ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আসছে অলিম্পিক, শঙ্কায় জাপানের গৃহহীনরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩০, ২৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আসছে অলিম্পিক, শঙ্কায় জাপানের গৃহহীনরা

বিশ্বের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি জাপান। ২০২০ সালের জুলাইয়ে এই জাপানেই বসছে অলিম্পিকের আসর। নিঃসন্দেহে বিষয়টি জাপানবাসীর জন‌্য আনন্দের। তবে এই আনন্দ দেশটির গৃহহীনদের জন‌্য শঙ্কা ডেকে এনেছে।

যারা রেল স্টেশন, বিপনীবিতানের মেঝেতে রাত্রিযাপন করেন; পার্কে তাবু গেড়ে এবং সরকারি জমিতে বস্তি গড়ে থাকছেন তারাই এমন উদ্বেগের মধ‌্যে পড়েছেন বলে জানাচ্ছে সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েট প্রেস (এপি) ।

এপি জানায়, আন্তর্জাতিক এই আসর উপলক্ষ‌্যে বিদেশি অতিথিদের নজরে পড়বে রাজধানীর এমন জায়গা থেকে অভাবী মানুষদেরকে সরে যেতে বলে দিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলো।

টোকিও নগরের কর্মকর্তারা যদিও অলিম্পিককে সামনে রেখে গৃহহীনদের জোর করে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। বরং তারা বলেছে, দরিদ্রদের কল‌্যাণের স্বার্থেই তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, এসব গৃহহীন মানুষের জন‌্য কাজের ব‌্যবস্থা ও গৃহায়ণের ব‌্যবস্থার চেষ্টা করছে।

মেসানোরি নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘তাদের আইন আছে, তা দিয়ে অলিম্পিক আয়োজনের জন‌্য যা করার তা করছে। বস্তিগুলোও উচ্ছেদ করছে। আবার শুনছি, রেলস্টেশন বা পার্কে শুতে দেবে না। আমরা জানি না ঠিক কোথায় যাব, কোথায় ঘুমাব।’

রেলস্টেশনে এক নারী বেশ কয়েকটি বোচকা নিয়ে বসে আছেন। তার সামনের পাত্রে কয়েকটা কয়েন। সব মিলিয়েও এক ডলারের বেশি হবে না।

তিনি বলেন, ‘মন চাইলে কেউ কেউ সাহায‌্য করে। মন না চাইলে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আসলে আমরা একে অপরকে সহায়তা করব, এমনটাই হওয়া উচিত।’

জাপানের বেকারত্ব বৃদ্ধি আর বেশিরভাগ মানুষের অন‌্যের কাছ থেকে সাহায‌্য না নেওয়ার সংস্কৃতির কারণেও গৃহহীন হওয়ার অন‌্যতম কারণ বলে মনে করা হয়। এজন‌্য কাজ না থাকলেও সাহায‌্য সংস্থার কাছে যান না বেশিরভাগ বেকার। কাজ না থাকলে ঋণ পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে।

দেশটিতে আকাশচুম্বী বাসা ভাড়া। একারণে ব‌্যাচেলরদের অনেকেই এবং হঠাৎ কেউ বেকার হয়ে গেলে রেলস্টেশন বা পার্কে থাকেন। বেকারদের মধ‌্যে কারো সংসার থাকলে তারা সরকারি জমি বা নদীর তীরে বস্তি বানিয়ে থাকতে শুরু করেন।

নগর কর্মকর্তা এমি ইয়াজিনুমা বলেন, ‘গৃহহীনদের সহায়তা করতে এই কর্মসূচি নেয়া হয়েছে, তার বাইরে কিছুই করা হচ্ছে না। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি, আমরা যাই করছি, তা তাদের বুঝিয়ে-শুনিয়েই করছি।’

কয়েক বছর আগে অলিম্পিক আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হওয়ার পর টোকিওর শিবুইয়া পার্কে তাবুর নিচে বসবাসরত গৃহহীনদের উন্নয়ন কাজের জন‌্য জোর করে সরিয়ে দেয়া হয়। অপেক্ষাকৃত আড়াল হয় এমন একটি পার্কে বিনামূল‌্যে দরিদ্রদের খাবার দেয়ার কর্মসূচিও সরিয়ে নেয়া হয়। ২০১৬ সালে টোকিওতে নিউ ন‌্যাশনাল স্টেডিয়াম নির্মাণের সময় অনেক গৃহহীনকে উচ্ছেদ করা হয়।

২০১৭ সালে প্রকাশিত জাপানের সরকারি তথ‌্য অনুযায়ী দেশটির প্রায় ১৬ শতাংশ নাগরিক দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে- যাদের বছরে আয় ১১ হাজার ডলারের কম।

এন্টি প্রোভারটি নেটওয়ার্ক নামে একটি সংস্থায় কাজ করে ডায়াসাকো সেটো। তিনি বলেন, ‘জাপানে কেউ একবার দারিদ্রতায় পড়লে সে মানসিক সমস‌্যায় পড়ে যায়। আবার স্বচ্ছল জীবনে ফিরতে হলে তাদের প্রশিক্ষণ দরকার। যাতে তারা ভালো উপার্জনের চাকরি পায়। খুব কমই লোকই আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। হঠাৎ দরিদ্র হয়ে যাওয়া এসব মানুষের ক্ষমতায়নে সহায়তা করতে ব‌্যবস্থা থাকতে হবে।’


ঢাকা/সাজেদ/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়