ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতে কঠোর হচ্ছে সরকার

আরিফ সাওন ও আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৮, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জ্বর-শ্বাসকষ্টসহ সাধারণ রোগের চিকিৎসা নিশ্চিতে কঠোর হচ্ছে সরকার

করোনার ঝুঁকি এড়াতে গিয়ে বেশিরভাগ বেসরকারি ক্লিনিক, হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বার চিকিৎসাসেবা বন্ধ রেখেছে। এতে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সর্দি-কাশি-জ্বর-শ্বাসকষ্টের রোগীরা। তবে, এবার এসব সাধারণ রোগীর চিকিৎসা নিশ্চিতে কঠোর হচ্ছে সরকার। যেসব হাসপাতাল-ক্লিনিক এসব রোগীকে চিকিৎসা দেবে না, সেগুলোর ওপর সরকার নজরদারি করছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে লাইসেন্স বাতিলেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

হাসপাতাল-ক্লিনিক গণহারে বন্ধ থাকার বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন ‘শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষয়াতি হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজ’-এর আইসিউ কনসালটেন্ট ডা. আশরাফ জুয়েল। তিনি বলেন, ‘একদম ছোটখাটো হাসপাতাল ছাড়া ইমার্জেন্সি সার্ভিসগুলো বন্ধ নেই। অর্থাৎ করোনা সম্পর্কিত ছাড়া ইমার্জেন্সি খোলা আছে। আর চেম্বার তো এক ধরনের গ্যাদারিং। আমাদের পরিস্তিতি কিন্তু বিদেশের মতো নয়। এখানে একজন ডাক্তার ৫০ থেকে ৬০ জন রোগী দেখেন।  তাই প্রচুর ভিড়ও হয়। ফলে সোশ্যাল ডিস্টেন্স মেনটেইন হয় না। আমাদের সিনিয়র যারা আছেন, তারা অনেক বয়স্ক। ফলে তারা নিজেদের ও রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে চেম্বার বন্ধ রেখেছেন।’

এই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘ইতালিতে করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার দুইটা কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি হলো ফুটবল ম্যাচ, যেখানে ৮০ হাজার দর্শক ছিল। অন্য কারণ হলো ছোটখাটো সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভিড় করা। বোঝাই যায়, সেখানে কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব না মানায় ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়েছে।’

হাসপাতালে সার্ভিস প্রসঙ্গে আশরাফ জুয়েল বলেন, ‘তারা চিকিৎসা দিতে বাধ্য। হাসপাতালগুলো গেটে তালা লাগিয়ে দিতে পারে না। রোগীও ফিরিয়ে দিতে পারে না। অন্তত সর্দি-কাশির রোগীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করে ইনিশিয়াল ট্রিটমেন্ট দিয়ে বিশেষায়িত হাসপাতলগুলোতে রেফার্ড করতে পারে। কারণ চিকিৎসা দেওয়া তাদের দায়িত্ব।’

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, যেসব ক্লিনিক, হাসপাতাল, প্রাইভেট চেম্বার করোনাভাইরাসের মতো সংকটময় পরিস্থিতিতে চিকিৎসাসেবা দেবে না, ভবিষ্যতে তাদের প্রতি কঠোর হবে অধিদপ্তর। প্রয়োজনে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল করার মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। পাশাপাশি যেসব চিকিৎসক প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখছেন না, তাদের সতর্ক করতেও বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)কে পদক্ষেপ নিতে বলবে সরকার।

সূত্রটি আরও জানায়, যেসব হাসপাতাল ও ক্লিনিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ রেখেছে কিংবা সীমিত করেছে, তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিয়মিত মনিটরিং করে পরবর্তী সময়ে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  অ্যাকশন নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে সরাসরি কিছু বলতে চাননি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। তবে তিনি বলেন, ‘প্রাইভেট হাসপাতাল আমাদের কথা শুনছে, এটা মনে করি না। প্রথমে অনেক বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। সারাবিশ্বের গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভীতিকর অনেক কিছু প্রচারিত হয়েছে। তার অনেক কিছুই সত্য নয়। এসব কারণে সবার ভেতরে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসক-নার্সদের কথা চিন্তা করুন। তাদের কিন্তু পরিবার আছে। পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কিত হয়ে বলে তোমার চাকরি করার দরকার নেই। তারাও তো মানুষ। এই ধরনের পরিস্থিতিতে এমন হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু হয়েছিল। আমার মনে হয় ধীরে ধীরে এগুলো কেটে যাচ্ছে।’

অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, ‘এখন অনেক হাসপাতাল রোগী নিচ্ছে। চিকিৎসকরা প্রাইভেট চেম্বারও করছেন। আমরা বেশ কয়েকজন মেডিক্যাল অফিসার থেকে শুরু করে সহযোগী অধ্যাপকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা কথা দিয়েছেন, এই পরিস্থিতি বদলে দিতে এগিয়ে আসবেন। অন্যদেরও মোটিভেটেড করবেন।  আশা করি এই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে।’

এই প্রসঙ্গে শনিবার (৪ এপ্রিল) রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের ‘ডেডিকেটেড করোনা বেড’পরিদর্শনকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে সাধারণ রোগের চিকিৎসা না পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। মানুষ এখন বিপদে আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই বিপদে তারা  হাসপাতাল-ক্লিনিক যদি চিকিৎসা না করে হাতগুটিয়ে বসে থাকে, তবে পরবর্তী সময়ে সরকারও তাদের লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।’

একই দিন অন্য এক অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অসহায় রোগীকে এক হসপিটাল থেকে অন্য হসপিটালে ঘুরতে হয়েছে। বুঝতে হবে, সর্দি-জ্বর হলেই করোনা রোগী নয়। আবার করোনা রোগী হলেও তার সেবা করা আমাদের দায়িত্ব।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেক ডাক্তার-নার্স করোনা রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। করোনা রোগীদের বিরাট অংশ সুস্থ হয়ে বাড়িও ফিরেছেন।’

তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়ে চিকিৎসা নিতে গেলে যেসব হাসপাতাল রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছে, তাদের বিষয়ে সরকার নজর রাখছে। সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেজন্য আমি বলবো যারা প্রাইভেট ক্লিনিক হাসপাতাল পরিচালনা করেন, তারা আজকের এই দুর্যোগ মুহূর্তে জনগণ থেকে পালিয়ে না বেরিয়ে চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন।’

এটি জনগণের প্রত্যাশা বলেও তিনি মন্তব্য করেন।


ঢাকা/নূর/সাওন/এনই

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়