ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দুই চাকায় চার বাংলাদেশির বিশ্বরেকর্ড 

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ১৮ জানুয়ারি ২০২২   আপডেট: ১৬:৪২, ১৮ জানুয়ারি ২০২২
দুই চাকায় চার বাংলাদেশির বিশ্বরেকর্ড 

মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়- কথাটি প্রচলিত। কিন্তু সত্য এই যে, অনেক সময় সাফল্য স্বপ্নকে অতিক্রম করে যায়। এ জন্য চাই সাধনা। স্বপ্ন স্পর্শ করতে সেই সাধনাতেই নিজেদের সপে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের চার তরুণতুর্কী। সাধনার ফলও মিলেছে। রিলে করে ৪৮ ঘণ্টায় ১ হাজার ৬৭০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। এই চার স্বপ্নবাজ হলেন দ্রাবিড়, রাকিবুল, তানভীর ও আলাউদ্দিন।

এর আগে ২০১৬ সালে একক সারিতে সাইকেল চালিয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সারি তৈরির রেকর্ড গড়েছিল বিডিসাইক্লিস্টস (বিডিসি)। এবার দ্বিতীয় রেকর্ড গড়লেন বিডিসি’র স্পোর্টস উইং- টিম বিডিসি’র চার সদস্য। সেই স্বপ্নজয়ের গল্প রাইজিংবিডিকে শুনিয়েছেন দ্রাবিড় আলম। 

২০২০ সালে যখন করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউন শুরু হয়, তখন বিদেশের সব ইভেন্ট বন্ধ হয়ে যায়। এমন এক বৈরি পরিবেশে বিশ্বরেকর্ড করার পরিকল্পনা করেন উদ্যমী এই চার তরুণ। সময়টিকে কাজে লাগাতে চাইছিলেন তারা। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ওয়েবসাইট খুঁজে তারা সিদ্ধান্ত নেন নিজেরাও ওই রেকর্ড বুকের পাতায় নাম লেখাবেন। ৪৮ ঘণ্টায় ১৬০০ কিলোমিটার সাইকেল চালানোর লক্ষ্য ঠিক করেন তারা। 

রেকর্ড গড়তে টানা নয় মাস প্রস্তুতি নেয় টিম বিডিসির এই চার সাইক্লিস্ট। দিনে ১০-১২ ঘণ্টা প্রশিক্ষণে ব্যয় করতে হয়েছে। শরীর ফিট রাখতে কমাতে হয়েছে ওজন, ছাড়তে হয়েছে প্রিয় খাবার। প্রস্তুতি নিতে খাগড়াছড়িতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন রাকিব। তানভীর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মাওয়া রোডে। আলাউদ্দিন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ঢাকার বাইরে। এদিকে ঢাকায় ইনডোরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন দ্রাবিড়। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১৬-এর সঙ্গে মিল রেখে ১৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রমের চ্যালেঞ্জ নিয়ে শুরু হয় তাদের স্বপ্নের পথচলা। 

গত ৮ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৪০মিনিটে সাইকেল নিয়ে শুরু হয় যাত্রা। যাত্রা শেষ হয় ১০ ডিসেম্বর রাত ৮টা ৪০মিনিটে। পূর্বাচলের ১.৭ কিলোমিটার জায়গায় ১০০২ বার চক্রাকারে ঘুরেছেন এই চারজন। এ সময় প্রায় ৩৫ কিলোমিটার গড়ে রিলে সাইক্লিং করেছেন তারা। রিলে সাইক্লিং হলো একজন চালাবেন, বাকি সদস্যরা বিশ্রাম নেবেন। তবে কেউ না কেউ একজন চালাবেনই। এক ঘণ্টা পরপর বদলাতে হবে ব্যাটন।

এরপর সাইকেল চালানোর ৪৮ ঘণ্টার ভিডিও ফুটেজ, ১৩ জন সাক্ষীর দেওয়া প্রমাণপত্র, সার্ভেয়ারের দেওয়া প্রতিবেদন, অসংখ্য ছবি, জিপিএসে রাইডের ডেটা এবং অন্যান্য তথ্য গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর গত ৮ জানুয়ারি জানা যায়- গিনেস বুকে জায়গা করে নিয়েছেন এই চার তরুণ।  

দ্রাবিড় আলম চাকরি করেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায়। পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএতে। সাইক্লিং শুরুর দিকে এমন স্বপ্ন দেখেছিলেন কি? দ্রাবিড় জানান, শুরুর দিকে সবাই যেমন সাইকেল চালানো শুরু করে, ঠিক তেমনি শুরু করেছিলাম। এরকম পরিকল্পনা ছিল না। তবে পরিবারের সাপোর্ট ছিল। শুক্রবার আমি সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যাই। 

সাইক্লিং-এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে দ্রাবিড় জানান, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় (সাইক্লিং) তেমন একটা অংশগ্রহণ করে না। আমাদের ফিটনেস ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের চেয়ে কম। যখন নতুন নতুন রাইডার আসবে তখন আমাদের ভালো কিছু হবে। যারা ১৫-১৬ বছর থেকে অনুশীলন শুরু করবে তখন আমরা হয়তো ভালো রাইডার পাব। আশাবাদ ব্যক্ত করেন দ্রাবিড়।  

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়