ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আজ অন্তত উদার হোন

ডা. গোলাম শওকত হোসেন  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪২, ১৩ নভেম্বর ২০২১   আপডেট: ১৩:৫৩, ১৩ নভেম্বর ২০২১
আজ অন্তত উদার হোন

আজ ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস ডে অর্থাৎ বিশ্ব সহৃদয়তা দিবস। বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

সামাজিক, ধর্মীয় ও মানবিক দর্শনের প্রেক্ষাপটে কাইন্ডনেস হলো মানুষের মনের উদারতা বা সহৃদয়তা। যা মানুষকে অন্তর থেকে তাড়িত করে মানুষের উপকারে। কিন্তু কোনো প্রতিদান আশা করেনা। 

গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলও কাইন্ডনেসকে একই দৃষ্টি ভঙ্গিতে বিশ্লেষণ করেন। আর এই উদারতার ইতিহাস গৌতম বুদ্ধ থেকে যীশু বা মহানবী (সা.) এর জীবনীতেও উজ্জ্বলভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছিল বার বার। আবার স্পাডাকাস থেকে লেনিন পর্যন্ত বা সক্রেটিস থেকে স্মার্তে পর্যন্ত জ্ঞানের প্রজ্জলিত শিখার মাঝেও নিহিত ছিল মানুষের জন্য সহৃদয়তা/ উদারতা /ক্ষমা। 

নেলসন ম্যান্ডেলা দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে অত্যাচারী শ্বেতাঙ্গদের, এমনকি তার ছেলেকে হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী কয়েদী অবস্থায় তার প্রধান পাহারাদানকারী অফিসার জেমস গ্রেগরিকেও ক্ষমা করেছিলেন- সহৃদয়তার বদান্যতায়। 

মহাকালের স্রোতে ভাসতে ভাসতে স্বার্থান্বেষী মানুষ বিভক্ত হয়েছে অসংখ্য জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম বা দেশে। লিপ্ত হয়েছে হাজারো মতানৈক্যে বা যুদ্ধে বা বিভেদে। কিন্তু দিনশেষে এটাও উপলব্ধি করেতে শিখেছে যে বিভাজন কোন চিরস্থায়ী সমাধান না। কারণ হৃদয়ের উদারতার তাড়না সেই যুদ্ধাঙ্গী মানুষই একে অন্যের ব্যাথা বা অভাবকে অনুধাবন করতে শিখিয়েছে। সেই যুদ্ধাঙ্গী মানুষ আবার শত্রুকে বুকে টেনে নিয়েছে, হাসপাতাল বানিয়েছে, বৃদ্ধাশ্রম বানিয়েছে, অনাথাশ্রমের অর্থ যুগিয়েছে, পান্থশালা তৈরি করেছে, লঙ্গরখানা স্থাপন করেছে। 

সময়ের ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তৈরি হয়েছে স্যালভেশন আর্মি, সেভ দ্যা চিলড্রেন, ইউনাইটেড নেশন, রেডক্রস, স্কাউটিং, লায়ন্স ইন্টারন্যাশনাল, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। সবই হয়েছে মানুষের উদারতার টানে। 

১৯৯৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাপানের টোকিওতে ‘ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস মুভমেন্ট’ এর জন্ম হয় পৃথিবীর ২৭টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে। যেখানে ধার্য্য করা হয় ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিবছর ১৩ নভেম্বর ‘ওয়ার্ল্ড কাইন্ডনেস ডে’ বিশ্বব্যাপী পালন করা হবে উদারতার সঙ্গে মানুষের সাহায্যের হাতকে প্রসারিত করে অনুপ্রেরণার জন্য। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা তৈরি করাই এর মূল উদ্দেশ্য। 

বাংলাদেশে এই আন্দোলনের মশালবাহী ‘সম্মান ফাউন্ডেশন’।  এই ফাউন্ডেশন বর্তমানে অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি গৃহকর্মীদের কল্যাণকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। গৃহকর্মীরা ভালো থাকলে অথবা সুস্থ, অক্ষর জ্ঞানসম্পন্ন ও সময়োপযোগী ন্যূনতম প্রজ্ঞানসম্পন্ন হলে, গৃহকর্তা এবং তার পরিবার ভালো থাকবে বা স্বল্প ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকবে।  ঘরে ঘরে এই উদারতার মঙ্গলদীপ প্রজ্বলিত হয়ে তা জোনাকির আলোর মতন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ুক। 

লেখক: চিকিৎসক, শিক্ষক ও গবেষক।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়