ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এখন করোনা, সামনে ডেঙ্গু!

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:২৩, ২৯ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এখন করোনা, সামনে ডেঙ্গু!

দেশ এখন করোনাভাইরাসে স্থবির। ইতোমধ্যে এই মহামারিতে প্রাণ গেছে ৫ জনের। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৪৮ জন। এখনো ভাইরাসটির প্রতিষেধক আবিষ্কার না হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। এদিকে,  করোনা মোকাবিলা করতে না করতে সামনে আসছে এডিশ মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর মৌসুম। করোনা ও ডেঙ্গু নিয়ে উদ্বেগে আছে রাজধানীবাসী। তবে, দেশের স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে।  

স্বাস্থ্য  অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী—ডেঙ্গুতে  গত বছর (২০১৯) ১৭৯ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ১৯৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪৫ এবং মার্চের এই পর্যন্ত ২৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এই তিন মাসে  আক্রান্তের সংখ্যা  ২৬৯ জন। প্রতিমাসে গড়ে ৯০ জন, আর দিনে ৩ জন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।

২০১৯ সালের প্রথম তিন মাসে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৭৩ জন। মাসে গড়ে ২৪ জন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই হিসাবে গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে প্রথম তিন মাসে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ আক্রান্তের হার বেড়েছে।

রাজধানীবাসী বলছেন, এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে মহামারি করোনা যোগ হওয়ায় উদ্বেগও বেশি। এই বিষয়ে মেরাদিয়া এলাকার বাসিন্দা স্বর্ণা বলেন, ‘এখন করোনার ভয়ে আছি, সামনে ডেঙ্গুর মৌসুম। পরিস্থিতি যে কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।’

শনির আখড়া এলাকার বাসিন্দা আহসান সবুজ বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী  যে হারে করোনা-আক্রান্ত হচ্ছে, দেশেও যদি তেমন পরিস্থিতি হয়, তখন পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে? এছাড়া এর মধ্যেই যদি গত বছরের মতো ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেন, তাহলে কী যে করবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।’

মীরপুরের বাসিন্দা মৌলি বলেন, ‘এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর চেয়ে করোনাকে বেশি ভয় পাচ্ছি। ডেঙ্গু তো মশার কামড়ে হয়।  আর ডেঙ্গু হলেও তরল জাতীয় খাবার খেয়ে সারভাইভ করার সুযোগ আছে। কিন্তু করোনা তো ছোঁয়াচে। আক্রান্তের সংস্পর্শে গেলেই হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই রোগের তো এখনপর্যন্ত ওষুধই আবিষ্কার হয়নি।’

ডেঙ্গু মোকাবিলায় অ্যাপস ডেভেলপের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার। তিনি বলেন, ‘অ্যাপসে ডাটা যুক্ত করা বাকি। এই অ্যাপসের মাধ্যমে বুঝতে পারবো—কোথায় কোথায় ডেঙ্গুর লার্ভা বেশি আছে। সেই অনুযায়ী লার্ভা ধ্বংসের কাজ করবো। সিটি করোরেশন ইতোমধ্যে ওয়াশ প্রোগ্রামের কাজ শুরু করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সিটি করোপোরেশ ও ওয়াসার  সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছি। আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও হয়েছে।’

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ডেঙ্গু ও করোনার জন্য আলাদাভাবে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (এমআইএস) ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘করোনা শনাক্তের পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে বিভাগগুলোতে পরীক্ষা চালু হবে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শিশু হাসপাতাল ও আইডিইএসএইচআই নামে একটি বিজ্ঞানভিত্তিক অলাভজনক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান টেস্ট করার জন্য প্রস্তুত আছে। এছাড়া শিগগিরই ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়’, ‘ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল’,  ‘আর্মড ফোর্সেস ইনস্টিটিউট অব প্যাথলজি’ এবং ‘কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের’ ল্যাবরেটরি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘যে সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেবেন, তাদের সুরক্ষার বিষয় সর্বোচ্চ বিবেচনায় রয়েছে। সে উদ্দেশ্যে প্রতিদিন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে পিপিই ও অন্যান্য সামগ্রী সংগ্রহ-সরবরাহ করা হচ্ছে। এসব সামগ্রীর অভাব হবে না।’ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর সরকারের নজরদারি রয়েছে বলেও তিনি জানান।



ঢাকা/সাওন/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়