ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আপনার হার্ট ঠিক আছে তো!

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আপনার হার্ট ঠিক আছে তো!

আপনার হার্ট ঠিক আছে তো! একবার চেক করিয়েই নিন আজ। কারণ, বিশ্ব হার্ট দিবস আজ। বিশ্বজুড়ে হৃদরোগ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ২৯ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।

দিবসটির এ বছরের শ্লোগান হচ্ছে ‘মাই হার্ট ইওর হার্ট’। মূল কথা হলো- হার্টের সুস্থতার জন্য একতাবদ্ধ হওয়া। অর্থাৎ নিজের হার্টের পাশাপাশি আপনজন ও অন্যদের হার্টেরও যত্ন নেওয়া। কারণ, বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি হচ্ছে হৃদরোগ। কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই হৃদরোগ যেকোনো সময় কেড়ে নেয় জীবন।

তবে এবার বিশ্বব্যাপী হার্ট-হিরো বা হৃদয়-বীরদের কমিউনিটি গড়ে তোলার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে। যারা সুস্থ ও কর্মক্ষম রয়েছেন, যাদের হার্টের কোনো সমস্যা নেই এবং যারা নিকটজন ও বিশ্ববাসীর কাছেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হার্ট সুস্থ রাখার বিষয়ে তারাই হবেন এই বিশ্ব কমিউনিটির হার্ট-হিরো। তাই আপনিও হার্ট হিরো হন।

প্রথম বিশ্ব হার্ট দিবসটি পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রবিবার বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তীকালে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। বাংলাদেশও ২০০০ সাল থেকে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।

হার্ট বাঁচার জন্য মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ । সুস্থ, স্বাভাবিক ও আনন্দপূর্ণ জীবনের জন্য দরকার একটি সুস্থ হৃদযন্ত্র। কিন্তু এ যন্ত্রটিকে সুস্থ রাখাটাই একটা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আধুনিক বিশ্বে জীবনযাত্রার নানামুখী পরিবর্তন, কাজের পরিবেশ সব কিছুই যেন প্রতিনিয়ত হৃদযন্ত্রকে প্রতিকূলতার মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। তার পরও হৃদযন্ত্র ভাল রাখতেই হবে। আর তাই সুশৃঙ্খল জীবন যাপনের কোনো বিকল্প নেই।

বর্তমানে হৃদরোগ বিশ্বের এক নম্বর ঘাতক ব্যাধি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় পৌনে ২ কোটি মানুষের মৃত্যু হয় এই রোগে, যা ২০৩০ সাল নাগাদ ২ কোটি ৩০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ৪০ ভাগ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। কিন্তু হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীকে সময়মতো হাসপাতালে স্থানান্তর করতে পারলে আধুনিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সুস্থ করা সম্ভব। কিন্তু পূর্বে হৃদরোগ শনাক্ত করা না গেলে অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসা দেয়ার পূর্বেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই সেন্ট লিউকস হাসপাতালের গবেষণায় বলা হয়েছে, আশাবাদ মানুষের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে ১৪ বছর ধরে পরিচালিত গবেষণা থেকে মাউন্ট সিনাই সেন্ট লিউকস হাসপাতালের অধ্যাপক অ্যালান রোজানস্কি বলেন, আশাবাদী মনের অধিকারী মানুষের কার্ডিওভাস্কোলার রোগ কম হয়ে থাকে। তিনি তার নিবন্ধে বলেন, আশাবাদী মানুষের হার্ট অ্যাটাক বা ব্রেইন স্ট্রোক ৩৫ শতাংশ কম হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে হলিস্টিক হেলথ কেয়ার এর প্রবক্তা অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, ‘হৃদরোগের বিকল্প চিকিৎসার কথাটিও আমাদের স্মরণে রাখতে হবে। এই বিকল্প চিকিৎসাকে হলিস্টিক চিকিৎসা বলা হয় । হলিস্টিক চিকিৎসা হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীনতম প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চর্য সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি দুটি। স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস এবং ব্যায়াম। রোগীর বয়স এবং রোগের ধরন এবং তার বর্তমান অবস্থার ওপরই নির্ভর করে তার প্রতিদিনের খাদ্যগ্রহণ। আর ব্যায়ামের ব্যাপারটি বিবিধ। তার আগে মন নিয়ন্ত্রণের জন্যে চাই সঠিক উপায়ে মেডিটেশন। মানসিক চাপই মানুষের অসুখ ও অশান্তির মূল কারণ। মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

ভারতের গুরগাঁওয়ের কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অনিল বনশাল হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাব্য কিছু লক্ষণের কথা জানিয়েছেন।

হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম কয়েকটি লক্ষণের মধ্যে রয়েছে বুক ভার হয়ে আসা, পেটের ওপরের অংশে অসহনীয় ব্যথা অনুভব করা, বাঁ হাত ব্যথা, চোয়াল ও ঘাড় ব্যথা এবং শ্বাসকষ্ট। এই লক্ষণগুলো টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নিকটস্থ কোনো হাসপাতালে যাওয়া এবং ইসিজি করা প্রয়োজন। প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, হার্ট অ্যাটাকের এসব লক্ষণ দেখা যাওয়ার পরও বিষয়টিকে এড়িয়ে যান অনেকে। কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াটা খুব জরুরি।

আজ বিশ্বের ১৯৪টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করছে। এ উপলক্ষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা, আলোচনাসভা ও ফ্রি মেডিক্যাল চেকআপের আয়োজন করেছে। এরমধ্যে সকাল ৭টায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের উদ্যোগে মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাইকেল শোভাযাত্রা ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের অডিটরিয়ামে সকাল ১০টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ফ্রি হার্ট ক্যাম্প, দুপুর সাড়ে ১২টায় গণমুখী সেমিনার হবে।

 

ঢাকা/ শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়