ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জমিদার নেই আছে জমিদার বাড়ি

খায়রুল বাশার আশিক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ১৯ অক্টোবর ২০২১  
জমিদার নেই আছে জমিদার বাড়ি

প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমৃদ্ধ জেলা নারায়ণগঞ্জ। জেলার সর্বত্র মেলে ইতিহাস-ঐতিহ্যের ছাপ। তেমনি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি। ঐতিহাসিক এই বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াই হাজার উপজেলার সাতগ্রামে।

মেঘনার কূল ঘেঁষা এই উপজেলার স্থানীয়দের মুখে নানা গল্প শোনা যায় বাড়িটি ঘিরে। স্থানীয়রা এই বাড়িকে ‘মনোরমা বাস’ বা ‘বাবুর বাড়ি’ নামে চেনেন।  

ধ্বংসপ্রাপ্ত জমিদার বাড়িটি ঠিক কবে নির্মাণ করা হয়েছিল সে বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে লোকমুখে জানা যায়, ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে বাড়িটি নির্মাণ হয়েছিল। স্থানীয়দের বর্ণনায় এ বাড়ির কিছু বংশধরদের পরিচয় জানা যায়।  

ব্রিটিশ আমলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র ছিলেন শ্রী শরৎ গুপ্ত। তার নামে ঢাকার লক্ষ্মীবাজারে শরৎ গুপ্ত রোড রয়েছে। তারই বড় ছেলে শ্রী যোঘেশ গুপ্ত। তৎকালীন এ এলাকার কৃতি সন্তান ছিলেন তিনি। এই বাড়িটি মূলত তার। 

সাতগ্রাম জমিদার বাড়ির বংশধরেরা এখন কলকাতার বাসিন্দা। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পরে তারা জমিদারি ছেড়ে ভারত চলে যায়। পরে বাড়িটি কিছুদিন বিদ্যালয় হিসেবে ব্যবহার হয়। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয় বাড়ির পশ্চিম পাশে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সাতগাও প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এই জমিদারবাড়ির বাবুদের জমিতে নির্মিত। ১৯৭১ সালে বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার হয়। 

বর্তমানে বাড়িটিতে চমৎকার এক সবুজ পরিবেশ লক্ষ্য করা যায়। বাড়ির দেয়ালের ভাঙা অংশে গাছের শেকড় চোখে পড়ার মতো। ইটের গাঁথুনির মধ্যে জন্মেছে লতাপাতা ও শ্যাওলা। দ্বিতীয় তলার বারান্দায় চোখে পড়ে লোহার কারুকাজের নকশা। বাড়ির অভ্যন্তরে দৃষ্টিনন্দন একটি পুকুর রয়েছে। সানবাঁধানো  পুকুর ঘাটও রয়েছে। সবুজের অভয়ারণ্যে ঘেরা চমৎকার গ্রামীণ পরিবেশের পাশাপাশি নান্দনিক একটি ফুলের বাগান বাড়িটিকে আরো দৃষ্টিনন্দন করেছে। প্রধান ভবনের সামনেই রয়েছে বেল গাছ, নারিকেল গাছ। সব মিলিয়ে জমিদার বাড়ির চারদিকটা যেন সৌন্দর্যে ঠাসা।

এই জমিদার বাড়িতে যেতে হলে আপনাকে আসতে হবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নিকটবর্তী পুরিন্দা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে রিকশায় কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে পারেন জমিদার বাড়িতে। ঢাকা থেকে যারা যেতে চান তারা গুলিস্থান বা সায়েদাবাদ থেকে বাস পাবেন। ৩০০ টাকা খরচে এখান থেকে অনায়াসে ঘুরে আসা যাবে। 
সাতগ্রাম জমিদার বাড়ি ঢাকা থেকে খুব কাছে হওয়ায় দিনে গিয়ে দিনেই ফিরে আসা সম্ভব। তবে কোনো কারণে সেখানে থেকে যাওয়ার প্রয়োজন হলে সদর উপজেলার সামনে নির্মিত ডাক-বাংলোটিতে থাকতে পারেন। 

সেখানে আশেপাশে দেখার মতো তেমন কোনো স্থান নেই। তবে পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁয়ে গেলে দেখা মিলবে বড় সর্দার বাড়ি ও লোকশিল্প জাদুঘর। পরিচয় ঘটবে কালের বিবর্তনের সাক্ষী পানাম নগরীর সঙ্গে।   
 

ঢাকা/তারা

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়