ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

রমজানের আমল চালু থাকুক বছরজুড়ে 

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪০, ৬ মে ২০২১  
রমজানের আমল চালু থাকুক বছরজুড়ে 

তাকওয়া অর্জন এবং আত্মশুদ্ধির মাস রমজান। এই মাস আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য এক বিশেষ উপহার। কেননা রমজানে মুমিন মুসলমানরা সিয়াম সাধনায় ব্রত হয়। তারা অভ্যস্ত হয় ধৈর্য ও সহনশীল জীবনে। নিবিষ্ট হয় পুণ্যকাজ ও তাকওয়া অর্জনে। এ ছাড়াও রমজান আমাদের আত্মসংযম, জীবনে পরিমিতবোধ এবং নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা দেয়। মিথ্যা-পরনিন্দা, সুদ-ঘুষ, অন্যায়-অনাচারসহ যাবতীয় পাপকর্ম থেকে বিরত থাকারও শিক্ষা দেয়। সুতরাং রমজানের আমল এবং নেক কাজ যেগুলো করা হয় তা চালু রাখতে হবে বছরজুড়ে।

জামাতে নামাজ

রমজান মাসে জামাতে নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে ওঠে। এ আমলটি সারা বছরই ধরে রাখতে হবে। কারণ জামাতে নামাজ পড়ার সওয়াব অনেক বেশি। এ ব্যাপারে হাদিসেও জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। জামাতে নামাজ আদায়ের অশেষ সওয়াব সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জামাতে নামাজ পড়ার ফজিলত একা পড়ার চেয়ে ২৭ গুণ ঊর্ধ্বে। (বুখারি ও মুসলিম) তিনি আরও বলেছেন, একজন লোক ঘরে নামাজ পড়লে একটি নেকি পান, তিনি ওয়াক্তিয়া মসজিদে পড়লে ২৫ গুণ, জুমা মসজিদে পড়লে ৫০০ গুণ, মসজিদে আকসায় পড়লে ৫০ হাজার গুণ, আমার মসজিদে অর্থাৎ মসজিদে নববীতে পড়লে ৫০ হাজার গুণ এবং মসজিদুল হারাম বা কাবার ঘরে পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাবেন। (ইবনে মাজা, মিশকাত)

উত্তম ব্যবহার

রমজান হলো সংযমের মাস। এই মাসে মুমিনের চারিত্রিক গুণাবলির বিকাশ ঘটে। আর মানুষ তার উত্তম ব্যবহার এবং চরিত্র দ্বারা পরিবারসহ সমাজ অলোকিত করে।
চারিত্রিক সৌন্দর্য দ্বারা মানুষের ভালোবাসা এবং সম্মান লাভ করা যায়। তাই উত্তম ব্যবহারের এই গুণ সারা বছরই চালু রাখতে হবে। এ বিষয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে কথা প্রকৃতই মিথ্যা এবং অসঙ্গত, যে ব্যক্তি তা বলা এবং আলোচনা করা পরিত্যাগ করে- তার জন্য জান্নাতের কিনারায় স্থাপনা নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি সঙ্গত কারণ থাকা সত্ত্বেও ঝগড়া-বিবাদ পরিত্যাগ করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে বাসস্থান নির্মিত হয়। যে ব্যক্তি বাক সংযম, মিষ্টভাষণ এবং সত্য কথা প্রভৃতি গুণ দ্বারা নিজের চরিত্র সৌন্দর্যমণ্ডিত করে, তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাসস্থান নির্মিত হয়। (মিশকাত)

দান-খয়রাত

মাহে রমজানে মুসলমানদের মধ্যে দান-খয়রাতের অভ্যাস গড়ে ওঠে। এই আমলটি সারা বছর চালু রাখতে হবে। হাদিসে আছে, দান-সদকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে। (সহিহুল জামে) ধন-সম্পদের প্রকৃত মালিক আল্লাহ তায়ালা। অধিকাংশ মানুষ দান-খয়রাত করতে চায় না। মনে করে এতে সম্পদ কমে যাবে। তাই সম্পদ সঞ্চিত করে রাখতেই সর্বদা সচেষ্ট থাকে। অথচ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মানুষ বলে ‘আমার সম্পদ আমার সম্পদ’ অথচ তিনটি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত সম্পদই শুধু তার। যা খেয়ে শেষ করেছে, যা পরিধান করে নষ্ট করেছে এবং যা দান করে জমা করেছে- তাই শুধু তার। অবশিষ্ট সম্পদ সে ছেড়ে যাবে, মানুষ তা নিয়ে যাবে। (সহিহ মুসলিম)

উল্লিখিত আমলগুলা ছাড়াও নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কোরআন, তাওবা-ইস্তেগফারসহ যাবতীয় কল্যাণকর আমল রমজান পরবর্তী ১১ মাসে চালু রাখতে পারলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ সুন্দর হবে কোনো সন্দেহ নেই। ব্যক্তি জীবনের এ সব আমলের নূর পরিবার ও সমাজ আলোকিত করবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।

নির্বাহী সম্পাদক : মাসিক ইসলামী বার্তা ও অর্থ সম্পাদক : বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম
 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়