ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্কের ইতিহাস

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৪, ৯ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাবরি মসজিদ-রাম মন্দির বিতর্কের ইতিহাস

অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ও  রাম মন্দির নিয়ে আইনি লড়াই শুরু হয়েছিল ১৩৪ বছর আগে। এ নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে টানাপড়েনের ইতিহাসটা আরো পুরোনো। নব্বই দশকে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা ধ্বংস করে দেয় মসজিদটি। এই মসজিদ-মন্দির নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ছায়া পড়েছিল বাংলাদেশেও। শেষ পর্যন্ত শনিবার সেই বিরোধের একরকম ইতি টানলো ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকরা জানালেন— হিন্দুদের বিশ্বাসের ‘রামজন্মভূমি’তে মন্দিরই হবে।

গত পাঁচ শতাব্দীতে রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্কের ইতিহাসটা দেখে নেয়া যাক এক ঝলকে-

১৫২৮: অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করান মুঘল সম্রাট বাবরের সেনাপতি মির বাকি।

১৮৮৫ : মুঘল আমল শেষ। ইংরেজ রাজত্ব চলছে। ফৈজাবাদের জেলা আদালতে বাবরি মসজিদের বাইরে শামিয়ানা তৈরি করে রামদেবের মূর্তি স্থাপনের আবেদন করেন মহন্ত রঘুবীর দাস। তবে তার সেই আর্জি খারিজ করে দেয় আদালত।

১৯৪৯ : ভারত স্বাধীন হয়েছে মাত্র দু বছর। বাবরি মসজিদের মূল গম্বুজের নিচে রামদেবের মূর্তি স্থাপন করা হয়। মন্দিরপন্থিদের দাবি, ‘রামদেব প্রকট হয়েছেন’।  হিন্দু-মুসলমান দুপক্ষই দেওয়ানি মামলা করে। সরকার ওই চত্বরকে বিতর্কিত জায়গা বলে ঘোষণা দেয় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়।

১৯৫০ : গোপাল সিমলা ও মহন্ত রামচন্দ্র দাস ফৈজাবাদ আদালতে পৃথক মামলা করে বাবরি মসজিদের স্থানে রামদেবের পূজা করার অনুমতি চাইলেন।

১৯৫৯ : বাবরি মসজিদের জমির মালিকানা দাবি করে মামলা করে নির্মোহী আখড়া।

১৯৮১ : বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হয় উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড।

১৯৮৬ : বিতর্কিত স্থানটির দরজা হিন্দুদের উপাসনার জন্য খুলে দিতে  বলে ফৈজাবাদ আদালত।

১৯৮৯ : বিতর্কিত জমিতে স্থিতি অবস্থা বহাল রাখার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।

১৯৯২ : এই বছরের ৬ ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত একটি দিন। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বিজেপি আর শিবসেনার কর্মীদের হামলায় ধুলিষ্যাৎ হয়ে যায় ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ। এর জের ধরে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে দাঙ্গা বেধে যায়। এই দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়।

১৯৯৩ : ৩ এপ্রিল সংসদে আইন পাশ করিয়ে বিতর্কিত জমির দখল নেয় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।

২০১০ : ৩০ সেপ্টেম্বর অযোধ্যা মামলার রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। তিন বিচারকের বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর ভিত্তি করে দেওয়া রায়ে জানায়, বাবরি মসজিদের স্থান তিন পক্ষের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া উচিৎ। এর  এক-তৃতীয়াংশের নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের, এক-তৃতীয়াংশ হিন্দুদের এবং বাকি অংশ 'নির্মোহী আখড়া' কাছে দেওয়া উচিত। বাবরি মসজিদ যে স্থানে ছিল তার নিয়ন্ত্রণ দেওয়া হয় হিন্দুদের কাছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানায় মুসলমানরা।

২০১১: হিন্দু ও মুসলিম দুই পক্ষই আপিল করলে ৯ মে এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে সুপ্রিম কোর্ট।

২০১৭ : ২১ মার্চ তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আদালতের বাইরে বিষয়টি মিমাংসা করে নেওয়া জন্য হিন্দু-মুসলিম উভয় পক্ষকে প্রস্তাব দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো পক্ষই মিমাংসায় পৌঁছতে পারেনি।

২০১৯ : মিমাংসা ব্যর্থ হওয়ায় ২রা আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট ৬ আগস্ট থেকে মামলার নিয়মিত শুনানির তারিখ ঘোষণা করে। তবে সেপ্টেম্বরে আদালতের পক্ষে আবারও মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এবারও তা ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ৯ নভেম্বর আদালত দীর্ঘদিনের এই বিরোধ নিস্পত্তির রায় দেয়। আদালত রায়ে জানায়, বিতর্কিত জমিতে হিন্দুদের মন্দির তৈরি করা হবে। আর মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণের জন্য আলাদা করে অযোধ্যাতেই পাঁচ একর জমি দিতে হবে।

সূত্র : আনন্দবাজার ও এনডিটিভি অনলাইন


ঢাকা/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়