ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

নীলিমা ইব্রাহিমের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১৯, ১৮ জুন ২০২১   আপডেট: ১০:৩১, ১৮ জুন ২০২১
নীলিমা ইব্রাহিমের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ মুক্তিযুদ্ধে বীরাঙ্গনাদের দুঃখগাথা নিয়ে প্রকাশিত বইটি বারবার নীলিমা ইব্রাহিমের নামটি মনে করিয়ে দেয় আমাদের। এই বইটিতে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক ধর্ষিত হওয়া সাত জন নারীর করুণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।  

নীলিমা ইব্রাহিম বাংলার নারীজাগরণের পথিকৃতদের মধ্যে একজন। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী এই মহীয়সী নারীর ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ২০০২ সালের ১৮ জুন প্রয়াত হন।  

তার জন্ম ১৯২১ সালের ১১ অক্টোবর বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটের মূলঘর গ্রামের এক জমিদার পরিবারে। পিতা প্রফুল্লকুমার রায়চৌধুরী এবং মাতা কুসুমকুমারী দেবী।

নীলিমা ইব্রাহিম অতি উঁচু মাপের শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী। কর্মজীবনের শুরুতে কলকাতার লরেটো হাউসে লেকচারার (১৯৪৩-৪৪) হিসেবে চাকরি করেন। তারপর দু’বছর (১৯৪৪-৪৫) তিনি ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের লেকচারার ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৭২ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।  ১৯৭৪-৭৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমির অবৈতনিক মহাপরিচালক ছিলেন।

তিনি রোকেয়া হলের প্রভোস্ট এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। আরও দুটি স্পর্শকাতর বিষয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি পালন করেন। তা হলো- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্য এবং তাদের দালাল রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটি কর্তৃক অপহৃত, লাঞ্ছিত, নির্যাতিতা হতভাগা অসংখ্য বাঙালি মা-বোন এবং ‘ওয়ার বেবিদের’ পুনর্বাসনের জটিল কাজে হাত দেন।

নীলিমা লেখক হিসেবে যেমন খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। নীলিমা ইব্রাহিম বহু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমাজকল্যাণ ও নারী-উন্নয়সংস্থা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠনের সঙ্গে যু্ক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো এবং বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, বাংলাদেশ ইতিহাস সমিতি, বাংলাদেশ রেডক্রস সমিতি ও বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা সমিতির জীবন সদস্য ছিলেন।

এছাড়া বাংলাদেশ মহিলা সমিতির সভানেত্রী এবং কনসার্নড উইমেন ফর ফ্যামিলি প্ল্যানিং-এর বোর্ড অব গবর্নরসের চেয়ারপার্সন হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ইন্টারন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব উইমেন-এর সভানেত্রী এবং অ্যাসোসিয়েটেড কান্ট্রি উইমেন অব দি ওয়ার্ল্ড-এর সাউথ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার এরিয়া প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বার্লিন, মিউনিক ও ফ্রাংফুর্টে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক বিশ্বসমবায় সম্মেলন’-এ পূর্বপাকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন এবং ১৯৭৩-এ নয়া দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘আন্তর্জাতিক ওয়ান এশীয় সম্মেলন’-এ অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৪-এ তিনি মস্কোয় অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বশান্তি কংগ্রেস’, হাঙ্গেরিতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বনারী বর্ষ’ এবং ১৯৭৫-এ মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত ‘বিশ্বনারী সম্মেলন’-এ যোগ দেন।

তিনি দেশ ও সমাজ সেবায় নিজেকে আপাদমস্তক জড়িয়েছিলেন।

কেবল ‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ই নয় নীলিমা ইব্রাহিমের গ্রন্থের সংখ্যা অনেক। উল্লেখযোগ্য হলো: গবেষণা- শরৎ-প্রতিভা (১৯৬০), বাংলার কবি মধুসূদন (১৯৬১), ঊনবিংশ শতাব্দীর বাঙালী সমাজ ও বাংলা নাটক (১৯৬৪), বাংলা নাটক : উৎস ও ধারা (১৯৭২), বেগম রোকেয়া (১৯৭৪), বাঙ্গালীমানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৮৭), সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা প্রসঙ্গ (১৯৯১); ছোটগল্প রমনা পার্কে (১৯৬৪); উপন্যাস বিশ শতকের মেয়ে (১৯৫৮), এক পথ দুই বাঁক (১৯৫৮), কেয়াবন সঞ্চারিণী (১৯৬২), বহ্নিবলয় (১৯৮৫); নাটক দুয়ে দুয়ে চার (১৯৬৪), যে অরণ্যে আলো নেই (১৯৭৪), রোদ জ্বলা বিকেল (১৯৭৪), সূর্যাস্তের পর (১৯৭৪); কথানাট্য আমি বীরাঙ্গনা বলছি (২ খন্ড ১৯৯৬-৯৭); অনুবাদ এলিনর রুজভেল্ট (১৯৫৫), কথাশিল্পী জেমস ফেনিমোর কুপার (১৯৬৮), বস্টনের পথে (১৯৬৯); ভ্রমণকাহিনী শাহী এলাকার পথে পথে (১৯৬৩), আত্মজীবনী বিন্দু-বিসর্গ (১৯৯১) ইত্যাদি।

জীবনে পুরস্কার প্রাপ্তিও অনেক। পেয়েছেন- বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯), জয় বাংলা পুরস্কার (১৯৭৩), মাইকেল মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৭), লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৮৯), বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী স্মৃতি পদক (১৯৯০), অনন্য সাহিত্য পদক (১৯৯৬), বেগম রোকেয়া পদক (১৯৯৬), বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৯৭), শেরে বাংলা পুরস্কার (১৯৯৭), থিয়েটার সম্মাননা পদক (১৯৯৮), একুশে পদক (২০০০)।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়