ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

রোজার শেষটাও হোক শুরুর মতো

এমদাদুল হক তাসনিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২২, ৭ মে ২০২১   আপডেট: ১৬:২১, ৭ মে ২০২১
রোজার শেষটাও হোক শুরুর মতো

মাহে রমজানের গুরুত্ব, মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য বিবেচনা করে রজব মাস থেকেই শুরু হয় রমজানের প্রস্তুতি। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিবছর রজব মাস এলেই রমজানুল মুবারকের জন্য প্রস্তুতি নিতেন। হাদিসে এসেছে, রজব মাস আগমন করলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া করতেন- ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি রাজাবা ওয়া শাবানা ওয়া বাল্লিগনা রামাদান।’ অর্থাৎ ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের জন্য বরকত দান করুন আর রমজান পর্যন্ত আমাদের জীবিত রাখুন।’ (বায়হাকি, তাবরানি, মুসনাদে আহমদ)

প্রখ্যাত হাদিসবিশারদ মোল্লা আলী কারি রহ. এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘হে আল্লাহ! রজব ও শাবান মাসে আমাদের ইবাদত-বন্দেগিতে বরকত দান করুন এবং রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিয়াম-কিয়াম তথা রোজা ও তারাবির তাওফিক দান করুন। (মেরকাত)

শুরুর কথাগুলো এ জন্য বলা, রমজানের প্রস্তুতি আমরা আগ থেকেই গ্রহণ করি এবং রোজাও গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করি। অনেক আগ্রহ-উদ্দীপনার সঙ্গে নামাজ-কালাম, তারাবি, জিকির-আজকারসহ আরো বিভিন্ন আমলে মশগুল থাকি। রমজানের শুরুটা হয় খুব ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে। শেষে এসে অনেকটাই ম্লান হয়ে যায় আমাদের আমল। রমজান যত শেষে দিকে যায় মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা কমতে থাকে। তারাবির নামাজে এই চিত্র আরো বেশি প্রকট হয়। এটা সাধারণত হয় রমজানের শেষে ঈদের কেনাকাটার চাপ, বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি, ছুটি কাটানোর পরিকল্পনা, কর্ম ব্যস্ততা বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি কারণে। অথচ এমন হওয়া উচিত নয়। আমরা রমজান বরণ করেছিলাম যে উৎসাহে ও আবেগে, শেষও করতে হবে ঠিক সেভাবে।

আমাদের সমাজে রোজার শুরুতে অনেকেই রোজা রাখেন। বাচ্চাদেরকেও দেখা যায় রোজা রাখতে। বয়স্ক লোকেরাও রোজা রাখেন। কিন্তু রোজার কষ্ট অনুভব করে কিংবা স্বাস্থ্য নষ্ট হবে ভেবে অনেকেই রোজা ভেঙে ফেলেন। বিশেষত বাচ্চাদের রোজা রাখতে দেন না অনেক অভিভাবক। অথচ একটু কষ্ট হলেও তারা রোজা রাখতে পারেন। আরো নানা কারণে-অকারণে প্রাপ্তবয়স্করা রোজা ভেঙে ফেলেন। শৈশব থেকে রোজা রাখতে অভ্যস্ত নয় বিধায় এখন রোজা রাখতে পারেন না- সমাজে এমন লোকের সংখ্যাও কম নয়। যে কারণে রমজানের শুরুর অবস্থাটা শেষে এসে থাকে না।

আমাদের সমাজের অনেকের কাছেই রোজা আসে ঈদ নিয়ে। রোজার শুরু থেকেই ঈদের হিসাব করেন। তবে রোজার শেষে ঈদের কেনাকাটা আরো বেড়ে যায়। ঈদের প্রস্তুতির জন্য অনেকে খোদ রোজাকেই বিসর্জন দেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের কোনো খবর থাকে না। ইফতারের কোনো গুরুত্ব দেয়া হয় না। শপিংয়ে অহেতুক দীর্ঘসময় ব্যয় করা হয়। অথচ রমজানের আসল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন ও ক্ষমা লাভ। আর শেষ দশক হচ্ছে রোজাদারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও ক্ষমা লাভের মোক্ষম সময় হলো এ দশক। অথচ রমজানের শুরুতে যে ভাবগাম্ভীর্য সবার মাঝে দেখা যায়, শেষ দিকে এসে তা এতোটাই বিলীন হয়ে যায়, অনেকের আচরণ দেখে মনেই হয় না এটা রমজান।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভাষ্যমতে, ‘যে রমজান পেল, অথচ গুনাহ মাফ করিয়ে নিতে পারল না, সে চরম হতভাগা।’ (আবু ইয়ালা, দায়লামি, ফিকহুস সুন্নাহ) আল্লাহ যেন আমাদের হতভাগাদের কাতারে শামিল না করেন। ঈদের প্রস্তুতি ও প্রাসঙ্গিক ব্যস্ততায় যেন রমজানের উদ্দেশ্য ব্যাহত না হয়। রমজানের শেষটাও হোক শুরুর মতো। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।  

নির্বাহী সম্পাদক: মাসিক ইসলামী বার্তা এবং অর্থ সম্পাদক : বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম


 

ঢাকা/তারা

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়