ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ: নেপথ্যে কী? 

খালিদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৪, ৬ মে ২০২১   আপডেট: ১৯:২৬, ৬ মে ২০২১
গেটস দম্পতির বিচ্ছেদ: নেপথ্যে কী? 

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা এক সময়ের শীর্ষ ধনী ও মাইক্রোসফট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং তার স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস-এর বিচ্ছেদ। গত মঙ্গলবার এক যৌথ টুইট বার্তায় গেটস দম্পতি এই বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন।

এই ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্বের শীর্ষ ধনীর কাতারে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে প্রথম দিকে অবস্থান করা এই দম্পতির দাম্পত্যজীবনের ইতি ঘটলো। কী এমন ঘটলো যে দীর্ঘ ২৭ বছরের সংসারজীবন হঠাৎ করেই শেষ করে দিতে হলো! এ যেন এখন কোটি টাকার প্রশ্ন! বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন। যদিও এ বিষয়ে কৌতূহলীদের আশ্বস্ত হওয়ার মতো উত্তর এখনও মেলেনি। টুইট বার্তায় তাঁরা শুধু জানিয়েছেন: ‘অনেক চিন্তা-ভাবনার পরে এবং অনেক চেষ্টার পরে আমরা আমাদের বিবাহিত জীবনের ইতি টানার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের সম্পর্ক আর সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না।’

বিখ্যাত এই দম্পতি বিচ্ছেদের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ জানাননি। তবুও এ নিয়ে গুঞ্জনের শেষ নেই। এবং এটাই স্বাভাবিক। কারণ বর্তমান বিশ্বের চতুর্থ শীর্ষ ধনী বিল গেটস। কম্পিউটার সফটওয়্যার তৈরির প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতার পদ ছাড়াও বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কো-চেয়ার হিসেবেও আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ফাউন্ডেশনের জনহিতৈষী কার্যক্রমের জন্য মেলিন্ডা গেটস বিশ্বব্যাপী পরিচিত মুখ। তবে বিচ্ছেদের পরও তারা উভয়েই পূর্বের মতোই ফাউন্ডেশনের কাজ একসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বিল গেটসের মোট সম্পদের পরিমান ১৪৬ বিলিওন মার্কিন ডলার। বিল ও মেলিন্ডা বিবাহবন্ধনে যখন আবদ্ধ হন তত দিনে বিল গেটস বিশ্বের অন্যতম তরুণ বিলিওনিয়ারের তালিকায় নাম লিখিয়েছেন। ১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে তিনি যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট। এরপর মাত্র ৩১ বছর বয়সে বিলিওনিয়ার হয়ে ওঠেন তিনি। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী থাকাবস্থায় তার দেখা হয় মেলিন্ডার সঙ্গে। কয়েক বছর প্রেম করে তারা ১৯৯৪ সালের প্রথম দিন বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। এরপর তারা প্রতিষ্ঠা করেন বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। যেখানে তাঁরা ইতোমধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছেন বিশ্বের জনস্বাস্থ্য, স্যানিটেশন, টিকাদানসহ বিভিন্ন জনহিতকর কার্যক্রমে।

সেই কাজেই কি তবে গোল বাঁধলো নাকি সম্পদ নিয়ে মতের অমিল? এখনও সবই ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন। নিজেদের ব্যস্ততায় একে অপরকে সময় দিতে না পারাই গেটস দম্পতির বিচ্ছেদের কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও বিগত কয়েক বছর তাদের সম্পর্কের টানাপড়েন চলছিল বলে তাদের ঘনিষ্ঠ দুজনের বরাতে নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে। বেশ কয়েকবার তাদের সম্পর্ক ভাঙনের মুখোমুখী হলেও তারা তা রক্ষা করতে পেরেছেন। এ কারণে পরিবারকে বেশি সময় দেওয়ার জন্য বিল গেটস মাইক্রোসফটসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন। তাহলে প্রশ্ন থেকে যায়- এরপরও কেন তিনি সংসার টিকিয়ে রাখতে পারলেন না?

বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস-এর বিচ্ছেদের অর্থনৈতিক পরিণতি কী হবে এমন প্রশ্ন অনেকের কপালে চিন্তার রেখা তৈরি করেছে। অনেকেই মনে করছেন ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ হতে চলেছে এটি। সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষ ধনীর তালিকায় উপরের দিকে থাকা জেফ বেজোসের বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা থেকে এমন ধারণা করছেন তারা। ২০১৯ সালে সেই সময়ের শীর্ষ ধনী আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস ও তার স্ত্রী ম্যাকেনজি স্কট-এর বিচ্ছেদ ঘটে। তাদের এই বিচ্ছেদ আমাজনের মালিকানাও দুই ভাগে ভাগ করে দেয়। মুহূর্তেই ম্যাকেনজি হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী। এরপর জনহিতৈষী কার্যক্রমে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে হয়ে ওঠেন বিশ্বের অন্যতম মানবহিতৈষী ব্যক্তি।

ওয়াশিংটনের আইন অনুযায়ী বিচ্ছেদের সময় স্বামী-স্ত্রী উভয়েই তাদের পারিবারিক সম্পত্তির সমান ভাগ পান। অর্থাৎ নিয়মানুযায়ী গেটস পরিবারের যে সম্পত্তি রয়েছে তা উভয়ের মধ্যে সমানভাবে ভাগ হয়ে যাবে। এভাবে ভাগ হলে ইতোপূর্বে রেকর্ড গড়া জেফ বেজোসের স্ত্রীর প্রাপ্ত ৩৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি সম্পদ পাবেন মেলিন্ডা। তবে বেজোসের সম্পদের অধিকাংশই আমাজনের মধ্যে থাকলেও বিল গেটসের সম্পদের ভাগ-বাটোয়ারা হবে আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ, বর্তমানে বিল গেটসের মোট সম্পদের মাত্র ২০ শতাংশ রয়েছে মাইক্রোসফট-এর মধ্যে। এছাড়াও রিয়েল স্টেট, বিদ্যুৎ, আবাসন ব্যবসাসহ কয়েক ডজন কোম্পানিতে তার মালিকানা রয়েছে। গত বছর মাইক্রোসফটের পরিচালনা বোর্ড ছাড়ার পূর্বেই তিনি প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ মালিকানা বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের নামে করে দিয়েছেন। তবে সেখানে তার মালিকানা কতখানি তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ্যে আনা হয়নি।

এ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কিন্তু উত্তর মিলছে না কোনো কিছুরই। আদালতে বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়লেও তাদের সম্পদের চুক্তি কেমন হবে তা জানতে এখনো অপেক্ষা করতে হবে। তবে নিঃসন্দেহে এটি পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল বিচ্ছেদ হতে চলেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।  
 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়