ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গণমানুষের যাপিত জীবনের কুশলী রূপকার

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪২, ৩ ডিসেম্বর ২০২১   আপডেট: ১২:৪২, ৩ ডিসেম্বর ২০২১
গণমানুষের যাপিত জীবনের কুশলী রূপকার

পুতুলনাচের ইতিকথা, দিবারাত্রির কাব্য, পদ্মা নদীর মাঝি- এসব উপন্যাস এবং অতসীমামী, প্রাগৈতিহাসিক, ছোট বকুলপুরের যাত্রী- এসব গল্পসংকলন তার কথা বার বার মনে করিয়ে দেবে আমাদের। কারণ, এ বইগুলো বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলে বিবেচিত।

‘পদ্মা নদীর মাঝি’র বিভিন্ন চরিত্রের সৃজন-কুশলতায়ই বোঝা যায় তিনি কতো বড় লেখক।  কুবের, মালা, কপিলা, রাসু, গণেশ ইত্যাকার মানুষদের মুখগুলো আপনা-আপনিই চোখের সামনে ভেসে ওঠে।  যা তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন। তাকে বলা হয় গণমানুষের যাপিত জীবনের কুশলী রূপকার। তার লেখাই তাকে শক্তিশালী ও স্মরণীয় করে রেখেছে। 

অমর কথাশিল্পী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৬৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৫৬ সালের ৩ ডিসেম্বর শক্তিশালী এই কথাসাহিত্যিকের জীবনাবসান ঘটে। তার জন্ম ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ মে (১৩১৫ বঙ্গাব্দের ৬ জ্যৈষ্ঠ) বিহারের সাওতাল পরগনা, বর্তমান ঝাড়খণ্ড রাজ্যের দুমকা শহরে। তার পৈতৃক বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে৷ তার নাম প্রবোধকুমার হলেও ডাকনাম মানিক নামেই লিখে গেছেন।  

বাবা হরিহর বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন তদানীন্তন ঢাকা জেলার সেটেলমেন্ট বিভাগের সাব-রেজিস্টার। পিতার চাকরির সূত্রে তার শৈশব ও শিক্ষাজীবন অতিবাহিত হয়েছে বাংলা-বিহার-ওড়িষার দুমকা, আরা, সাসারাম, কলকাতা, বারাসাত, বাঁকুড়া, তমলুক, কাঁথি, মহিষাদল, গুইগাদা, শালবনি, নন্দীগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, টাঙ্গাইল প্রভৃতি শহরে। তার মা নীরদাসুন্দরীর আদিনিবাস ছিল এই বাংলাদেশেই।  উপন্যাস ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’য় তিনি তার মায়ের গ্রাম গাউদিয়া’র পটভূমি রচনা করেছেন ।

মাত্র ৪৮ বছরের অল্প আয়ুষ্কালে কথাশিল্পী হিসেবে নিজের নামটি স্মরণীয় করে রেখেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই অল্প সময়ে তিনি বাঙালিকে যা দিয়েছেন তার কোনো পরিসংখ্যান দরকার করে না।

আপাদমস্তক কমিউনিজমে বিশ্বাসী মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কলেজে বন্ধুদের সাথে বাজি ধরে জীবনের প্রথম গল্প ‘অতসীমামী’ লিখে ফেলেন। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাননি। এরপর ‘বঙ্গশ্রী’ সাহিত্য পত্রিকায় ‘দিবারাত্রীর কাব্য’ উপন্যাসটির ধারাবাহিক প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঔপন্যাসিক হিসেবে তার যাত্রা শুরু।  পরের বছর ‘পূর্ব্বাশা’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। ১৯৩৫ সালে ‘জননী’, ‘দিবারাত্রীর কাব্য’ উপন্যাস এবং ‘অতসীমামী ও অন্যান্য গল্প’ গল্পগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার গ্রন্থকার হিসেবে যাত্রা শুরু হয়। এভাবে কেবল লেখালেখিকে পেশা হিসেবে নিয়ে সামান্য উপার্জনের মাধ্যমে সংসারের হাল ধরার আশায় একে একে লিখে গেছেন ৪০টি উপন্যাস, ৩০০টিরও অধিক ছোটগল্প আর বিপুল সংখ্যক প্রবন্ধ।

ঢাকা/টিপু

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়