ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ইতালি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না ইউরোপ-আমেরিকা

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:১৭, ২৪ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ইতালি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না ইউরোপ-আমেরিকা

পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে মহামারি করোনা ভাইরাস। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে এই ভাইরাসে। শত শত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। দিন দিন আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। কিন্তু গেল রোববার ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশের চিত্র দেখলে বোঝার উপায় নেই পৃথিবীতে মহামারি করোনা ভাইরাস বলে কিছু আছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের দর্শনীয় ও জনপ্রিয় স্থানগুলোতে ছুটির দিনে ছিল চোখে পড়ার মতো ভীড়। যদিও দেশ দুটিতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। কোথাও কোথাও লকডাউন করা হয়েছে। তারপরও থামছে না তাদের বাইরে বেড়ানো।

লন্ডনের প্রিমরোজ হিল, নিউইয়র্ক পার্ক কিংবা ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যস্ত বিচে যথারীতি মানুষের ভীড়। পৃথিবী যখন করোনাভাইরাসে কাতরাচ্ছে, সেটা জেনেও তারা আমোদ-প্রমোদ করছে।

তাদের এই উদাসীনতা, তাদের এই উগ্রতা, নিয়ম অমান্য করার দুঃসাহস ইতালির পরিণতির দিকে ঢেলে দিচ্ছে। তাদের এমন আচরণ চলতে থাকলে পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে সেটা ইতালির দিকে তাকালেই বোঝা যাবে।

ইতালিতে যখন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লো কর্তৃপক্ষ আক্রান্তদের রেড জোনে রাখতে শুরু করলো। অন্যান্যদের জনসমাগম এড়িয়ে চলতে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হল। কে শোনে কার কথা। দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল করোনাভাইরাস। উপায়ন্তর না দেখে ৯ মার্চ ইতালি লকডাউন করা হল। তারপরও তাদের ঘরে রাখা যায়নি। যারা বাইরে বের হল তাদের জেল-জরিমানা করতে শুরু করলো। লাখ লাখ ইতালিয়ানকে জরিমানা করেও থামানো গেল না। শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সাহায্য নিতে হল। ফল? সপ্তাহান্তে দুইদিনেই ১৪০০ জনের মৃত্যু হল। মৃত্যুর মিছিল ছাড়িয়ে গেল চীনকেও!

গেল সপ্তাহে চীনের রেড ক্রসের একজন কর্মকর্তা বলেছিলেন ইউরোপের শক্ত-সামর্থ দেশগুলো তাদের জনগণকে রুখতে শক্ত-সামর্থ হতে পারেনি। ইউরোপের অনেক দেশ ও তাদের জনগণ ইতালি থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না। যেমন যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশ সময় সোমবার দিবাগত রাতে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন লকডাউন করতে বাধ্য হয়েছেন। নিয়মগুলো মানতে জোর দিয়েছেন। না মানলে পুলিশ দিয়ে বাধ্য করা হবে বলে হুশিয়ারি দিয়েছেন।

যারা করোনাভাইরাস রুখতে স্বাস্থবিধি মানছে না, সরকারের বেঁধে দেওয়া নিয়ম মানছে না তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ সচিব খুবই স্বার্থপর, উগ্র, স্থুলচর্মের বলে উল্লেখ করেছেন।

কেন মানছে না ইউরোপ-আমেরিকার মানুষজন? এ বিষয়ে আচরণ বিজ্ঞানের প্রফেসর নিক চাটার বলেছেন, ‘আসলে যখন মানুষকে ভদ্রভাবে কোনো কিছু মানতে বলা হয়, আমি মনে করি না তারা বিষয়টি খুব একটা গায়ে লাগায়। তাদের কাছে মনে হয় এটার দরকার নেই। সুতরাং আমি আমার মতো চলি। তারা প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে যে বার্তাগুলো পাচ্ছে তার সবগুলোকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না। এগুলো আসলে আমরা এভাবে বলি না যে লাল লাইট দেখলে তোমাকে থামতেই হবে। তোমাকে রাস্তার এক পাশ ধরে গাড়ী চালাতে হবে। তোমাকে করতেই হবে। যদি না করো তাহলে তুমি আইন অমান্য করছো।’

চীনে যতো দ্রুত লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোর সরকার ততো দ্রুত নিচ্ছে না। তারা সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছে।

জার্মানি লকডাউন করার পাশাপাশি দেশব্যাপী দুইজনের বেশি মানুষ একত্রিত হওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। জাস্টিন ট্রুডো ‘অনেক হয়েছে, এবার ঘরে ফিরুন’ বলে হুশিয়ারি দিয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর বাইরে ঘুরে বেড়ানো তরুণদের ‘স্বার্থপর’ না হওয়ার আহব্বান জানিয়েছেন। স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নিকোলা স্টুরজেওন জনগণকে বলেছেন, ‘সঠিক কাজটি করুন’। কিন্তু চাটার মনে করছেন এগুলো যথেষ্ট নয়।

‘এক্ষেত্রে যোগাযোগে বড় একটা ব্যর্থতা রয়েছে। আমরা দেখেছি চীন কী করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া কী করছে সেটা আমরা দেখতে পারি। আমরা দেখতে পারি ঠিক কোন কৌশলগুলো কাজে দিচ্ছে। এটা আসলে থিওরিটিক্যাল বিষয় নয়। চীন যেটা করেছে তারা হেভি লকডাউন করেছিল। যতোটা না প্রয়োজন ছিল তার চেয়েও বেশি লকডাউন করেছিল।’

বৃহস্পতিবার থেকে দেখা গেল চীনে আর কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে না।সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাটা সবচেয়ে বেশি কাজে দেয় এক্ষেত্রে। যেটা মেনে হংকং সংক্রমণ ঠেকিয়ে রেখেছে। যারা দেশে ঢুকছে তাদের হাতে ইলেকট্রিক রিস্ট ব্যান্ড পড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। মনিটরিং করা হচ্ছে যে সে কোয়ারেন্টাইন ভঙ্গ করছে কিনা।

সুতরাং ইউরোপ ও আমেরিকার দেশগুলোর খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগেই কঠোর হওয়া উচিত। নিয়মগুলো বাধ্যতামূলক করা উচিত।

 

ঢাকা/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়