কাছে গিয়ে দেখা যায়, একটি পলিথিন পেতে তার উপর তিনি বসে আছেন, সঙ্গে একটি ছাতা, বাজারের ব্যাগ এবং কিছু পয়সা। কথা হলো তার সঙ্গে। 

তিনি বলেন, ‘১৯৮৮ সাল থেকে আমি এখানে ভিক্ষা করছি, ৩৩ বছর হলো এই পেশার সঙ্গে জড়িত। বয়স হচ্ছে এখন আর বেশিক্ষণ বসে থেকে ভিক্ষা করতে পারি না। যদি কেউ আমারে হুইল চেয়ার দিতো, তাহলে আশেপাশের বাজারগুলোতে ভিক্ষা করতে পারতাম।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ভিক্ষা করতে আজকাল আর ভালো লাগে না। কারো সহযোগিতা পেলে ছোট্ট কোনো মুদি দোকান দিতাম অথবা অটোরিকশা চালাতাম বসে থেকে। ’

রফিকুল ইসলাম জানান, ছোটবেলায় তার এক ভীষণ জ্বর হয়। সেইসময় তার বাম পাশের এক পা ও একহাত অবশ হয়ে যায়। এরপর স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলেও কর্মক্ষম হয়ে পড়েন তিনি। এরপর থেকে তিনি কুড়িগ্রাম-নাগেশ্বরী মহাসড়কের চন্ডিপুর বাজার সংলগ্ন স্থানে বসে ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন সেই কিশোর বয়স থেকেই। টানা ৩৩ বছর ধরে একই স্থানে বসে ভিক্ষা করার কারণে তার বসার স্থানটি এখন ফকিরের ‘তকোয়া’ নামে পরিচিত। 

স্থানীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন, ‘রফিকুল দীর্ঘ দিন ধরে এই একটি স্থানে বসে ভিক্ষাবৃত্তি করছেন। তিনি বাড়ি থেকে যাওয়া-আসার জন্য প্রতিদিন রিকশায় ৪০ টাকা খরচ করেন। তাকে যদি কেউ একটি হুইল চেয়ার দিয়ে সহযোগিতা করতো, তাহলে রফিকুল বিভিন্ন হাট-বাজারে গিয়েও ভিক্ষা করতে পারতো। অথবা, তাকে যদি কেউ কিছু টাকা দিতো, তাহলে তার ইচ্ছা অনুযায়ী ছোট দোকান করেও জীবন চালাতে পারতেন।’

স্থানীয়দের কথায় আরও জানা যায়, কোনো কাজকর্ম করতে না পারায় ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি বেছে নেন ভিক্ষাবৃত্তি। সেই থেকে তিনি এখনো একই স্থানে বসে চালিয়ে যাচ্ছেন তার জীবন সংগ্রাম। তার পরিবারে রয়েছেন বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও মানসিক ভারসাম্যহীন একটি মেয়ে।

খোলা স্থানে বসে ভিক্ষা করার সময় ঝড়-বৃষ্টি আসলে সেদিন আর তার ভিক্ষা করা হয় না। অনাহারে কাটাতে হয় সেইদিন। প্রতিদিন গড়ে ১০০-১৫০ আয় করেন, যা দিয়ে চলে ৪ জনের ভরণপোষণ। প্রতিবন্ধী রফিকুল ইসলাম সমাজ সেবার আওতায় প্রতি তিন মাস পর পর পান প্রতিবন্ধী ভাতা। তবে, সে ভাতা গত এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। ভাতা বন্ধ কেন, এর কী কারণ, কিছুই বলতে পারেন না তিনি। 

রফিকুল ইসলাম এখন এত বছরের ভিক্ষাবৃত্তি থেকে মুক্তি চান। হতে চান একজন মুদি দোকানদার অথবা অটোরিকশা চালক। সেই ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত একটি হুইল চেয়ারেরও আকুতি জানান তিনি। 

কুড়িগ্রাম/মাহি 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়