ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সবার জন্য হোক নাজাতের ফয়সালা

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৮, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ১৪:১৯, ৪ মে ২০২১
সবার জন্য হোক নাজাতের ফয়সালা

করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত পৃথিবী। অশান্ত বিশ্ব। মানুষ পার করছে অস্থির ও সংকটময় সময়। এসবের ভেতর আমাদের মাঝে হাজির হয়েছে মহিমান্মিত মাহে রমজান। অফুরন্ত রহমত ও কল্যাণের রমজান। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের রমজান। ইতোমধ্যে আমরা রহমত, মাগফিরাতের ২০ দিন পার করেছি। প্রবেশ করেছি নাজাতের দশকে। আজ ২১তম রোজা। তবে রহমত ও মাগফিরাতের দশক শেষ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, এখন আর রহমত বা মাগফিরাত পাওয়া যাবে না। মহান আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের দরজা সবসময় বান্দাদের জন্য খোলা থাকে। তিনি যে কোনো সময়, যে কোনো বান্দাকে রহমতের চাদরে আবৃত করে ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতের ফয়সালা করে থাকেন। আর রমজানের শেষ দশকে এ পরিমাণটা আরো অনেক বেশি হয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরাম এই সময়টুকুকে খুব গুরুত্ব দিতেন। রমজানের অন্যান্য দিনে তাঁরা যে আমলগুলো করতেন, শেষ দশকে এসে তার পরিমাণ অনেক বেড়ে যেত। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশক আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সকলকে জাগিয়ে দিতেন। (সহীহ বুখারি ও মুসলিম) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন- এর অর্থ হলো,  তিনি এ দিনগুলোতে স্ত্রীদের থেকে আলাদা হয়ে যেতেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রাতগুলোতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোনো রাতে দেখা যেত না। যেমন হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি এ রাতে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সেহেরি গ্রহণ করতেন। (সহীহ মুসলিম) আর এই দশদিন তিনি মসজিদে ইতিকাফ করতেন। প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের হতেন না।

তা ছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দশকটিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দশক বলেছেন। এই দশকেই পাপিদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এই দশকের পাঁচটি বেজোড় রাতের কোনো একটিতে শবে কদর তথা হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ রাত রয়েছে। তাই রমজানের এই শেষ দশকটি অপরিসীম গুরুত্বপূর্ণ, ফজিলত ও বৈশিষ্ট্য মণ্ডিত। সুতরাং এই দশকের প্রতিটি মুহূর্তকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে মূল্যায়ন করতে হবে। কেননা জাহান্নাম থেকে মুক্তি মানবজীবনের সবচেয়ে বড় সফলতা। যে ব্যক্তি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেল এবং জান্নাত লাভ করলো সেই প্রকৃত সফল। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সেই সফল এবং পার্থিবজীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়। (সুরা আলে ইমরান: আয়াত ১৮৫) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, রমজানের প্রতিটি দিবারাত্রিতেই আল্লাহর দরবারে অসংখ্য লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেয়া হয় এবং রমজানের প্রতি দিবারাত্রিতে প্রত্যেক মুসলমানের একটি দোয়া কবুল হয়। (আততারগিব)

রমজানের এই শেষ দশকে আল্লাহ তায়ালা অগণিত বনি আদমকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। তবে বিভিন্ন নেক আমলের পরিবর্তে বা বিনিময় হিসাবে। যেমন রোজাদারকে ইফতার করানো, অধীনস্থদের কর্তব্য হালকা করে দেয়া ইত্যাদি তার অন্যতম। আমাদের উচিত, শেষ দশকের এ সময়টাতে বেশি বেশি আমলে-ইবাদতে কাটানো। রোজাদারকে ইফতার করানো, অসহায়কে সাহায্য করা, বেশি বেশি দান-সদকা করা। তবেই আমরা নাজাতের আশা করতে পারি। সবার জন্য হোক নাজাতের ফয়সালা।

লেখক: অর্থ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়