তারা ইতালির যোদ্ধা
তাদের চোখগুলো ক্লান্ত। টানা মাস্ক পরতে পরতে তাদের চেহারায় দাগ পড়ে গেছে। কত দিন তারা হাসেন না তাও হয়তো ভুলে গেছেন। তারা ইতালির হাজার হাজার করোনা রোগীর চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন নিরলসভাবে। সারাক্ষণ মুখে মাস্ক, মাথায় সুরক্ষা নেটটুপি আর হাতে গ্লাভস পরা পর্দার পেছনের নায়করা মৃত্যুকূপ থেকে ফিরিয়ে আনা হাজার হাজার মানুষের কাছে অপরিচিতই থেকে যাচ্ছেন।
বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) শুক্রবার লোম্বার্ডি প্রশাসনিক অঞ্চলের বারগামো ও ব্রেসসিয়া শহরের হাসপাতালের ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার সময় এই চিকিৎসক ও নার্সদের ছবি তোলে। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে এই চিকিৎসক ও নার্সরা ছবি তুলতে দূরে যাননি বরং তাদের ওয়ার্ডের পেছনে সবুজ রঙের সার্জিক্যাল পর্দার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন।
ইতালিতে এ পর্যন্ত ৯২ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন ১০ হাজার ২৩ জন। এদের মধ্যে ৫০ জন চিকিৎসক। করোনা আক্রান্ত সন্দেহে সাত হাজারের বেশি চিকিৎসকে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক চিকিৎসকের অনুপুস্থিতি ব্যাপক চাপ ফেলেছে অন্য চিকিৎসদের ওপর।
চিকিৎসক ও নার্সরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে কাজের সময় টয়লেটে যেন যেতে না হয় সেজন্য কখনও কখনও তারা ৮,১০ এমনকি ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত এক ফোঁটা পানি পান করেন না। তারা যে সুরক্ষা পোশাক পরা থাকেন তা খোলার সময়ও তাদেরকে কঠিন প্রটোকল মানতে হয়। কারণ একটু হেরফের হলেই প্রাণঘাতি করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন তারাও।
ইতালির এই নায়কদের কেবল চিকিৎসা দিয়েই দায়িত্ব শেষ হয় না, তাদেরকে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সামনে সন্তান, ভাই কিংবা বোনের ভূমিকায়ও নামতে হয়। কারণ স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রোগীরা তাদের স্বজনদের কোনো না কোনোভাবে পাশে পেলেও করোনা আক্রান্তদের বেলায় পরিস্থিতি ভিন্ন। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াইরত এই রোগীদের পাশে স্রেফ সুরক্ষা পোশাক পরা চিকিৎসাকর্মী ছাড়া অন্য কারো যাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।
ব্রেসসিয়ার সিভিক হাসপাতালের আইসিউ প্রধান ডা.গ্যাব্রিয়েল তোমাসোনি বলেন, ‘এই রোগীরা বাতাসের জন্য লড়াই করছে। আমরা জানি এরা বয়স্ক রোগী। তাদের নিবিড়তা প্রয়োজন, মায়ার প্রয়োজন।’
ঢাকা/শাহেদ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন