ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

করোনায় দেশের পরিস্থিতি কী হতে পারে: গবেষণা প্রতিবেদন

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:২৫, ২৩ মে ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনায় দেশের পরিস্থিতি কী হতে পারে: গবেষণা প্রতিবেদন

লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী ১৮ মাসে করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯) আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ মারা যেতে পারে।

ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং পাবলিক হেলথ বিভাগের এসোসিয়েট প্রফেসর বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ড. রাজীব চৌধুরীর নেতৃত্বে কোভিট বিষয়ে ১৬টি দেশের উপর পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশে এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে।

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনুমোদনের পর রাজিব চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন বাংলাদেশী চিকিৎসা বিজ্ঞানির কোভিট স্ট্র্যাটেজি (ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং) গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ এপিডেমিওলজি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, লকডাউন ‍মুক্ত করে দিলে বাংলাদেশে মৃত্যু সংখ্যা ৫ লাখ পর্যন্ত ছাড়িয়ে যেতে পারে।

আন্তর্জাতিক জার্নালে এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় গত ২০ মে। গবেষণার বাংলাদেশ অংশের বিশ্লেষণ সম্পর্কে রাজীব চৌধুরী রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমাদের পেপারে আমরা মডেলিং এর মাধ্যমে তিন ধরণের ভবিষ্যতের ধারণাগত রূপরেখা দেখিয়েছি। বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশের মধ্যে প্রতিটি দেশের জন্য আমরা দেখার চেষ্টা করেছি মহামারী যখন পিক- এ পৌঁঁছাবে তখন প্রতিদিন কতজন নতুন করে আক্রান্ত হবে, প্রতিদিন কতজনের জন্য আইসিইউ বেড লাগবে এবং আগামী ১৮ মাসে সর্বমোট কতজন মারা যেতে পারে।'

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ফলাফলে প্রথম মডেলে যেখানে কোন প্রকার লকডাউন ছাড়া কি ঘটবে সেটি হিসেব করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে আগামী ১৮ মাসে করোনাভাইরাসের জন্য প্রায় ৫ লক্ষ লোক মারা যেতে পারে। এর প্রধান কারণ প্রতিদিন যত লোক আক্রান্ত হবে তাদের চিকিৎসা দেবার মত ক্ষমতা যেমন আইসিইউ বেড আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেই (বাকি ১৫টি দেশের মতই)। তাই দ্বিতীয় মডেলে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি যদি প্রতি ৫০ দিন মিটিগেশন স্ট্রাটেজি নেয়া হয় এবং এরপর ৩০ দিন সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হয়, তাহলে কি অবস্থা হতে পারে।'

রাজীব চৌধুরী বলেন, ‘মিটিগেশন স্ট্রাটেজি- বলতে আমরা বুঝিয়েছি সবাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা, হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার করা– এগুলো মেনে চলবেন। সাথে হয়ত স্কুল-কলেজ বন্ধ রাখা হবে, কিন্তু পুরো দেশ লকডাউন করা হবে না। এই রূপরেখাতেও আমরা দেখেছি যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়বে এবং প্রায় দুই লক্ষের বেশি লোক মারা যাবে। তৃতীয় মডেলে আমরা দেখার চেষ্টা করেছি যদি প্রতি ৫০ দিন লকডাউন করা হয় এবং এরপর ৩০ দিন সবকিছু স্বাভাবিক করে দেয়া হয়, তাহলে কি অবস্থা হতে পারে। এই ক্ষেত্রে দেখা গেছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেক প্রেশারে পড়লেও একেবারে ভেঙ্গে পড়বেনা এবং আগামী ১৮ মাসে পাঁচ হাজারের মত লোক মারা যেতে পারে।'

রাজীব চৌধুরী জানান, যেকোনো গবেষণার মত এই গবেষণায়ও কিছু লিমিটেশন আছে। কিন্তু গত কয়েক মাস ১১টি প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন গবেষক নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছি এই গবেষণা পত্রটির জন্য। নিজেদের মধ্যে অনেক স্কাইপ মিটিং, ইন্টারনাল রিভিও এবং জার্নালের পিয়ার রিভিউয়ারদের কড়া সব পর্যবেক্ষণ পেরিয়ে বুধবার (১৯ মে) গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। তাই এই গবেষণার ফলাফল নির্ভরযোগ্য ।

কোভিট স্ট্র্যাটেজি (ম্যাথমেটিক্যাল মডেলিং) গবেষণা কার্যক্রমে গ্লোবাল রিসার্চ দলে টিম লিডার হিসেবে কাজ করেছেন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. রাজীব চৌধুরী। যুক্ত ছিলেন আইসিডিডিআরবি’র সাবেক ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ড. আব্বাস ভুঁইয়া, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক ড. সাজেদুর রহমান শাওন।

 

চট্টগ্রাম/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়