ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

আটলান্টিকের কবরস্থান পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ হোটেল

মুজাহিদ বিল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ২ নভেম্বর ২০২২   আপডেট: ১৩:২১, ২ নভেম্বর ২০২২
আটলান্টিকের কবরস্থান পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ হোটেল

পাহাড়ের চূড়ায় কিংবা বরফে ঢাকা অঞ্চলে আবাসিক হোটেলের কথা শোনা যায়। সমুদ্রের পাড়েও হরহামেশা দেখা যায় আবাসিক হোটেল। কিন্তু সাগরের মাঝখানে আবাসিক হোটেল অভিনব বৈকি!

এমনই এক হোটেলের দেখা মিলবে আটলান্টিকের বুকে। হোটেলের নাম ‘ফ্রাইং প্যান’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের বোল্ড হেড আইল্যান্ড থেকে ৩৫ মাইল দূরে এই হোটেলের অবস্থান। হোটেলের অন্যতম বিশেষত্ব হলো ঘূর্ণিঝড়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সৌন্দর্য দেখা যায় হোটেলের বারান্দা থেকে। অনেক পর্যটকের মতে এটিই পৃথিবীর সবচেয়ে ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ হোটেল!

প্রথমে এই অবকাঠামো বানানো হয়েছিল ১৯৬৪ সালে লাইট হাউজের জন্য। স্থানটিকে বলা হতো ‘আটলান্টিকের কবরস্থান’। কারণ এখানে সমুদ্র অগভীর। যে কারণে প্রচুর জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটতো। ফলে এর নাম রাখা হয় ফ্রাইং প্যান সোর।

তখন জাহাজগুলোকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করার জন্য বাতিঘর নির্মাণ করা হয়। রাখা হয় কোস্টগার্ড সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা। ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কোস্টগার্ডের সদস্যরা সেখানে থাকতো। কিন্তু আশির দশকে নাবিকেরা জিপিএস ও রাডার ব্যবহার করে সমুদ্রের গভীরতা জানতে পারতো এবং জাহাজের অবস্থান বুঝতে পারতো। যে কারণে ২৮ বছর বাতিঘর হিসেবে ব্যবহারের পর ১৯৯২ সালে এটি পরিত্যাক্ত হয়। অবশেষে ২০১০ সালে স্থানটিকে নিলামে তোলে মার্কিন কোস্টগার্ড। সে সময় রিচার্ড নিল নামে এক ব্যক্তি স্থাপনাটি কিনে নেন। এ জন্য তার খরচ হয়েছিল ৭৫ হাজার ডলার। রিচার্ড এটি সংস্কার করে আবাসিক হোটেলে রূপ দেন। 

টাওয়ারটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯০ ফুট উঁচু। সাগরের গভীরে এবং উঁচুতে হওয়ার জন্য পর্যটকদের কাছে এর চাহিদা আকাশচুম্বী। যদিও চাইলেই সবাই এখানে থাকতে পারবেন না। এই হোটেলে রয়েছে মাত্র ৮টি রুম। সবগুলো থেকেই দেখা যায় সাগরের নীল জলরাশি। রুম পেতে হলে অনেক আগে থেকেই বুকিং দিতে হয় অনলাইনে, পরিশোধ করতে হয় অগ্রীম টাকা। এ জন্য জনপ্রতি গুণতে হবে ১৫৫০ ডলার। এখানে পৌঁছানো যাবে হেলিকপ্টার কিংবা নৌকাযোগে। ছাদেই রয়েছে হ্যালিপ্যাড। অবশ্য এজন্য গুণতে হবে অতিরিক্ত টাকা। 

রিচার্ড নীল বলেন, আমার এই হোটেল ওয়ান স্টার মানের। তবে এখান থেকে রাতের আকাশের সব তারা দেখা যায়। এই হোটেলের ছাদ দাঁড়িয়ে জোৎস্না দেখতে ভিড় জমান অনেক রোমান্টিক কাপল।

হোটেলের চারপাশে রয়েছে ৭০ ইঞ্চি প্রশস্ত পথ। যেখানে আপনি হাঁটতে পারবেন।  চাইলে মাছও ধরতে পারবেন। খোলা ছাদে খেলতে পারবেন গলফ। গলফের বলগুলো মাছের খাবার দিয়ে বানানো। অর্থাৎ বল বাইরে সমুদ্রে গিয়ে পড়লে মাছের খাবারে পরিণত হবে। 

আবহাওয়া খারাপ থাকলে পর্যটক আসা বন্ধ। তবে এই হোটেল শুধু পর্যটন কেন্দ্রই নয়, অনেক গবেষক এখানে আসেন সমুদ্র নিয়ে গবেষণার জন্য। ভাবুন তো একবার, চারপাশে সমুদ্র, উপরে তারাভরা আকাশ, সঙ্গে প্রিয় মানুষ! 

/তারা/ 

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়