ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় বাঘিয়ার খাল-হিজল গাছ

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৯, ১৫ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিময় বাঘিয়ার খাল-হিজল গাছ

এই সেই হিজল তলা যেখানে কেটেছে বঙ্গবন্ধুর দুরন্ত শৈশব

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার জন্ম না হলে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান পেত না লাল সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়। নেমে আসে শোকের ছায়া, এ শোক যেন বাঙালি জাতির মনে চিরদিনের। আর টুঙ্গিপাড়াবাসীর শোক আরো বেশি। যেখানে চিরঘুমে শুয়ে আছেন জাতির জনক। সেখানে তাঁর স্মৃতি বিজড়িত স্থানসহ নানা কিছু দেখে মনে হয় যেন তাদের চোখের সামনেই ঘুরে বেড়াচ্ছেন বঙ্গবন্ধু।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ছোট বেলা মা বাবা আদর করে ডাকতেন খোকা নামে। দূরন্তপনায় ছিলেন সবার থেকে আলাদা। বাড়ির পিছন দিক দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঘিয়ার খালে  গোসল করতেন তিনি। সাথে থাকতেন সমবয়সীরা। খালে পাড়ে থাকা হিজল গাছে উঠে খালের পানিতে লাফিয়ে পড়তেন তিনি। তার দূরন্তপনায় যেন হার মেনে যেত খালের স্রোতও। এ থেকে বাদ পড়তো না হিজল গাছটিও। সমবয়সীদের সাথে নিয়ে গাছে উঠে খালের মাঝে করতেন লাফালাফি।

শুধু বঙ্গবন্ধুই নয় এ খালে (বর্তমানে বাধানো ঘাট) তার বড় কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ছোট কন্যা শেখ রেহানাও গোসল করতেন ছোট বেলায়। সাঁতার আর ডুব সাঁতার কাটতেন তারা।

বড় হয়ে রাজনৈতিক জীবনে প্রবেশ করলেও টুঙ্গিপাড়ায় আসলে বিভিন্ন কাজের জন্য এখান থেকেই নৌকায় বের হতেন বঙ্গবন্ধু। এলাকার মানুষ আর বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতেন এখানেই। সেই বাঘিয়ার খাল আর হিজল গাছটি আজও নানা স্মৃতির সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু, শুধু নেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু।

সেই বাঘিয়ার খাল ও হিজল তলা। এখানে হিজল গাছ থেকে বঙ্গবন্ধু ও তার সঙ্গী-সাথীরা লাফিয়ে পড়তেন খালে
 

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধরে রাখতে বাড়ির পার্শ্ববর্তী খালের পাড় ও হিজল গাছের চারপাশ বাঁধাই করা হয়েছে। প্রতিদিনই জাতির জনকের স্মৃতিবিজরিত হিজল তলাসহ খালটি পরিদর্শনে আসেন শত শত বঙ্গবন্ধুপ্রেমী। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নানা বয়সের দর্শনার্থীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে এসে অনুভব করেন বঙ্গবন্ধুর জীবনযাত্রা।

দর্শনার্থীরা জানান, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থাপতি বঙ্গবন্ধুকে দেখিনি, কিন্তু টুঙ্গিপাড়ায় তার অনেক স্মৃতি রয়েছে। তাই এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর আদি পৈতৃক বাড়ি, ছেলেবেলার খেলার মাঠ, বঙ্গবন্ধুর প্রিয় বালিশা আমগাছ, হিজলতলাসহ বিভিন্ন স্মৃতি ঘুরে ঘুরে দেখছি। যতই দেখছি ততই অন্যরকম একটা অনুভূতি উপলব্ধি করছি।

এলাকাবাসী শেখ লুতফর (৫৯), মো. আবু তাহের (৬৫) জানান, বাপ দাদাদের কাছে শুনেছি ছোট বেলায় বঙ্গবন্ধু এ খালে গোসল করতেন। সাথে থাকতো সমবয়সীরা। দুষ্টমি আর দূরন্তপনার মধ্য দিয়ে গোসল করতেন। এসময় তিনি এই হিজল গাছে উঠে নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তেন।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও টুঙ্গিপাড়া পৌরসভার মেয়র শেখ আহমেদ হোসেন মীর্জা জানান, বঙ্গবন্ধু ছোট বেলায় ছিলেন দুষ্ট প্রকৃতির। কিন্তু মানুষের দু:খ কষ্ট সইতে পারতেন না। সমবয়সীদের সাথে এ খালে গোসল করতেন। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি আর পদচিহ্ন ধরে রাখার জন্য বাঘিয়ার খাল পাড় ও হিজল গাছের চারপাশ বাঁধাই করে সংরক্ষন করা হয়েছে। যাতে বঙ্গবন্ধু প্রেমীরা বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা অনুভব করতে পারে।

 

রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/১৫ আগস্ট ২০১৯/বাদল সাহা/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়