ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘বিষণ্নতা : আসুন কথা বলি’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৭, ৭ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বিষণ্নতা : আসুন কথা বলি’

আরিফ সাওন : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে প্রতিবছর ৭ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালিত হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

দিবসটির এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘ডিপ্রেশন : লেটস টক’যার বাংলা অর্থ ‘বিষণ্নতা : আসুন কথা বলি’।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিষণ্নতা দীর্ঘমেয়াদি রোগ। দারিদ্র্য, বেকারত্ব, একাকিত্ব, পারিবারিক ও সম্পর্কের সমস্যা, গর্ভকালীন ও প্রসব-পরবর্তী সময়, বিবাহ বিচ্ছেদ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, প্রবাস জীবন, অভিবাসন, মাদকসেবন ইত্যাদি কারণে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হতে পারে।

যে কোনো বয়সে এমনকি শিশুরাও বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হতে পারে। তবে পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ। দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে ৩/৪ গুণ বেশি।

১৫ থেকে ১৮ বছর ও ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মধ্যে বিষণ্ণতার ঝুঁকি বেশি। বর্তমান বিশ্বে ‘ডিজিজ বার্ডেন’ হিসেবে বিষণ্ণতার স্থান তৃতীয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৩০ সালে বিষণ্ণতা ডিজিজ বার্ডেন তালিকায় প্রথম স্থানে অবস্থান করবে।

বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে। সে হিসেবে প্রায় প্রতি ২৫ জনের মধ্যে একজন বিষণ্ণতায় আক্রান্ত। দেশ ভেদে শতকরা ৩-১৭ জন মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময় বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক হিসাব অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতিদিন তিন হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এ হিসেবে বছরে আত্মহত্যার সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১১ লাখে। এর মধ্যে বেশিরভাগ আত্মহত্যাই ঘটে বিষণ্নতাজনিত কারণে। ১৫ থেকে ৩০ বছরের জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ আত্মহত্যা।

জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে শতকরা ৪.৬ শতাংশ নারী-পুরুষ বিষণ্নতায় আক্রান্ত। স্থানীয় জরিপ অনুযায়ী দেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ৭৩ লাখ ৬০ হাজার মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছে।

১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে মানসিক রোগ- ১৬.০১ শতাংশ, উদ্বেগাধিক্য (অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার)  ৮.৪% শতাংশ, বিষণ্ণতা (ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার)  ৪.৬ শতাংশ, গুরুতর মানসিক রোগ (সাইকোসিস) ১.১ শতাংশ, মাদকাসক্তি (ড্রাগ এডিকশন) ০.৬ শতাংশ, মানসিক রোগের প্রকোপ (শিশু-কিশোর) ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরের মাঝে মানসিক রোগ ১৮.৪ শতাংশ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৩.৮ শতাংশ, মৃগীরোগ ২.০ শতাংশ, মাদকাসক্তি (ড্রাগ এডিকশন) ০.৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষণ্নতা রোগের বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা রয়েছে। এজন্য ধৈর্য সহকারে মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। এক্ষেত্রে ওষুধ ও সাইকোথেরাপি (ধারণা ও আচরণ পরিবর্তনের চিকিৎসা) দুই-ই প্রয়োজন।

তারা বলছেন, বিষণ্নতা রোগ থেকে বাঁচাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাছের মানুষ, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনরাই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সহায়তা করতে পারেন, সাহস যোগাতে পারেন। কেউ বিষণ্নতায় আক্রান্ত হলে তার সঙ্গে সময় কাটানো, কথাবার্তা বলে বা দৈনন্দিন কাজ করতে উৎসাহ দিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভালো হয়ে যাবেন বলে আশ্বস্ত করতে হবে। সুষম খাদ্য খেতে এবং নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দেওয়া এবং ঠিকমতো চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিতে হবে।

৪ এপ্রিল চ্যানেল আই কার্যালয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের থিম সং-এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিষণ্ণতার মতো মানসিক সমস্যা যেন কোনো মানুষকে গ্রাস করতে না পারে সেজন্য স্বজন ও অভিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে। সবাইকে মনে রাখতে হবে, বিষণ্ণতায় আক্রান্ত হওয়ার কোনো নির্দিষ্ট বয়স নেই। মানসিক অবসাদকে ভুলিয়ে দিতে গান শোনা, বই পড়া এবং শরীর চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ এপ্রিল ২০১৭/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ