ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

সাগরে অক্সিজেন কমছে, হুমকিতে জলজ প্রাণী

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাগরে অক্সিজেন কমছে, হুমকিতে জলজ প্রাণী

বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন ও দূষণের ফলে সাগরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছে বিপজ্জনকভাবে। এর ফলে হুমকির মুখে পড়েছে অনেক প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী।

আন্তর্জাতিক পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) এক গবেষণা প্রতিবেদনে একথা বলা হয়েছে।

বিবিসি শনিবার আইইউসিএন –এর প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, মহাসাগরের পানিতে নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের মাত্রা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এতে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য।

পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক ওই সংস্থার দীর্ঘ গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মহাসাগরে অক্সিজেনের সংকটকে আরও গুরুতর করে তুলছে। গত কয়েক দশক ধরেই মহাসাগরে পুষ্টির পরিমাণ উল্লেখ্যযোগ্যহারে কমে আসছে। তবে বর্তমানে এ কমে যাওয়ার হার খুবই উদ্বেগজনক।

গবেষকেরা বলছেন, অনেক বছর ধরেই সমুদ্রে অক্সিজেনের মাত্রা কমছে। কিন্তু এখনকার মতো এত খারাপ পরিস্থিতি এর আগে কখনো ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৬০–এর দশকে মহাসাগরের ৪৫টি এলাকায় অক্সিজেনের মাত্রা কম ছিল। কিন্তু বর্তমানে এমন এলাকার সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৭০০–তে দাঁড়িয়েছে। সাগরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকায় টুনা, মার্লিন ও হাঙরসহ বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

গবেষকরা বলছেন, শিল্পকারখানা থেকে প্রচুর পরিমাণ বর্জ্য পদার্থ সমুদ্রে মিশছে। বিশেষত: নাইট্রোজেন এবং ফসফরাস জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ সমুদ্রের পানিতে মিশে দূষণ ঘটাচ্ছে। সমুদ্রের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা হ্রাসের জন্য প্রাথমিকভাবে এসব রাসায়নিক পদার্থ দায়ী। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ হুমকি আরও বেড়েছে।

কার্বনডাই অক্সাইড নিঃসরণের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় গ্রিনহাউসের প্রভাবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমে বাড়ছে। আর এ বাড়তি তাপ শুষে নিচ্ছে সাগর। এতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কেননা পানির তাপমাত্রা যত বাড়ে, অক্সিজেনের মাত্রা তত কমে।

প্রতিবেদেনে বলা হয়েছে, ১৯৬০ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৫০ বছরে বিশ্বব্যাপী সাগরে অক্সিজেনের মাত্রা কমেছে গড়ে দুই শতাংশ। তবে এই কমে যাওয়ার হার বৈশ্বিক গড় নয়। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় কিছু অঞ্চলে তা ৪০ শতাংশ পর্যন্তও কমেছে। আর ২১০০ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী সাগরে অক্সিজেন কমার হার চার শতাংশে পৌঁছতে পারে।

এ বিষয়ে আইইউসিএনের গবেষক মিনা এপস বলেছেন, ‘সাগরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা অনেকেই জানি। কিন্তু এর জন্য দায়ী যে জলবায়ু পরিবর্তন, তা আমরা অনেকেই জানি না। গত ৫০ বছরে সাগরগুলোতে অক্সিজেনের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে কমেছে।’

গবেষকেরা বলেছেন, পানিতে কম অক্সিজেন জেলিফিশের জন্য সুবিধা হলেও টুনার মতো বড় ও দ্রুতগতির প্রজাতির জন্য আশঙ্কাজনক। টুনা, মার্লিন ও কয়েক প্রজাতির হাঙরের বেঁচে থাকার জন্য বেশি মাত্রার অক্সিজেন দরকার। কিন্তু দিন দিন অক্সিজেন কমতে থাকায় অক্সিজেনের সন্ধানে এরা গভীর সাগর থেকে উপরিভাগে উঠে আসছে। যে কারণে এসব প্রজাতির প্রাণী বা মাছ ধরাও পড়ছে বেশি হারে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বিশ্বনেতাদের হস্তক্ষেপের কথা বলো হয়েছে প্রতিবেদনে। এ প্রসঙ্গে গবেষক ড্যান লাফোলি বলেছেন, ‘এ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে আমাদের অবশ্যই গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানা থেকে দূষণের হারও কমাতে হবে।’

লাফোলি এবার জাতিসংঘ জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৫) এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।


ঢাকা/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়