করোনা সংক্রমণ আরও ২ সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার সম্ভাবনা
মেসবাহ য়াযাদ || রাইজিংবিডি.কম
ফাইল ছবি
দেশজুড়ে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বাড়ছে প্রতিদিন। মাঠপর্যায় থেকে শুরু করে শহর এলাকায়ও স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা বাস্তবায়ন না হওয়ায় সার্বিকভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণ ক্রমেই চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। যার কারণে অন্তত আগামী দুই সপ্তাহ করোনা সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতি থাকবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি অন্তত আরও দুই সপ্তাহ বাড়তে পারে। এরপর এক সপ্তাহ সংক্রমণ অনেকটা সমান্তরাল থাকবে। তারপর থেকে সংক্রমণ নিম্নগামী হবে।
এ প্রসঙ্গে এম আর খান শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. ফরহাদ মনজুর বলেন, ‘করোনা যে হারে বাড়ছে, কমপক্ষে আরও দুই সপ্তাহ সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। এরপর সপ্তাহখানেক সংক্রমণ সমান্তরালভাবে চলবে। তারপর আস্তে আস্তে সংক্রমণ নিম্নগামী হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে মানুষের উচিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সঠিক নিয়ম মেনে মাস্ক পরা। জনসমাগম এড়িয়ে চলা।’
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘লক্ষণ দেখে মনে হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ আরও কিছুদিন বাড়তে পারে। যদিও এবারের সংক্রমণের প্রভাব তেমন ভয়াবহ নয়। তারপরও আমাদের সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। বয়স্করা আক্রান্ত হলে তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হতে পারে। সে কারণে সরকারি- বেসরকারিভাবে সব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকতে হবে।’
এ প্রসঙ্গে মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. মনজুর রহমান গালিব বলেন, ‘টিকা কার্যক্রম যেভাবে চলছে, তার গতি আরও বাড়াতে হবে। সব হাসপাতালে রোগীদের জন্য সেন্ট্রাল অক্সিজেনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে সাধারণ মানুষকে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সর্বপরি মাস্ক পরার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে আরও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।’
ইউনাইটেড হাসপাতালের ডা. ফজলে রাব্বী বলেন, ‘করোনা টেস্টের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এ কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে আরও জনবল নিয়োগ দিতে হবে। মানুষকে মাস্ক পরার ব্যাপারে সচেতন করতে হবে, বাধ্য করতে হবে। বর্তমানে সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশনা তেমন কার্যকর হচ্ছে না। এ ব্যাপারে আরও কঠোর ভূমিকা নিতে হবে।’
সহকারী অধ্যাপক সিয়াম ভূঁইয়া বলেন, ‘বর্তমান সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। মনে রাখতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানা, মাস্ক পরা এসবের দায়িত্ব সরকারের একার নয়। আমাদের নিজেদের এ ব্যাপারে আরও বেশি সতর্ক ও সচেতন হতে হবে।’
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ ড. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ওমিক্রনের কারণে দুয়েক দিনের মধ্যে শনাক্তের আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো গেলে দেখা যাবে, আক্রান্ত ও শনাক্তের হার আরও বেড়েছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বুধবার (২৬ জানুয়ারি) পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজারের বেশি নমুনা পরীক্ষা করার পর ১৫ হাজার ৫২৭ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় করোনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১৭ লাখ ৩১ হাজার ৫২৪ জন। তাদের মধ্যে মারা গেছেন ২৮ হাজার ২৭৩ জন।
ঢাকা/সনি
আরো পড়ুন