ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

পোষা প্রাণীর আবাসিক হোটেল, প্রতিদিনের খরচ ১৫০০ টাকা

মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ২০ মার্চ ২০২২   আপডেট: ২২:৪০, ২০ মার্চ ২০২২

প্রাণীর প্রতি অগাধ ভালোবাসা থেকেই বিড়াল, কুকুর, পাখি পোষেন অনেকে। এসব পোষা প্রাণীরা বাড়িজুড়ে বিচরণ করে। কারো কারো বেডরুমেও জায়গা হয় এসব প্রাণীদের। কখনওবা এসব প্রাণীরা হয়ে ওঠে পরিবারেরই সদস্য। 

তবে এসব প্রাণী যারা পালন করেন, অনেক সময় ‘বিড়ম্বনায়’ পড়তে হয় তাদের। এদের অসুখ-বিসুখ করলে বা কোনো কাজে দীর্ঘদিনের জন্য বাইরে অবস্থান করতে হলে এসব প্রাণী নিয়ে পড়তে হয় বিপাকে। মানুষের সহযোগিতা আর সাহচর্য ছাড়া পোষা প্রাণীর দিনযাপন কষ্টকর। পোষা এসব প্রাণীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সমাধানসহ এদের পরিচর্যার জন্য রাজধানীর মিরপুরে চালু হয়েছে পোষা প্রাণীর আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’।

বিশেষায়িত প্রাণীর আবাসিক হোটেল ‘ফারিঘর’- এ যে কেউ তাদের পোষা বিড়াল বা কুকুর রাখতে পারবেন। করতে পারবেন তার চিকিৎসা। একেবারে বাড়ির মতো পরিবেশে এখানে কুকুর-বিড়ালের থাকার ব্যবস্থা করেছেন উদ্যোক্তারা। পাশাপাশি পোষা প্রাণীর জন্য মিউজিক ও বিনোদনের ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এজন্য একটি বিড়াল বা কুকুরের জন্য খরচ পড়বে প্রতিদিন ৫০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা।

রাজধানীর মিরপুর চিড়িয়াখানা রোডে (সনি সিনেমা হলের পেছনে) পোষা প্রাণীর জন্য ফারিঘর নামের এই ওয়ানস্টপ সার্ভিসটি চালু করেছেন তিনজন উদ্যোক্তা। নুজহাত নাবিলা, খালিদ ফারহান ও রাকিবুল হক এমিল। যাদের এমন সব পোষা প্রাণী রয়েছে, তাদের কেউ বিভিন্ন কাজে লম্বা সময়ের জন্য কোথাও বেড়াতে গেলে বা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে- তাদের পোষা প্রাণী নিশ্চিন্তে রেখে যেতে পারবেন ফারিঘরে। এছাড়াও পোষা প্রাণীর খেলনাসহ বিভিন্ন উপকরণও কেনা যাবে ফারিঘর থেকে।

ফারিঘরের উদ্যোক্তাদের একজন স্থপতি রাকিবুল হক এমিল বলেন, আমরা পোষা প্রাণীদের কল্যাণের কথা মাথায় রেখেই ফারিঘর তৈরি করেছি। মানুষের মতো পোষা প্রাণীদেরও বেশকিছু সেবা লাগে। কিন্তু সেসব সেবা বা সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা নেই এই শহরে। বিশেষ করে পোষা প্রাণী রাখার তেমন ব্যবস্থা নেই ঢাকায়। সে ভাবনা থেকেই ফারিঘরের সৃষ্টি। এখানে প্রাণীর উপকারের পাশাপাশি প্রাণীপ্রেমীরা বেশকিছু সুবিধাও পাবেন। তারা যখন বেড়াতে বা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হবেন, তখন এখানে তাদের পোষা প্রাণী রেখে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবেন।

ভবিষ্যৎ ভাবনা বিষয়ে এমিল বলেন, ফারিঘরে কুকুরের জন্য তিনটি ঘর আছে। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে এ সংখ্যা বাড়ানো। একটা কথা জানবেন, খাবার দিয়ে বিড়াল বাসায় একা রাখা যায়; কিন্তু কুকুর একদমই বাসায় একা থাকতে পারে না। ফারিঘরে কুকুরের তিনটির পাশাপাশি বিড়ালের জন্য ১৪টি ঘর আছে। কুকুরের জন্য তৈরি প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য নয় ফুট বাই পাঁচ ফুট। বিড়ালের জন্য রয়েছে ১৬ বর্গফুটের আলাদা আলাদা কেবিন। এসব কেবিনে বিছানা-বালিশ তো আছেই, একই সঙ্গে টয়লেট ব্যবহারের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

প্রাণীদের সময়মতো খাবার দেওয়া ও দেখভালের জন্য এখানে দুজন প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও সিসিটিভির মাধ্যমে সব সময় এখানকার অবস্থা দেখতে এবং জানতে পারছেন উদ্যোক্তারা। এছাড়া যারা তাদের পোষা প্রাণী এখানে রেখে যান, তারাও ইচ্ছে করলে ভিডিওকল দিয়ে তার প্রিয় প্রাণীটির অবস্থা দেখতে পারেন। কোনো প্রাণী নিয়ে যাওয়ার পর সেই ঘরটি ভালোভাবে পরিষ্কার করা হয়। এছাড়া রোগ এড়াতে এক প্রাণীর সংস্পর্শে অন্য প্রাণীকে আনা হয় না।

রাকিবুল হক এমিল বলেন, এখানে বিড়াল রাখার খরচ দিনে ৫০০ টাকা। কুকুরের জন্য দেড় হাজার টাকা। তবে বেশি দিন রাখলে খরচটা কমে আসে। সেক্ষেত্রে একটি বিড়াল পাঁচ দিন রাখলে প্রতিদিনের জন্য ৪৭০ টাকা, ১০ দিন রাখলে ৪৫০ টাকা আর ২০ দিন রাখলে প্রতিদিন ৪০০ টাকা করে দিতে হবে। কুকুরের ক্ষেত্রেও একইভাবে কমতে থাকবে। তবে পোষ্যদের যতদিন রাখা হবে, তত দিনের জন্য পর্যাপ্ত খাবার দিয়ে যেতে হবে। ফারিঘর থেকে প্রাণীদের কোনো খাবার দেওয়া হয় না।

এমিল জানান, যারা এখানে তাদের প্রাণী রেখে যায় তারা কোনো উপায় না থাকায় রেখে যায়। এটা এখন আর বিলাসিতা নয়। ফারিঘরে প্রাণী রাখতে হলে অভিভাবকদের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি বা নাম্বার, কুকুর ও বিড়ালের ভ্যাকসিনেশনের রেকর্ড জমা দিতে হবে। প্রাণীর অন্য কোনো সমস্যা আছে কি-না, আচরণ কেমন তা জানাতে হয় আমাদের কর্মকর্তাদের। আমরা গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে হোটেলের কার্যক্রম শুরু করেছি। এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাচ্ছি। এছাড়া হোটেলের নিচেই আছে লাইফ কেয়ার ক্লিনিক। কোনো প্রাণী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার তাৎক্ষণিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

ঢাকা/এনএইচ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়