হিরোশিমা দিবসে ঐক্যবদ্ধ থাকার ডাক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম
মানব ইতিহাসের একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়ের সৃষ্টি হয়েছিল ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। ওই দিন সকালে সূর্যোদয়ের কিছু সময় পরই হঠাৎ তীব্র ও চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল আলোতে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো। ঘড়ির কাঁটায় সময় তখন সকাল ৮টা ১৫ মিনিট। কিন্তু আকস্মিক তীব্র আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর নিস্তব্ধতা নেমে এলো ছোট্ট শহরের কেন্দ্রস্থলে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্তিম লগ্নে মার্কিন বাহিনী জাপানের হিরোশিমায় ফেলে আণবিক বোমা। কোনও যুদ্ধে প্রথম পরমাণু বোমা বিস্ফোরণে প্রাণ হারায় প্রায় দেড় লাখ মানুষ। ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতায় হতাহতদের স্মরণে বৃহস্পতিবার (৬ আগস্ট) পালিত হলো হিরোশিমা দিবস।
এবারের হিরোশিমা দিবস পালনে সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষের উপস্থিতি হওয়ার কথা ছিল হিরোশিমা শান্তি স্মৃতিসৌধ পিচ মেমোরিয়াল পার্কে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সব পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। ওই হিসাবের মাত্র এক শতাংশ লোক এই গাম্ভীর্যপূর্ণ উদযাপনে অংশ নিতে পেরেছেন। ওই বোমা হামলায় বেঁচে যাওয়া ও তাদের পরিবার এসেছিলেন।
৭৫তম হিরোশিমা দিবসে শহরটির মেয়র আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মানবতার জন্য গুরুতর হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিয়েছেন, তা পরমাণু অস্ত্রই হোক আর করোনাভাইরাসের মতো মহামারি। জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীর মনোভাব থেকে সরে আসার আহ্বান জানান মেয়র কাজুমি মাতসুই।
সব মতপার্থক্য দূরে সরিয়ে দেশগুলোকে মনুষ্যসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে লড়াই করা উচিত বলে জানালেন মাতসুই। গ্রাউন্ড জিরোর পিচ মেমোরিয়াল পার্কে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছেন, ‘আত্মকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদকে প্রত্যাখ্যান করে সব হুমকির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে সভ্য সমাজকে।’
৭৫ বছর আগে যেই সময় বোমা হামলা হয়েছিল ঠিক সেই সোয়া ৮টায় কয়েক মুহূর্তের জন্য নীরবতা পালন করেন উপস্থিত অতিথিরা। মাতসুই তার বক্তব্যে বলেছেন, এই বিষাদময় অতীত যেন আর না ফিরে আসে সেজন্য একসঙ্গে কাজ করে গেছে হিরোশিমার বাসিন্দারা। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের ডাক দিয়ে শহরটির মেয়র বলেছেন, ‘হিরোশিমা মনে করে, পরমাণু অস্ত্র বিলোপ ও বিশ্ব শান্তি স্থায়ী করতে সারা পৃথিবীর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে একটি সভ্য সমাজ গড়া আমাদের দায়িত্ব।’
পরমাণু নিরস্ত্রীকরণে বিভিন্ন দেশের মধ্যে যে মতপার্থক্য ও নিরাপত্তা শঙ্কা কাজ করে তা দূর করতে হবে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। জাপানের সরকার প্রধান তার বক্তব্যে বলেন, ‘পারস্পরিক সংশ্লিষ্টতা ও আলোচনার মাধ্যমে অবিশ্বাস দূর করতে প্রত্যেক দেশকে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’
হিরোশিমা দিবসে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ভিডিও বার্তায় বলেছেন, ‘পরমাণু ঝুঁকি একেবারে দূর করতে হলে সম্পূর্ণভাবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ করতে হবে।’
সামাজিক দূরত্ব মেনে এবার পালিত হয়েছে হিরোশিমা দিবস। মাত্র ৮৮০ জনের জন্য আসন রাখা হয়েছে। তাতে যোগ দিয়েছিলেন ৮০টি দেশ ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের প্রতিনিধিরাও।
৭৫ বছর আগের এই দিনে মার্কিন বোমারু বিমান থেকে হিরোশিমায় ফেলা হয়েছিল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ আণবিক বোমা ‘লিটল বয়’। যার প্রভাবে বছর শেষে মৃত্যু দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার। তিনদিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে ‘ফ্যাটম্যান’ নামে আরেকটি পারমাণবিক বোমা ফেলে আমেরিকা। তার ছয়দিন পরই জাপানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে শেষ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
ঢাকা/ফাহিম
আরো পড়ুন