ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

৯/১১ হামলার ১৮ বছরে যা শিখেছে বিশ্ব

শাহেদ হোসেন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৩, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৯/১১ হামলার ১৮ বছরে যা শিখেছে বিশ্ব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ১৮ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি স্থাপনায় বেসামরিক বিমান ছিনতাই করে আল-কায়েদার ওই হামলার পর বিশ্বের ওপর সন্ত্রাসবাদের রাজত্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে আসে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে এটাই ছিল বাইরের কোনো বাহিনী বা গোষ্ঠীর প্রথম হামলা।

৯/১১-এর হামলা যুক্তরাষ্ট্রসহ পুরো বিশ্বকে কয়েকটি বিষয় শিক্ষা দিয়েছে। ক্ষমতাধর হলেই যে সেই দেশকে সবাই সমীহ করে চলবে কিংবা সব ধরণের হামলা থেকে নিরাপদ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রের সেই উচ্চকল্পনাকে হামলার মধ্য দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে আল-কায়েদা।

কোনো দেশই দুর্ভেদ্য নয় : আল-কায়েদার দুর্ধর্ষ ও নির্ভুল পরিকল্পনা উন্নত থেকে অনুন্নত সব দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিটি বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী দেশ হলে সন্ত্রাসী হামলার থেকে সুরক্ষিত হবে সেই মিথ ভেঙ্গে দিয়েছে ৯/১১ এর হামলা।

নজরদারিই মূল : সন্ত্রাসবাদসহ যে কোনো অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নজরদারিই মোক্ষম দাওয়াই। এই নজরদারির কাজটি কেবল পুলিশ করলে হবে না, বরং সরকারের সকল নজরদারি বা নিরাপত্তা সংস্থা এর মধ্যে অর্ন্তভূক্ত থাকবে। ৯/১১ হামলার কিছুদিন পর প্রকাশিত একটি ভিডিওতে, পেন্টাগনে হামলায় ব্যবহৃত বিমানটির ছিনতাইকারীদের ওয়াশিংটনের ডালস বিমানবন্দরে দেখা যায়। হামলাকারীদের দুজনের নাম সন্ত্রাসবাদবিরোধী নজরদারি তালিকায় ছিল। আরেকজনের পরিচয় পত্রে কোনো ছবিই ছিল না। এরপরও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা স্রেফ সাধারণ তল্লাশি করে তাদের ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই সুবাদে অবাধে তারা বিমানে উঠতে পেরেছিলেন।

গোয়েন্দা তথ্য এড়ানো উচিৎ নয় : বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির অধিকারী হচ্ছে যুক্তরাস্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সংস্থাটির কাছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে সম্ভাব্য হামলার তথ্য ছিল। হামলার পর তদন্তে দেখা গেছে, হামলার কয়েক মাস আগে তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কন্ডোলিনা রাইস থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল সিআইএ। এমনকি আল-কায়েদাই যে যুক্তরাষ্ট্রে সুনির্দিষ্টভাবে একাধিক হামলা চালাতে যাচ্ছে সেটিও উল্লেখ ছিল প্রতিবেদনে। তবে হোয়াইট হাউজ প্রতিবেদন পাওয়ার পর উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আর এই অবহেলার মাশুল গুনতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজারেরও বেশি মানুষ তথা পুরো বিশ্বকে।

অর্থ যেখানে সন্ত্রাসবাদ সেখানে : প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলায় দেখা গেছে, হামলার সঙ্গে অর্থের যোগসূত্র রয়েছে। ৯/১১ হামলার সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে বিপুল অর্থ লেনদেন হয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বিষয়টির ওপর নজর দেয় নি। হামলার পর তদন্তে দেখা গেছে, যারা হামলার জন্য বিমান ছিনতাই করেছিলেন তাদের কাছে অর্থ পাঠানো হয়েছিল। বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেওয়া হামলাটির মাত্র তিন দিন আগে চার কিস্তিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অর্থ পাঠানো হয়েছিল। আর এ অর্থ পাঠানো হয়েছিল ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। তবে কোম্পানি কিংবা নিরাপত্তা সংস্থাগুলো এই লেনদেনকে সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছিল।

সন্ত্রাসবাদে দারিদ্রতা নয় : গবেষণায় দেখা গেছে, ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোতে সন্ত্রাসবাদের বিকাশ বা উৎপত্তি তুলনামুলকভাবে কম। আর্থিকভাবে দুই প্রান্তের দেশগুলোতেই জনগণকে অর্থের পেছনে ছুটতে হয় বেশি। মধ্যম মানের বা মধ্যআয়ের দেশগুলোতে জনগণের মধ্যে এই প্রবণতা তুলনামুলকভাবে কম। তাই দেখা গেছে, মধ্যম শ্রেণির দেশগুলোতে সন্ত্রাসবাদের বিকাশ হয় বেশি।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়