ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

যৌতুক হারাম, দেনমোহর আবশ্যক করেছে ইসলাম

মুফতি জাকারিয়া হারুন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৪৮, ১৫ জুন ২০২১  
যৌতুক হারাম, দেনমোহর আবশ্যক করেছে ইসলাম

‘নারী শক্তি, নারী স্বাহা, জ্ঞানীদের পিপাসার জল’ কবি আল মাহমুদের কালজয়ী কবিতার একটি লাইন।

পৃথিবীতে একমাত্র ইসলামই নারীর অধিকার আদায়ে সোচ্চার। নারী জীবনের প্রতিটি স্তরে তার অধিকার নিশ্চিত করেছে। বাদ যায়নি বিয়েতে দেনমোহরের অধিকারও। ইসলামি শরিয়তে যৌতুক হারাম করে দেনমোহর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বিয়েতে বর কর্তৃক স্ত্রীকে দেনমোহর আদায় করা ফরজ।

পরিতাপের বিষয় হলো, দেনমোহর বিষয়ে সমাজে অজ্ঞতা ও অবহেলা চরম পর্যায়। ধর্মকে ভালোবাসেন, এমন অনেক মানুষও দেনমোহরের বিষয়ে সচেতন নন। এ বিষয়ে অবহেলা এত প্রকট যে, নফল ইবাদতকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন, মোহর আদায়কে তার সিকি ভাগও মনে করেন না। অথচ দেনমোহর আদায় একটি আবশ্যক বিধান। নারীর অধিকার- যা আদায় করা ছাড়া মানুষ প্রকৃত দ্বীনদার হতে পারে না। বিয়েতে স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করতে হবে।

বর্তমানে দেনমোহর নামেমাত্র নির্ধারণ করা হয়। অনেকটা যেন নিয়ম রক্ষার বিষয়। আদায় করার কোনো সদিচ্ছা নেই। বিয়ের কাবিননামার ফরমে দেনমোহরের পরিমাণ লিখতে হয় তাই লেখেন। অথচ দেনমোহর বিয়ে বৈধ করার মাধ্যমও বটে। বিয়েতে দেনমোহর প্রদান প্রসঙ্গে সূরা নিসার ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, ‘আর তোমরা স্ত্রীকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করো।’

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘এদের ছাড়া তোমাদের জন্য সব নারী বৈধ করা হয়েছে। শর্ত এই যে, তোমরা তাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে গ্রহণ করবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য; ব্যাভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত অধিকার দান করো। তোমাদের কোনো গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।’ (সূরা নিসা : ২৪)।

উপর্যুক্ত আয়াতের আলোকে বলা যায়, মহান আল্লাহর নির্দেশেই স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে হবে। আর বিয়ের সময়ই স্ত্রীকে দেনমোহর পরিশোধ করার বিধান। স্বামী তার আর্থিক সংগতি অনুযায়ী দেনমোহর দেবে। স্ত্রী দেনমোহর হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তির মালিক হয়েই স্বামীর সঙ্গে সংসারযাত্রা শুরু করবে। স্বামী কর্তৃক প্রাপ্ত এ সম্পদ একান্তভাবে স্ত্রীর। এখানে অন্য কারো বিন্দু পরিমাণ অধিকার নেই। দেনমোহর স্ত্রীর ব্যক্তিগত অধিকার। দেনমোহর খরচে তার স্বাধীন ইচ্ছা।

বিয়েতে যার ইচ্ছে থাকে দেনমোহর নিছক নির্ধারণ করা, স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদানের আদৌ কোনো ইচ্ছা থাকে না, তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো নারীকে কম বা বেশি দেনমোহর ধার্য করে বিয়ে করল, অথচ তার অন্তরে দেনমোহরের সে হক আদায়ের আদৌ কোনো ইচ্ছেই নেই, সে ব্যক্তি কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহর দরবারে ব্যভিচারী হিসেবে উপস্থিত হবে।’ (তাবারানি)

ইসলাম শুধু যৌতুক প্রথার বিরোধীই নয়, বিয়ে-শাদির ক্ষেত্রে সব ধরনের অপচয়ের বিপক্ষে।  রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, সেই বিয়েই সর্বাধিক বরকতময়, যে বিয়েতে ব্যয় খুব সামান্যই হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন সাধারণভাবে, নিজের প্রিয় কন্যা হজরত ফাতেমা রা.-কে বিয়ে দিয়েছেন একইভাবে। বিয়েতে অপব্যয় পাত্র-পাত্রীর পরিবারের জন্য কষ্টকর পরিণতি ডেকে আনে। সামাজিক সম্মান রক্ষার অজুহাতে অনেকে বিয়েতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যয় করে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হন। যা ইসলাম কোনোভাবেই অনুমোদন করে না। 

যৌতুককে শোষণ এবং নারী নিগ্রহের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যৌতুক আদায়ের জন্য স্ত্রীর ওপর দৈহিক নির্যাতন চালানো এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে এ ধরনের অমানবিক আচরণ সম্পূর্ণ হারাম ও অবৈধ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে যৌতুক থেকে বেঁচে; ধার্য দেনমোহর আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন। 

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া দারুল কায়েদ তাহিলী মাদরাসা

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়