ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

এভারেস্টের চূড়ায় শ্বাসরুদ্ধকর যত রেকর্ড 

ইকরামুল হাসান শাকিল  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০০, ১ জুন ২০২১   আপডেট: ২০:০৯, ১ জুন ২০২১
এভারেস্টের চূড়ায় শ্বাসরুদ্ধকর যত রেকর্ড 

বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। এর স্থানীয় নেপালী নাম ‘সাগরমাতা’। তিব্বতি নাম ‘চোমোলুংমা’। এভারেস্টের নতুন উচ্চতা ৮,৮৪৮.৮৬ মিটার বা ২৯ হাজার ৩২ ফুট। ২০২০ সালে নেপাল ও চীন যৌথভাবে এভারেস্টের উচ্চতা বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়। পাঁচ থেকে ছয় কোটি বছরের প্রাচীন এভারেস্ট প্রতি শতাব্দীতে ৫০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ ভারতীয় এবং ইউরেশিয়া টেকটনিক প্লেটের ধাক্কা। এভারেস্ট নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। ১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখেন এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে। সেই রেকর্ডের পর থেকে আজ পর্যন্ত অনেক রেকর্ডের জন্ম দিয়েছে মানুষ। চলুন জেনে নেই তেমন কিছু রেকর্ডের কথা।  

প্রথম নারী

এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগের এভারেস্ট আরোহণের ২২ বছর পর প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্ট আরোহণ করেন জাপানের জুনকো তাবেই। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, তিনি আরোহণের সময় তুষারধ্বসে বরফের নিচে চাপা পড়েছিলেন। এবং ৬ মিনিট অচেতন ছিলেন। সেখান থেকে তাকে টেনে বের করে নিয়ে আসা হয়। মৃত্যুর এতো কাছে চলে গিয়েও জুনকো ভয়ে পিছিয়ে আসেননি। তিনিই প্রথম নারী হিসেবে ‘সেভেন সামিট’ অর্থাৎ সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া আরোহণ করেন।

প্রথম নারী এভারেস্ট জয়ী জাপানের জুনকো তাবেই

বেশিবার আরোহণ

সবচেয়ে বেশিবার এভারেস্ট আরোহণের রেকর্ড নেপালী শেরপা কামি রিতার। তিনি ২৫ বার পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে উঠেছেন। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তিনি কাজটি করেছেন। তার পরেই আছেন ডেভ হন। আমেরিকান এই পর্বতারোহী ১৫ বার এভারেস্ট জয় করেছেন। 

দ্রুততম সময়ে আরোহণ

এভারেস্টের বেসক্যাম্প থেকে চূড়ার দূরত্ব সোজাসুজি প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার। পর্বতারোহীরা এই পথে ওঠা-নামা করতে কয়েকটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। এর কারণ চূড়ান্ত আরোহণের আগে শরীরকে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চয় করা। ২০০৪ সালে পেম্বা দর্জি শেরপা এই পথ পাড়ি দেন মাত্র ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিটে। তবে ২০১৭ সালে নেপালের সুপ্রিম কোর্ট তার এই রেকর্ড নাকচ করে দেন এবং গিনেজ বুক থেকে তার নাম মুছে ফেলা হয়। ফলে ২০০৩ সালে লাকপা গেলু শেরপার ১০ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডের রেকর্ডটি গিনেজ বুকে টিকে যায়।  

২৮ মে ২০২১, রোববার বিকেল ৩:১০ মিনিটে দ্রুততম সময়ে নারী হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে উঠে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন হংকংয়ের সাং হিন হাং। ৪৪ বছর বয়সী এই নারী পেশায় শিক্ষিকা। সামিট করতে তার সময় লেগেছে ২৫ ঘণ্টা ৫০ মিনিট। 

মেডিটেশন 

এভারেস্টের চূড়ায় সেই ২৯ হাজার ফুট উচ্চতায় ডেথ জোনে মেডিটেশন। অবাক হচ্ছেন? ২০১১ সালে নেপালের ভক্ত কুমার রায় এই আশ্চর্য রেকর্ড গড়েন। পর্বতারোহীরা যেখানে অল্প কিছু সময় অবস্থান করে দ্রুত নেমে আসেন, সেখানে তিনি ৩২ ঘণ্টা অবস্থান করেন। এর মধ্যে তিনি ২৭ ঘণ্টা মেডিটেশন করেন এবং পুরো সময়ের মধ্যে ১১ ঘণ্টা কৃত্রিম অক্সিজেন ব্যবহার না-করেই ছিলেন!

এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে প্রথম এভারেস্ট জয়ী

সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয়

জাপানের পর্বতারোহী ইউইছিরো মিউরা ২০১৩ সালে ৮০ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করেন। অবাক ব্যাপার হলো তিনি হার্ট সার্জারির মাত্র চার মাস পরেই এই অসাধ্য কাজটি করেন। এভারেস্ট চূড়া থেকে নেমে আসার সময় ক্লান্ত হয়ে পড়লে তাকে ৬,৫০০ মিটার উচ্চতা থেকে হেলিকপ্টারে বেসক্যাম্পে নামিয়ে আনা হয়। তিনি ১৯৭০ সালে এভারেস্ট থেকে স্কি করেও নেমে এসেছিলেন। তিনি ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন, তিনি যদি বেঁচে থাকেন তাহলে ২০২২ সালে ৯০ বছর বয়সে আবার এভারেস্টের চূড়ায় উঠবেন।  

সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট জয়

সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট জয় করেন আমেরিকান পর্বতারোহী জর্ডান রোমেরু। ২০১০ সালে যখন তিনি এভারেস্ট আরোহণ করেন তখন তার বয়স ১৩ বছর ১০ মাস। ২০১৪ সালে নারী হিসেবে সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট আরোহণ করেন পূর্না মালাভাথ। তখন তার বয়স ১৩ বছর ১১ মাস। 

দক্ষিণ থেকে উত্তর

১৯৮৮ সালে চীন, নেপাল আর জাপানের একটি যৌথ পর্বতারোহী দল প্রথম বারের মতো এভারেস্টের দাক্ষিণ পাশ নেপাল থেকে আরোহণ শুরু করেন। তারা এভারেস্ট সামিট করে দক্ষিণ পাশ তিব্বত দিয়ে নেমে আসন। 

সী লেভেল থেকে সামিট

বঙ্গোপসাগরের মাঝে গঙ্গা সাগর আইল্যান্ড থেকে ১২০০ কিলোমিটার পথ হেঁটে পাড়ি দিয়ে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকারটনি প্রথম এভারেস্ট আরোহণ করেন। 
 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়