ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘আমার আর বাচ্চার জীবন রক্ষার লড়াই একসাথে চলছিল’

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ৪ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আমার আর বাচ্চার জীবন রক্ষার লড়াই একসাথে চলছিল’

কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হওয়ার আগে স্বামীর সাথে ক্যারেন ম্যানারিং

যুক্তরাজ্যে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলছে।  কিন্তু তারপরও সংক্রমিত মানুষের মধ্যে অনেকেই সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই উপসর্গ তেমন গুরুতর ছিল না।  কারও কারও দেহে কোনও উপসর্গই দেখা যায়নি। কিন্তু অনেকের দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।  এদেরই একজন ক্যারেন ম্যানারিং।  বিবিসি বাংলায় প্রকাশিত ক্যারেনের করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ফেরার গল্প রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

ক্যারেন ম্যানারিং। থাকেন ইংল্যান্ডের কেন্ট-এ।  তিনি যখন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন তখন তিনি ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।  তিনি তার চতুর্থ সন্তানের জন্মদানের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন।

মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের দিকে তার জ্বর এবং প্রচণ্ড কাশি শুরু হয়। কিন্তু ডাক্তাররা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে চায়নি।  এই অবস্থা নিয়ে ১১ দিন পার হওয়ার পর তার অবস্থার অবনতি ঘটে।

‘আমি ফোনে ৯৯৯ ডায়াল করি।  আমার শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে ফোন করার কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স এসে হাজির হয়,’।  ক্যারেন বলছিলেন, ‘শ্বাস নেওয়ার জন্য আমাকে রীতিমত লড়াই করতে হচ্ছিল।  তারা আমাকে সাথে সাথে অক্সিজেন দিতে শুরু করে।’

ক্যারেনের দেহে পরীক্ষার পর করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।  তার দুটি ফুসফুসেই নিউমোনিয়া ধরা পড়ে।  হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে তাকে এক সপ্তাহ ভর্তি থাকতে হয়।

সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘কাউকে আমার কাছে আসতে দেওয়া হতো না। সেটা ছিল আমার জন্য একেবারেই দুঃসময়।  খুবই নিঃসঙ্গ ছিলাম।’

‘দুই-তিন দিন আমি একেবারে বিছানায় পড়ে ছিলাম।  টয়লেটে যাওয়ার শক্তি ছিল না। হাসপাতালের বিছানার চাদর বদলাতে হলে আগে আমাকে উল্টে দিতে হতো।’

‘যখন আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হতো তখন আমি বেল টিপে নার্সদের ডাকতাম।  কিন্তু তারা সাথে সাথে আমার কাছে আসতে পারতো না।  তাদের আগে নিরাপদ পোশাক পরতে হতো এবং শুধুমাত্র তারপরই তারা আমার কাছে আসতে পারতো।’

‘তবে আমি সারাক্ষণ আমার পরিবারের সাথে ফোনে কথা বলতাম।  তারাই আমাকে সাহস যোগাতো। আমার ভয় হতো যে আমি বোধহয় আর বাঁচবো না।  আমার পরিবারও আমার জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছিল।’

‘প্রতিবার নিঃশ্বাস নেওয়ার সময় আমাকে খুব কষ্ট করতে হতো।  আমি আমার নিজের জীবন এবং  আমার বাচ্চার জীবনের জন্য লড়ে যাচ্ছিলাম।’

ক্যারেন জানান, যেদিন তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন সেদিনের স্মৃতি তার এখনও মনে আছে। হাসপাতালের দরোজার বাইরে পা রাখা মাত্রই ঠান্ডা তাজা বাতাস তার মুখে পরশ বুলিয়ে দিয়েছিল।

‘বাড়ি ফেরার সময় আমার মুখ মাস্ক-ঢাকা ছিল।  কিন্তু গাড়ির জানালা সেদিন আমি খুলে রেখেছিলাম। বাতাসের স্পর্শ খুব ভালো লাগছিল।  ‌জীবনের তুচ্ছ বিষয়গুলোকেও অনেক মূল্যবান বলে মনে হচ্ছিল।’


/সাইফ/

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়