ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি রাজাপাকসের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৫০, ১৮ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি রাজাপাকসের

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করে সর্বাগ্রে জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন গোটাবায়া রাজাপাকসে।

সোমবার প্রধান বিচারপতি জয়ন্ত জয়সুরিয়া প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রাক্তন এ সামরিক কর্মকর্তাকে শপথবাক্য পাঠ করান।

আল জাজিরা ও ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, অনুরাধাপুরা শহরের একটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরে শপথ নেন রাজাপাকসে। এ সময় নিরপেক্ষ পররাষ্ট্র নীতি অনুসরণের কথাও বলেছেন তিনি।

জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে ৭০ বছরের রাজাপাকসে বলেন, জাতীয় নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করবেন তিনি।

রাজাপাকসে বলেন, ‘আমরা বিশ্বশক্তিগুলোর মধ্যকার সংঘাত থেকে দূরে থাকতে চাই। আমি সব দেশকে আমাদের দেশের একতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান রেখে কাজ করার অনুরোধ করছি।’

ভাষণে তিনি তার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া তামিল সংখ্যালঘু এবং মুসলিমদেরও তাকে সমর্থন জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাজাপাকসে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি জনগোষ্ঠী তার জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে। তারপরও দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসাবে তিনি তামিল এবং মুসলিমদেরও সমর্থন আশা করেন।

এর আগে গত ১৬ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার অষ্টম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ করা হয়। মোট ৩৫ প্রার্থী অংশ নিলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ক্ষমতাসীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সাজিথ প্রেমাদাসা এবং বিরোধী দল শ্রীলঙ্কা পিপলস ফ্রন্টের (এসএলপিপি) গোটাবায়া রাজাপোকসের মধ্যে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা নির্বাচনে অংশ নেননি।

৫২ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হন রাজাপাকসে। এর আগে শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থার সংস্কার করার পরিকল্পনা রয়েছে তার।

সোয়া দুই কোটি জনসংখ্যার এ দেশটির আয়ের অন্যতম উৎস পর্যটন। গৃহযুদ্ধ অবসানের পর সে দেশে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৬ সাল থেকে প্রতিবছর গড়ে ২০ লাখের বেশি দর্শনার্থী দেশটিতে আসছেন। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার বছরে (২০০৯) এ সংখ্যা ছিল মাত্র প্রায় সাড়ে চার লাখ।

তবে ইস্টার সানডেতে বোমা হামলার পর পর্যটকদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কা সরকার রাজস্ব খাতে এ বছর প্রায় ১৫ লাখ ডলার হারাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত চা। দেশটি উৎপাদিত চায়ের ৯০ শতাংশের বেশি রপ্তানি করে থাকে। এ ছাড়া পোশাকশিল্প ও বিদেশে বসবাসরত শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্জিত রেমিট্যান্সও শ্রীলঙ্কার আয়ের অন্যতম উৎস।

বিশ্লেষকদের মতে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বেশ বেগ পেতে হবে নতুন প্রেসিডেন্টকে। ভারত মহাসাগরীয় এ দ্বীপদেশটিতে বহু বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি ও সংখ্যালঘু তামিলদের মধ্যে এই যুদ্ধ চলেছে দেশটির উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে। ২৫ বছর ধরে চলা সেই গৃহযুদ্ধের অবসান হয় ২০০৯ সালে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি এ বছর বেশ বড় একটি ধাক্কা খায় ২১ এপ্রিল ইস্টার সানডেতে ভয়াবহ হামলায়। রাজধানী কলম্বোসহ কয়েকটি শহরের তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে একযোগে হামলায় আড়াই শতাধিক মানুষ নিহত হয়।

তবে এ সবকিছু পেছনে ফেলে লঙ্কানরা একজন নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করেছে। রাজাপাকসে শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই। তামিল গেরিলাদের পরাস্ত করে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ভূমিকা রাখায় ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু ওই যুদ্ধের অবসান হলেও তামিলদের বিরুদ্ধে অভিযানে ৪০ হাজার তামিল নাগরিককে হত্যার অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে তিনি প্রশ্নেরও সম্মুখীন হয়েছেন। এ কারণে সংখ্যালঘুরা তাকে নিয়ে শঙ্কিত। রাজাপাকসেকে এসব কিছু মোকাবেলা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তাই অতীত নিয়ে কথা না বলে ভবিষ্যতের দিকে মনোযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।


ঢাকা/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়